বরিশাল অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির বিরুদ্ধে রোগী নিয়ে ফেরার পথে চাঁদাবাজির অভিযোগ করেছে বরগুনা অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতি।
অ্যাম্বুলেন্স মালিক ও চালকরা বলছেন, চাঁদা না দিলে অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর ও আটক করা হয়। রোগীদেরও হেনস্তা করা হয়।
বরিশালের অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির দাবি, তারা চাঁদাবাজি নয়, সাংগঠনিক নিয়ম অনুযায়ী জরিমানা করা হয়।
বরগুনা জেলা সমিতির দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এই জেলার প্রায় ৭০টি অ্যাম্বুলেন্স রোগী নিয়ে নিয়মিত বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যাতায়াত করে। বরগুনা জেলা প্রশাসন বরিশাল মেডিক্যালে যাওয়ার সময় ৩ হাজার ২ শ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে।
চালক সজিব মিয়া জানান, গত ১৭ মে তিনি মরদেহ নিয়ে বরিশাল থেকে ফিরছিলেন। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বরিশাল অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির লোকজন তার কাছ থেকে দেড় হাজার টাকা চাঁদা নেয়।
সজিব বলেন, ‘প্রতিদিনই দপদবিয়া সেতুর পাশের টোলপ্লাজা এলাকায় বরগুনার অ্যাম্বুলেন্স আটকে চাঁদাবাজি করা হয়। স্থানীয় কাউন্সিলর মজিবুর রহমানের নাম ভাঙিয়ে বরিশাল অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির সভাপতি ফিরোজ আলম, সাধারণ সম্পাদক সজিব মিয়া ও তাদের লোকজন মিলে চাঁদাবাজির সিন্ডিকেট তৈরি করেছে।
‘কেউ চাঁদা দিতে কেউ রাজি না হলে গালাগাল, মারধর এবং অ্যাম্বুলেন্স ভাংচুরসহ গাড়ি বরিশাল মেডিক্যালে আটকে রাখে তারা।’
এক রোগীর স্বজন ইসমাইল বিহারী বলেন, ‘আমার একজন আত্মীয়কে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে বরিশাল থেকে বরগুনায় ফিরছিলাম। বরিশাল সেতুর পর আমাদের আটকে দেয়া হয়। তারা চালককে গালিগালাজ করে মোবাইল ও গাড়ির চাবি কেড়ে নিয়ে চাঁদা চায়।
‘তিন হাজার টাকা দিয়ে তারপর আমাদের আসতে হয়েছে। তাদের ঝামেলার কারণে আমাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এই ভোগান্তি থেকে আমরা মুক্তি চাই।’
এ বিষয়ে বরগুনা অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার লিটন মৃধা বলেন, ‘বরগুনার অ্যাম্বুলেন্স বরিশাল মেডিক্যালের সামনে থেকে রোগী নিতে পারে না। বরিশাল অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতি বিভিন্ন ভয়-ভীতি দেখিয়ে জরিমানার নামে চাঁদা আদায় করে। বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগীরা ফেসবুকে লেখালিখি করলে তাদের মালিক সমিতির সভাপতি আমাকে ফোন করে গালাগাল করে ও হুমকি দেয়।
‘আমাকে উকিল নোটিশও পাঠিয়েছে। আমার কাছে ওই গালাগালির ফোন রেকর্ড আছে। আমরা রোগীদের সেবা দেই কিন্তু এমন চাঁদাবাজি থেকে রেহাই না পেলে কীভাবে কাজ করব? বরগুনার অ্যাম্বুলেন্স মালিকরা এ থেকে পরিত্রাণ চায়।’
বিষয়টি চাঁদাবাজি নয় বলে দাবি করেন বরিশাল অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির সভাপতি ফিরোজ আলম।
তিনি জানান, তাদের সংগঠনটি বিভাগের সব অ্যাম্বুলেন্স মালিকদের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে। সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সব কার্যক্রম চলছে। তবে বরগুনা জেলার কিছু প্রভাবশালী গঠনতন্ত্রের বাইরে গিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তাই সংগঠনের নিয়ম অনুযায়ী জরিমানা করা হয়েছে।
ফিরোজ বলেন, ‘বরিশাল বিভাগজুড়ে আমাদের একটি নিয়ম আছে। যেমন, বরিশাল থেকে যদি কোনো অ্যাম্বুলেন্স রোগী নিয়ে বিভাগের অন্য জেলায় যায় তাহলে ফেরার পথে খালি গাড়ি নিয়ে ফিরতে হবে। নাহলে জরিমানা করা হবে। ঠিক একইভাবে যদি বিভাগের অন্য জেলা থেকে বরিশালে কেউ রোগী আনে তাহলে খালি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ফিরতে হবে।
‘বরগুনা জেলার অ্যাম্বুলেন্স চালক ও মালিকরা এই বিষয়টি মানছে না। তারা বরিশাল থেকে রোগী নিয়ে বরগুনায় ফিরছে। এ কারণে তাদের সাংগঠনিক নিয়ম অনুযায়ী জরিমানা করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করলে আমরা বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।’