চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে রংপুরে। এই সময়ে ভারী বৃষ্টি ছাড়াও ভারত থেকে পাহাড়ি ঢল আসার আশঙ্কা রয়েছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে এই সংবাদ প্রকাশের পর রংপুরের তিস্তাপারের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
বন্যা মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি নেয়া আছে বলে জানিয়েছে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র।
বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে মঙ্গলবার জানানো হয়েছে, জুনের প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহে রংপুরে ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে পাহাড়ি ঢল এবং বৃষ্টির কারণে এই অঞ্চলের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাবে। ফলে নিচু এলাকায় বন্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি বেড়িবাঁধ ভেঙে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হতে পারে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ভারী বৃষ্টি ও বন্যা হলে রংপুর অঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ফলে কিছু স্থানে বন্যা হয়। বিশেষ করে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার আলমবিদিতর, লক্ষ্মীটারি, কোলকোন্দ, নোহালী ও গজঘণ্টার নিম্নাঞ্চল, চরইশরকুল, ইছলি, পূর্ব ইছলি, পশ্চিম ইছলি ও শংকর, বাগেরহাট, কেল্লারহাট ও বিনবিনায় পানি ঢুকে পড়ে। দেখা দেয় নদীভাঙন। ভেঙে যায় গ্রামীণ সড়ক, ক্ষতির মুখে পড়েন কৃষি এবং কৃষক।
লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের চরইশরকুল গ্রামের কৃষক আব্দুল হালিম বলেন, ‘কাল থাকি শুনতেছি বন্যা হইবে। বন্যা মানে হামারগুলের কপাল খারাপ। কেবল ভুট্টা তুননো (তুললাম) ঘরোত তুলছি। বেচাই নাই। বন্যা হইলো তো আর বেচপার পামো না। কাল হাটাতে নিয়ে যামো।’
বিনবিনা চরের আব্দুর রহমান বলেন, ‘বন্যা হইলে যে ঘরবাড়ি আছি এবার সব ভাঙি যাইবে। নৌকা বানা লাগবে। চৈলপৈল নিয়ে কোটে যামো। তোমরা সরকারোক কন হামারগুলের জন্য যেন খাবার দেয়। গরু, ছাগলগুলে থোয়ার (রাখার) জন্য স্কুল (আশ্রয়কেন্দ্র) দেয়। নাইলে কোটে থোমো গরু-ছাগল।’
কোলকোন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ বলেন, বন্যার হবার আগেই কিছু ট্রলার, নৌকা, শুকনো খাবার এবং পানি বিশুদ্ধকরণ ওষুধ প্রস্তুত রাখা দরকার। আমরা সেটা এখনও করতে পারিনি। আমাকে কেউ এ বিষয়ে কিছু জানায়নি।
‘আমার ইউনিয়নের ১ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ড খুব ঝুঁকিতে। পানি ওঠার সঙ্গে সঙ্গে শতভাগ ভাঙন শুরু হয়। আর ৩ নম্বর ওয়ার্ডে পানি ওঠে কিন্তু ভাঙন কম হয়। এই অবস্থায় দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘আমার ও আমার ইউনিয়নের বিনবিনার চরের বাসিন্দার টেনশন হচ্ছে বিনবিনার বাঁধটা নিয়ে যদি পানির তোড়ে ভেঙে যায় তাহলে সর্বনাশ হবে।’
গঙ্গাচড়ার লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বন্যা হতে পারে, এমন একটা নির্দেশনা আমরা ফেসবুকে পাই। সেটা কতটুকু সত্য জানি না। এখনও জেলা প্রশাসন থেকে কিছু জানানো হয়নি।
‘ওই নির্দেশনা এখন সবার ফেসবুক ওয়ালে ওয়ালে। এটা প্রচার হওয়ার পর তিস্তাপারের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে গত বছরের মতো বন্যা হলে রংপুর-লালমনিরহাট সংযোগ সড়ক বিচ্ছিন্ন হতে পারে। স্থানীয় পর্যায়ে যেগুলো বাঁধ দেয়া হয়েছে, সেগুলো দ্রুত মেরামত প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘আমার লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের ছয়টি ওয়ার্ডের প্রায় ২০ হাজার মানুষ রয়েছেন। বন্যা হলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তারা এখনই আমার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে দিয়েছেন। কী করবেন, কী করবেন না, এমন অবস্থা হয়ে পড়েছে তাদের। তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।’
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব বলেন, ‘বন্যায় ভাঙন রোধে আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। বিশেষ করে তাৎক্ষণিকভাবে যাতে ভাঙন রোধ করা যায়, সে জন্য জিওব্যাগ রয়েছে। আমরা আশা করছি, প্রাথমিকভাবে ভাঙন রোধ করতে পারব।’
রংপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সব ধরনের প্রস্তুতি আমাদের আছে। বন্যা মোকাবিলায় জনবল, শুকনো খাবার, চাল, নগদ টাকা সবই মজুত আছে। যখন যা প্রয়োজন হবে, তা দিতে পারব আমরা।’