বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাম জোট থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া আনন্দের নয়

  •    
  • ২৮ মে, ২০২২ ১৮:৫৭

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘আমাদের জোটের বন্ধুরা রাজনৈতিক কোনো বিজ্ঞতার পরিচয় দেন নাই। পরিচয় দেন নাই এই জায়গা থেকে যে, আমরা যেটা বলেছিলাম, গণতন্ত্র মঞ্চ নিয়ে যে আলোচনা চলছে, এখানে আমাদের জোটের শরিকদের সবাই অংশগ্রহণ করতে পারতেন।’

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সাতটি রাজনৈতিক দল নিয়ে হচ্ছে নতুন জোট। একে অনানুষ্ঠানিকভাবে ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ বলছেন জোটভুক্ত দলগুলোর নেতারা।

জোটে রয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সদ্য সাবেক দুই শরিক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলন।

একসঙ্গে দুই জোটে থাকা-না থাকার বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে বাম জোটের সঙ্গে আলোচনা চলছিল বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলনের। মঙ্গলবার বাম জোটের বৈঠকে দল দুটির সদস্যপদ স্থগিত করা হয়।

দীর্ঘদিনের জোট থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া নিয়ে নিউজবাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ও গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।

বাম জোট থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া এই দুই নেতার কাছে দুঃখজনক, তবে বৃহত্তর গণতান্ত্রিক স্বার্থে আবার একসঙ্গে কাজ করা হবে বলেও মনে করেন তারা।

‘বন্ধুদের বোঝাতে সক্ষম হইনি’

বাম জোটের শরিকদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘আমাদের জোটের বন্ধুরা রাজনৈতিক কোনো বিজ্ঞতার পরিচয় দেন নাই। পরিচয় দেন নাই এই জায়গা থেকে যে, আমরা যেটা বলেছিলাম, গণতন্ত্র মঞ্চ নিয়ে যে আলোচনা চলছে, এখানে আমাদের জোটের শরিকদের সবাই অংশগ্রহণ করতে পারতেন।

‘তারা অংশ নিলে এটার নেতৃত্ব গঠন, পরিচালনা বা সমগ্র এই আন্দোলনটা অনেক বেশি গতি পেত। আমরা আমাদের বন্ধুদের এখন পর্যন্ত বোঝাতে সক্ষম হইনি। সেটা আমাদের জন্য নিশ্চয়ই দুঃখের এবং বেদনার।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যে জোটটার কথা ভাবছি, যেটা আত্মপ্রকাশ করবে, সেটাও ভবিষ্যতের ব্যাপার। আত্মপ্রকাশ করতেও পারে, নাও পারে। অনেক সম্ভাবনা তো অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়। এটা তো এখনও একটা লাইনও আনুষ্ঠানিক বলা হয়নি বা আত্মপ্রকাশ করেনি, তবে রেসপন্সটা বেশ দ্রুত ছড়িয়েছে।

‘সে জায়গা থেকে আমাদের প্রস্তাব ছিল যে আমাদের দুই দলের সদস্যপদ নিষ্ক্রিয় বা স্থগিত রাখেন। সেই হিসেবে স্থগিত রাখা হয়েছে, কিন্তু তাদের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব ও যোগাযোগটা আছে।

‘রাজপথে যদি এই মঞ্চ দাঁড়ায়, তাহলে নিশ্চয়ই আবার আমরা তাদের সঙ্গেও কথা বলব যে, যুগপৎভাবে রাজপথে কীভাবে দাঁড়ানো যায়। তাদের প্রতি এই আহ্বানটা স্ট্যান্ডিং আছে। হয়তো ভবিষ্যতে আমরা এক জায়গায় আসতেও পারি, সেটা যেকোনো বড় পরিধিতে।’

বাম জোটে আর কখনও ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সাইফুল বলেন, ‘সেই সম্ভাবনা তো থাকছেই। যদি আমরা দেখি যে আমরা যে উদ্যোগটা নিয়েছি, এটা বাস্তবে কোনো সম্ভাবনা নাই দাঁড়ানোর জন্য, তখন আমরা আমাদের অবস্থান পর্যালোচনা করতে পারি। এরপর আসলে কী করব, সেটা ভবিষ্যতের ব্যাপার। এখনই মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’

বাম জোটের দীর্ঘদিনের বন্ধুদের সঙ্গে আর থাকতে না পারায় মন খারাপ এই রাজনীতিকের।

তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমার যথেষ্ট মন খারাপ। মন খারাপ এই জন্য যে, আমরা তো এরশাদের সামরিক স্বৈরশাসন থেকে শুরু করে প্রথমে পাঁচ দল, পরে ১১ দল, গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা, ২০১৮ সালের পর থেকে বাম গণতান্ত্রিক জোট। সব মিলিয়ে এই বন্ধুদের সঙ্গে আমার প্রায় ৩৫/৩৬ বছরের জার্নি।

‘তাদের সঙ্গেই তো রাজপথে চলেছি। আমার জন্য তো এটা যথেষ্ট কষ্ট এবং বেদনার যে আমাদের বন্ধুরা এখন আমরা একসঙ্গে দাঁড়াতে পারছি না। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে আমরা একটা বৃহত্তর পরিসরে একসঙ্গে দাঁড়াতে পারলাম না। আমরাও তাদের বোঝাতে সক্ষম হইনি কেন এ রকম একটা বৃহত্তর জাতীয় উদ্যোগ দরকার। তার মানে আজকে না হলে কালকে হবে না তা নয়, পরশুও হতে পারে।’

‘বিচ্ছেদ আনন্দদায়ক নয়’

রাজনৈতিক কর্মকৌশলের কারণে বাম জোট থেকে বিচ্ছিন্ন হলেও বিষয়টি মোটেও আনন্দের নয় বলে মন্তব্য করেছেন জোনায়েদ সাকি।

তিনি বলেন, ‘আমাদের যে বিচ্ছেদ, এই বিষয়টা মোটেও আনন্দদায়ক নয়। আমাদের দীর্ঘদিনের হৃদ্যতা। যখন আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম, সেটা আনন্দের নয়, এটা বরং আপাতত আনন্দদায়ক হতো আমরা যদি একসঙ্গে একটি কর্মকৌশলে ঐকমত্যে আসতাম, কিন্তু আমাদের নিজেদের দলের উপলব্ধির পার্থক্য আছে, রাজনৈতিক কর্মকৌশলের পার্থক্য আছে।’

সাকি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার আমাদের (গণসংহতি আন্দোলন) প্রথম নির্বাহী সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট আবদুস সালামের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন কর্মসূচিতে বাম জোটের নেতারা এসেছিলেন। তাদের সঙ্গে আজকেও আমাদের অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে। ওটাই আমরা আলোচনা করেছি। এই আহ্বান তো আমাদের সব সময় আছে।

‘আমরা মনে করি যে বর্তমান এই সময়ের যে কর্মকৌশল আমাদের নিতে হবে, সেটা হচ্ছে বাম জোট রেখেই ভোটাধিকার ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার কর্মসূচির ভিত্তিতে অপরাপর গণতান্ত্রিক শক্তিকে মিলে অধিকতর বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলা। সেই আহ্বানটা আমরা এখনও জানিয়ে যাচ্ছি। ‘আমরা আশা করি যে লড়াইয়ের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আমরা আরও ঐক্যবদ্ধ কাজ করার পথ অনুসন্ধান করতে পারব; আমরা একসঙ্গে আবারও কাজের জায়গা তৈরি করতে পারব।’

বাম গণতান্ত্রিক জোটে ফেরার সম্ভাবনা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বলে তো কিছু নাই। আমাদের এখনকার যে বিচ্ছেদ, সেটাও তো চিরস্থায়ী না। আমরা তো বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় একসঙ্গে রয়েছি। তেল-গ্যাস জাতীয় কমিটিতে একসঙ্গে আছি। আরও কিছু জায়গায় আমাদের কাজের সম্পর্ক আছে।’

দেশে এখন ফ্যাসিবাদী শাসন চলছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এখন তো বাংলাদেশে একটা বিশেষ অবস্থা বিরাজমান। দেশে একটা কর্তৃত্ববাদী শাসন চলছে; ফ্যাসিবাদী শাসন চলছে। ফলে এই মুহূর্তে গণতন্ত্রের গতিমুখে ফেরাটা বাংলাদেশের জন্য অপরিহার্য।

‘না ফিরতে পারলে বাংলাদেশ একটা গভীর বিপদের মধ্যে পড়বে এবং সবাই মিলেই সেই বিপদের মধ্যে পড়ব। সরকারি দল তাদের সংকীর্ণ স্বার্থে সেটা এখন উপলব্ধি করতে পারছে না, কিন্তু গণতন্ত্রে ফেরা এখন বাংলাদেশের স্বার্থ, সকলের স্বার্থ।

‘কাজেই আমরা মনে করি এই উপলব্ধি যারা করছেন, তাদের অগ্রগামী ভূমিকা নিতে হবে এবং একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে এই মুহূর্তে গণতন্ত্রের লড়াইটা প্রধান লড়াই হিসেবে এসেছে। এই লড়াইয়ের কর্মকৌশলে আমাদের পার্থক্য হচ্ছে, কিন্তু এটা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত না। পরিস্থিতি বদলে যাবে। তখনকার পরিস্থিতিতে নতুন মেরুকরণ ঘটবে। সেই বিষয়গুলো তো থাকবেই।’

এ বিভাগের আরো খবর