বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

৫ বছর ধরে নিখোঁজ আ.লীগের ৪ নেতা, সন্ধান চায় পরিবার

  •    
  • ২৬ মে, ২০২২ ২০:৫৬

২০১৭ সালের ২৬ মে বিকেলে বালুয়াকান্দি গ্রাম থেকে আওয়ামী লীগ নেতা রুপ মিয়া, যুবলীগ নেতা আজিজুল, বাঁশগাড়ি গ্রাম থেকে আওয়ামী লীগ নেতা হাবিব ও জাকির হোসেনকে ধরে নিয়ে যায় রায়পুরা থানা পুলিশ। পরে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের আটকে রাখা হয় বাঁশগাড়ি পুলিশ ফাঁড়িতে। সেখান থেকে রাতে থানায় নেয়া হয়েছে বলে জানতে পারলেও পরদিন থানা ও আদালতে তাদের খোঁজ মেলেনি।

নরসিংদীতে পাঁচ পাঁচ বছর আগে নিখোঁজ হন আওয়ামী লীগের চার নেতা। পুলিশ তাদের আটক করে নিয়ে যাওয়ার পর থেকেই তাদের খোঁজ নেই বলে দাবি স্বজনদের।

নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধান চেয়ে মানববন্ধন করেছেন তাদের স্বজন ও এলাকাবাসী।

নরসিংদী প্রেস ক্লাবের সামনে বৃহস্পতিবার দুপুরে এ মানববন্ধন করা হয়। এতে নিখোঁজ চার ব্যক্তির পরিবারের সদস্যসহ দেড় শতাধিক এলাকাবাসী অংশ নেন।

নিখোঁজ নেতারা কারা

রায়পুরার বাঁশগাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের তৎকালীন সহসভাপতি রুপ মিয়া মেম্বার, ক্রীড়া সম্পাদক হাবিব মেম্বার, ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকির হোসেন।

কী ঘটেছিল ৫ বছর আগে

২০১৭ সালের ২৬ মে বিকেলে বালুয়াকান্দি গ্রাম থেকে আওয়ামী লীগ নেতা রুপ মিয়া, যুবলীগ নেতা আজিজুল, বাঁশগাড়ী গ্রাম থেকে আওয়ামী লীগ নেতা হাবিব ও জাকির হোসেনকে ধরে নিয়ে যায় রায়পুরা থানা পুলিশ। পরে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের আটকে রাখা হয় বাঁশগাড়ী পুলিশ ফাঁড়িতে।

সেখান থেকে রাতে থানায় নেয়া হয়েছে বলে জানতে পারলেও পরদিন থানা ও আদালতে তাদের খোঁজ মেলেনি।

কী বলছেন স্বজনরা

কথা হয় নিখোঁজ আজিজুলের ৯ বছরের শিশু জান্নাতীর সঙ্গে। সে বলে, ‘কোনো বাবা যদি তার সন্তানের জন্য কোনো কিছু আনে, তা দেখে আমার কলিজা ফাটিয়া যায়। অহন যদি আমার বাবা থাকত, আমাকে খাওয়াত। বাবার কথা ভাইবা আমি এখন কান্না করি। সরকারের কাছে আমার আবেদন, বাবাকে ফেরত চাই।’

আজিজুলের ছোট ভাই হুরুন মিয়া জানান, তারা পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে আজিজুল ইসলাম তৃতীয়। আজিজুল ইসলাম ২০১৭ সালে বাঁশগাড়ী ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তিনি আরব গিয়ে ভালো কিছু করতে না পেরে গ্রামে ফিরে পেঁয়াজ, রসুন, আলুসহ খাদ্যসামগ্রী বিক্রি করতেন।

হুরুন বলেন, ‘বাঁশগাড়ীতে অভিযানের সময় পুলিশের ওপর হামলা করে গ্রামের লোকজন। এ ঘটনায় প্রায় ৮০০ মানুষকে আসামি করে মামলা করে পুলিশ। আমি ছিলাম ভাঙচুর মামলার আসামি। আমার ভাই আজিজুল নিখোঁজ হন ২০১৭ সালে মে মাসের ২৬ তারিখে।

‘আমাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায় ওই বছরের নভেম্বরের ২০ তারিখ। পুলিশের নির্যাতনের শিকার হয়ে এক পা হারাই। এখন অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। সংসারে ৭ ছেলেমেয়ে ও স্ত্রী রয়েছে।’

তিনি গুম হওয়া ভাইকে খুঁজে পেতে সরকারের কাছে আকুতি জানান।

আজিজুলের মা নুরজাহান বেগম বলেন, ‘আমার ছেলের খোঁজ নাই আজ পাঁচ বছর। প্রতিদিন আশায় থাকি আমার ছেলে ফিরবে। পাঁচ বছর হলো, ছেলে তো আর ফেরে না! আমার ছেলের সন্ধান চাই।’

নিখোঁজ রুপ মিয়া মেম্বারের ভাতিজা মাইন উদ্দিন বলেন, ‘১৬ বছর সৌদি আরবে ছিলাম আমি। আমার কাকার নিখোঁজের সংবাদ পেয়ে দেশে আসি। জেলখানা, কোর্ট কোথাও খুঁজে পাইনি। পুলিশ জানায়, আমরা নাকি তাদের কাছ থেকে চারজনকে ছিনিয়ে নিয়েছি। পরে আমাকেও ধরে নিয়ে পায়ে গুলি করেছে। একটা পা নাই আমার, আমাকেও অস্ত্র মামলা দিয়েছে পুলিশ।

‘আনুমানিক চার মাস জেল খেটেছি। যেই অবস্থাতেই হোক, আমার কাকাসহ চারজনকে ফেরত চাই আমি।’

নিখোঁজ হাবিব মেম্বারের বড় ভাই সফিয়ত উল্লাহ বলেন, ‘আমার ভাইকে ফেরত চাই আমি। বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়ায় স্থানীয় হাইব্রিড আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল হক ও তার সমর্থকরা মিলে পুলিশকে টাকা নিয়ে ম্যানেজ করে এই কাজ করিয়েছেন। পুলিশ শত শত মানুষের সামনে থেকে তাদের ধরে নিয়ে যাওয়ার পর আজ পাঁচ বছর ধরে সন্ধান পাচ্ছি না।

‘সব জায়গায় ঘুরেছি, মামলা করতে গিয়েছি, আমাদের মামলা পর্যন্ত নেয়নি। বরং আমাকে পুলিশ ধরে নরসিংদী পাঁচ নম্বর ব্রিজে নিয়ে পায়ে গুলি করে অস্ত্র মামলা দেয়। পুলিশ পায়ে গুলি করার পর আমার পা কেটে ফেলতে হয়েছে। আমি পঙ্গু হয়ে গিয়েছি। আমি এর বিচার চাই। সেই সঙ্গে আমার ভাইসহ চারজনের সন্ধান চাই।’

কী বলছে পুলিশ

পুলিশের বিরুদ্ধে আটকের অভিযোগের বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে মন্তব্য করেছেন রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুর রহমান। তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানান।

সহকারী পুলিশ সুপার (রায়পুরা সার্কেল) সত্যজিৎ কুমার ঘোষ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই মানববন্ধনের বিষয়টি এইমাত্র শুনলাম। বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে জানাচ্ছি।’

এ বিভাগের আরো খবর