গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গওহরডাঙ্গা গ্রামে মধুমতী নদীর তীব্র ভাঙনের মুখে পড়েছে উপজেলার একমাত্র পাটকলটি। ভাঙন ঠেকাতে কর্তৃপক্ষ খোয়া, ইট ও বস্তা ফেললেও এতে কোনো কাজ হচ্ছে না।
নদীর স্রোতে প্রতিনিয়ত পাড় ভেঙে বর্তমানে ওই পাটকলের ভবন থেকে মাত্র ২ থেকে ৩ ফুট দূরে অবস্থান করছে মধুমতী। তাই যেকোনো মুহূর্তে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে পাটকলটি।
পাটকল সূত্র জানিয়েছে, ২০১০ সালে উপজেলার গওহরডাঙ্গা গ্রামে নদীর পাড় থেকে ৫০ ফুট দূরে ‘টুঙ্গিপাড়া জুট মিল’ চালু করেন ইবাদত খলিফা। এখানে স্থানীয় ও দেশের বিভিন্ন এলাকার ২০০ নারী ও ১০০ পুরুষ কাজ করেন। বর্তমানে কাজ হারানোর আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের। নদীগর্ভে পাটকলটি বিলীন হলে কাজ হারিয়ে পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়বেন তারা। তাই ভাঙন ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তাদের।
পাটকলের নারী শ্রমিক রেহানা আক্তার বলেন, ‘আমরা গরিব। জুট মিলে কাজ করি বলে খাওয়া জোটে। মিল বন্ধ হয়ে গেলে মরা ছাড়া গতি থাকবে না।’
জুটমিলের দুই-তৃতীয়াংশই নারী শ্রমিক
মরিয়াম বেগম, আফি খানমসহ কয়েক নারী শ্রমিক জানান, স্বামী পরিত্যক্ত ও স্বামী মারা গেছেন এমন অনেক নারী ওই জুট মিলে কাজ করেন। তাদের বেতনের ওপর নিজ নিজ পরিবার নির্ভরশীল। তাই জুট মিল নদীতে তলিয়ে গেলে তাদের পথে বসতে হবে।
ষাটোর্ধ্ব শ্রমিক মান্নান শেখ বলেন, ‘পাটকলের শুরু থেকেই আমিসহ পরিবারের তিনজন এখানে কাজ করে খাই। পাটকল বন্ধ হয়ে গেলে ছেলেমেয়ে না খেয়ে মরবে। সরকারের কাছে একটাই দাবি যেন ভাঙন ঠেকায়। মিল বাঁচলে আমরা বাঁচব।’
টুঙ্গিপাড়া জুট মিলের মালিক ইবাদত খলিফার ভাই নজির খলিফা বলেন, ‘জুট মিল প্রতিষ্ঠার সময় ভাঙন ছিল না। কয়েক বছর আগে ওপারে ভাঙন ঠেকাতে ব্লক ও বালির বস্তা দেয়ায় নদীর স্রোত এপারে আছড়ে পড়তে শুরু করে। তখন থেকেই ভাঙন শুরু। জুট মিল বাঁচাতে আমরা চেষ্টা করলেও ঠেকানো যাচ্ছে না। সরকার পদক্ষেপ না নিলে জুট মিলটি বাঁচানো সম্ভব নয়।’
এ বিষয়ে টুঙ্গিপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ভাঙনের কবলে পড়েছে। ভাঙনকবলিত এলাকাগুলোর জরিপ করা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’