বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভোট শেষ, সেতু বানানোও শেষ

  •    
  • ৩১ মে, ২০২২ ১৫:৩৪

কাউনিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে সেতু নির্মাণ জরুরি জানিয়ে এলজিইডিসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এখনও কোনো সাড়া পাইনি। চেষ্টা করছি, কারণ লোকজনকে অনেক দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।’ 

বাঁশের তৈরি সাঁকোর দুই ধারে নেই কোনো সাপোর্ট। খোলা সাঁকোর ওপর দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হয় পথচারীদের। একসঙ্গে কয়েকজন উঠলে কেঁপে ওঠে এটি। মাঝেমধ্যে সাঁকো থেকে নদীতেও পড়ে যান অনেকে। তাই খুবই সাবধানে পা ফেলে পার হতে হয় সাঁকোটি।

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছে চার গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ এভাবেই ঝুঁকি নিয়ে মরা তিস্তা নদী পার হন।

স্থানীয়দের দাবি, চাঁদার টাকায় করা এই সাঁকো দিয়ে শিক্ষার্থীসহ ৫০ হাজারের বেশি মানুষ পৌরসভা ও উপজেলা সদরে প্রায় ৩০ বছর ধরে যাতায়াত করছেন।

দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও সেতু নির্মাণ করা হয়নি আজও। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন অর্ধলাখ মানুষ, বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ, রোগী ও নারীরা। বিকল্প পথে গ্রামগুলোতে ঢুকতে ও বের হতে কয়েক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় লোকজনকে। এ ছাড়া, কৃষিপণ্য পরিবহনেও কৃষকদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, হারাগাছের গোল্ডেনের ঘাট এলাকায় প্রায় ৩০০ মিটারের মরা তিস্তা নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে সাঁকোটি। এর ওপর দিয়ে রাজপুর ইউনিয়নের চিনাতুলি ও প্রেমের বাজার; খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের তালপট্টি, হরিণ চড়া, মিলন বাজার, টঙ্গী বাজার, হারাগাছ; পৌরসভার চরচতুরা, ধুম গারা ও পল্লিমারি গ্রামের বাসিন্দারা প্রতিদিন যাতায়াত করছেন।

এ সময় স্থানীয় কয়েকজন জানান, ২০১৩ সালের আগে বন্যা ও পানির মৌসুমে মানুষ নৌকা দিয়ে নদী পার হতো। শুষ্ক মৌসুমে পার হতো হেঁটে, মোটরসাইকেল ও সাইকেলে করে। ওই বছর স্থানীয়রা চাঁদা তুলে সাঁকোটি তৈরি করেন। প্রতি বছর দুই পারের লোকজন টাকা তুলে সাঁকোটি মেরামতও করলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো দিয়ে কোনো রকম চলাচল করেন তারা। তাই এখানে একটি সেতু নির্মাণের দাবি তাদের দীর্ঘদিনের।

মরা তিস্তা নদীর ওপারে চোখে পড়ে পল্লিমারি উচ্চ বিদ্যালয়, চরচতুরা প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাংচর ভাঙ্গীটারি বেসরকারি বিদ্যালয়, ইউএনএ বাংলা বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ ছাড়া দুটি মাদ্রাসা ও পাঁচটি ছোট-বড় বাজার রয়েছে এখানে। প্রতিদিনই শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হয় মরা তিস্তা নদী।

তাই স্থানীয় রতন মিয়া ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘ভোটের আগে সবাই পুল (সেতু) দিতে চায়, কেউ কথা রাখে না। ভোটও শ্যাষ (শেষ), পুলও শ্যাষ। গেল ত্রিশ বছর ধরি এমন দেখোছি।’

স্থানীয় দিনমজুর আব্দুল মতিন বলেন, ‘বৃষ্টির সময় সাঁকো পার হতে ভয় লাগে। সন্ধ্যার পর সাইকেল বা মোটরসাইকেল নিয়ে যাওয়া যায় না। প্রতিদিন সকালে প্রচুর বাইসাইকেল সাঁকো দিয়ে পার হয়। তখন এটি অনেক নড়েচড়ে, মাঝেমধ্যে ভেঙেও যায়।’

দরোদি স্কুলের ছাত্র ফরিদুল হক রুমান বলেন, ‘বর্ষার সময় আমাদের চলাচলে খুব অসুবিধা হয়। ছাত্ররা সব সময় পার হতে পারলেও ছাত্রীরা ভয় পায়।’

কয়েক দিন পরপরই সাঁকোটি ভেঙে যায়, আবার মেরামত করা হয় বলে জানান স্থানীয় হাফিজুর রহমান। মেরামতের জন্য প্রতি সোমবার ও শুক্রবার হাটের দিনে যে যার সামর্থ্যমতো টাকা দেয়। এভাবে প্রতি সপ্তাহে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা ওঠে। সেই টাকা দিয়ে আস্তে আস্তে সাঁকো মেরামত করা হলেও মানুষের ভোগান্তি কমে না সাঁকোতে।

চাষি আব্দুর জব্বার বলেন, ‘গ্রামগুলোতে ভুট্টা, ধান, পাট, গম, রসুন, পেঁয়াজ, বাদাম, খিরা ও শসাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি উৎপাদন হয়। সেতু না থাকায় কৃষিপণ্য নিয়ে ৪০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দিয়ে বহুদূর ঘুরে হারাগাছ বাজারে যেতে হয়। সেতু না থাকায় ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছি আমরা।’

সেতু নির্মাণে বছরের পর বছর ধরে শুধু প্রতিশ্রুতিই দেয়া হয় জানিয়ে নাজিরদহ গ্রামের শিক্ষক আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘তা বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয় না। সাঁকো থেকে প্রায়ই ছেলেমেয়েরা পানিতে পড়ে যায়। তাই এখানে সেতু নির্মাণের দাবি এখন অনেকের।’

হারাগাছ পৌরসভার মেয়র এরশাদুল হক বলেন, ‘গোল্ডেনের ঘাটে সেতু নির্মাণের জন্য বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির কাছে যাব। চেষ্টা করব, আমার সময়কালে যেন সেতুটি হয়।’

সেতু নির্মাণের বিষয়ে কাউনিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে সেতু নির্মাণ জরুরি জানিয়ে এলজিইডিসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এখনও কোনো সাড়া পাইনি। চেষ্টা করছি, কারণ মানুষকে অনেক দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।’

এ বিভাগের আরো খবর