বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রংপুর শহর কি আবার পানির নিচে চলে যাবে?

  •    
  • ৩১ মে, ২০২২ ০৮:৫৮

২০২০ সালে বৃষ্টিতে ব্যাপক জলাবদ্ধতার স্মৃতি তুলে ধরে রংপুর নগরীর পূর্ব শালবন এলাকার বাসিন্দা হাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘কী শুনবেন বাহে, হঠাৎ সকালে ঘুম থেকে উঠে পা নামাতেই পায়ে পানি লাগে। প্রথম চমকে উঠি। তারপর লাইট জ্বেলে দেখি ঘরোত পানি। এটা অবিশ্বাস্য। পুরো এলাকা পানিতে থইথই। ১৯৮৮ সালে একবার বন্যা হইছে, কিন্তু এত পানি হয় নাই শহরে। আমরা আর ওই রকম বন্যা দেখতে চাই না। সময় আছে ড্রেন দিয়ে পানি নামার ব্যবস্থা করতে হবে। নইলে সিলেটের মতন অবস্থা হবে আমাদেরও।’

২০২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাত ১০টা থেকে পরদিন সকাল ৯টা পর্যন্ত ১১ ঘণ্টায় রংপুরে বৃষ্টি হয় ৪৩৩ মিলিমিটার। এই বৃষ্টিতে ২০৩ বর্গকিলোমিটারের এই নগরী চলে যায় পানির নিচে। পাড়া-মহল্লা ছাড়াও মূল সড়কে এক বুক পানি হয়েছিল। কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। এক সপ্তাহ সেই ধকল সামলাতে হয় নগরবাসীকে। কিন্তু ক্ষত থেকে যায় বহুদিন।

এরপর জোর দাবি ওঠে নগরীর প্রতিটি পাড়া-মহল্লার ড্রেন নির্মাণ, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা এবং নগরী থেকে পানি নেমে যাওয়ার শ্যামাসুন্দরী খালকে দখলমুক্ত করে তা খনন করা।

সম্প্রতি সিলেটে বন্যার পর ২০২০ সালের রংপুরের সেই বন্যা নিয়ে আলোচনা শুরু হয় নগরীতে। নগরবাসী সেই দিনের ১১ ঘণ্টার বৃষ্টি বন্যার সঙ্গে সিলেটের বন্যার আলোচনা করে তার সমাধান এখনই খুঁজে বের করার দাবিও তুলেছেন।

রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল দপ্তর জানিয়েছে, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় নগরীতে ৪৬ দশমিক ৯৯ কিলোমিটার আরসিসি ড্রেন নির্মাণ এবং দুটি ব্রিজ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

৬২ কোটি ৬ লাখ টাকায় ৬৩টি প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের জুলাইয়ে। শেষ হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের জুনে। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হচ্ছে না। এ জন্য আরও এক বছর মেয়াদ বাড়ানোর কথা ভাবা হচ্ছে।

এরই মধ্যে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের ৮০ ভাগ কাজ শেষ হওয়ার দাবি করছেন কর্মকর্তারা। তবে ৮০ ভাগ কাজ শেষ হওয়ার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে এলাকা পরিদর্শনে।

নগরীর প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় (পুরোনো ১৫টি ওয়ার্ড) ড্রেন নির্মাণ হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে বর্ধিত এলাকাতেও। কিন্তু প্রায় প্রতিটি ড্রেনের মুখ বন্ধ। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উপায় নেই। এমনকি এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত পানি নামার পথও প্রায় বন্ধ।

অনেক ড্রেন এখনও হস্তান্তর করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান । কোনো কোনো ড্রেনের কাজ চলমান রয়েছে। এ কারণে ভারি বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা হবে নগরীতে।

নগরীতে যে পানি জমে তা ড্রেনের মাধ্যমে নিষ্কাশন হয়ে যায় শ্যামাসুন্দরী খালে। সেখান থেকে যায় ঘাঘট নদীতে। কিন্তু সেই শ্যামাসুন্দরী খালটিও পুরো দখলমুক্ত হয়নি। বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ভরাট হয়েছে খালটি। খালটির কোথাও কোথাও ময়লা-আবর্জনার ভাগারে পরিণত হয়েছে। ফলে সেই বৃষ্টি হলে ফের দুর্ভোগে পড়ার আশঙ্কা করছেন নগরবাসী।

নগর ভবনের প্রকৌশল দপ্তর জানিয়েছেন, শ্যামাসুন্দরী খালের কিছু অংশ পরিষ্কার করা হয়েছে । তবে খনন করা হয়নি। খননের জন্য প্রকল্প হাতে নিয়ে প্রাথমিক কাজ চলছে।

মাহিগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা মাহফুজুর রহমান বলেন, হয়তো ওই রকম (২০২০ সালের) জলাবদ্ধতা নগরীতে হবে না। কিন্তু ড্রেনগুলোর যে অবস্থা তাতে হতেও তো পারে। তিনি বলেন, ‘ড্রেন ঠিক থাকলে পানি সঙ্গে সঙ্গে নেমে গেলে জলাবদ্ধতার সম্ভাবনা কম। দিনে দিনে পানি নেমে যেতে পারবে।’

নগর মীরগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা ওয়াজেদুর রহমান রাজু বলেন, ‘আমরা সিটির ৩৩ নম্বর এলাকার বাসিন্দা। সিটির বাসিন্দা হলেও গ্রামের গন্ধ এখনো যায়নি। বৃষ্টি হলে তো জলাবদ্ধতা হবে।’

তিনি বলেন, ‘ছোট ছোট খালগুলোর মুখ বন্ধ করে আবাদি জমি করা হয়েছে। এক সময় যে ছোট ছোট খালগুলো দিয়ে পানি নেমে যেত, এখন তো সেগুলো নিশ্চিহ্ন, আবাদি জমি। সুতরাং পানি নেমে যাওয়ার উপায় নাই। এই খালগুলো উদ্ধার করে সংস্কার করতে হবে, খনন করতে হবে। তাহলে পানি নিষ্কাশন হবে। বৃষ্টি হলেও পানি জমবে না।’

ওই এলাকার আরেক বাসিন্দা সেকেন্দার রহমান বলেন, ‘খালি ড্রেন বানালে তো হবে না। ড্রেনের পানি কোথায় পড়বে সেটাও তো দেখতে হবে। ড্রেনের পানি যেখানে পড়বে সেখানে তো ধানি জমি। তাহলে পানি নিষ্কাশন হবে না। জমিতেই আটকে থাকবে পানি।’

রংপুর নগরীর পূর্ব শালবন এলাকার বাসিন্দা হাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বয়স ৭০ হবে। এই বয়সে ওই বন্যার মতো (২০২০ সালের জলাবদ্ধতা) আমি শহরে দেখি নাই। প্রায় আমরা ওই গল্পটা করি।’

সে সময়ের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘কী শুনবেন বাহে, হঠাৎ সকালে ঘুম থেকে উঠে পা নামাতেই পায়ে পানি লাগে। প্রথম চমকি উঠি। তারপর লাইট জ্বেলে দেখি ঘরোত পানি। এটা অবিশ্বাস্য।

‘পুরো এলাকা পানিতে থইথই। ১৯৮৮ সালে একবার বন্যা হইছে, কিন্তু এত পানি হয় নাই শহরে। আমরা আর ওই রকম বন্যা দেখতে চাই না। সময় আছে, ড্রেন দিয়ে পানি নামার ব্যবস্থা করতে হবে। নইলে সিলেটের মতো অবস্থা হবে আমাদেরও।’

সেই দিনের কথা স্মরণ করে নগরীর নিউ ইঞ্জিনিয়ার পাড়ার বাসিন্দা সেলিম মিয়া জানান, ‘গভীর রাতে ঘরে ঘরে পানি প্রবেশ করায় বেশির ভাগ বাড়ির ঘরের মধ্যে থাকা মূল্যবান আসবাবপত্র টিভি ফ্রিজসহ অন্যান্য সামগ্রী পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বাসার ভেতরে এক কোমর পানি, ঘরের মধ্যেও কোমর পর্যন্ত পানি। এমন অবস্থায় মালামাল নিয়ে অন্যত্র যাওয়াও সম্ভব হয় নাই। ফলে খাটের ওপর স্ত্রী আর দুই সন্তানকে নিয়ে চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটছে তাদের।’

রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, মধ্য জুনের আগেই রংপুরে ব্যাপক বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।

রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আজম আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনের যে প্রকল্প সেই প্রকল্পের কাজ ৮০ ভাগ শেষ হয়েছে। সামান্য কিছু কাজ বাকি আছে সে জন্য আরও এক বছর সময় চাইব আমরা।’

রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ‘নগরজুড়ে ব্যাপক কাজ করা হয়েছে। এর আগে এমন উন্নয়নকাজ কখনও হয়নি। ড্রেন, কালভার্ট ও সড়ক সংস্কার করা হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। কিছু কাজ বাকি আছে, সেগুলোও চলছে, কাজ থেমে নেই।’

মেয়র বলেন, ‘ড্রেনগুলোও সংস্কার করা হচ্ছে। তবে আমি বলব, এসব ড্রেন পরিষ্কার রাখতে নগরবাসীকেও এগিয়ে আসতে হবে। তারা যেন যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা না ফেলে, ড্রেনের মুখ বন্ধ না করে। ড্রেনের মুখ বন্ধ না থাকলে পানি মহূর্তেই নেমে যাবে, জলাবদ্ধতা হবে না।’

এ বিভাগের আরো খবর