তিন বছর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার তোড়জোড়ের মধ্যে দেখা দিয়েছে ধোঁয়াশা। কেন্দ্র থেকে কমিটি ঘোষণা করাতে ঢাকায় ছুটছেন নেতারা। তবে কমিটি কেন্দ্রীয় সেলে জমা দেয়া নিয়ে নেতাদের কারও কাছ থেকে সদুত্তর মিলছে না।
ঢাকায় অবস্থান করছেন চবি ছাত্রলীগের প্রায় সব গ্রুপের নেতারা। আর ক্যাম্পাসে দফায় দফায় শোডাউনের মাধ্যমে অবস্থান জানান দিচ্ছেন কর্মীরা। অপেক্ষার প্রহর গুনছেন হাজারও নেতাকর্মী।
ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি এ মাসেই হবে, এমন খবরে সরগরম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ১০ দিনের বেশি সময় ধরে রাজধানীতে অবস্থান করেও ঠিক কবে কমিটি অনুমোদন হবে নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না গ্রুপ নেতারা। সঠিক সময় জানাতেও গড়িমসি চবি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের।
সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বলছেন, তারা কমিটির সব প্রক্রিয়া প্রায় শেষ করেছেন। কমিটি নিয়েই ক্যাম্পাসে ফিরবেন।
নেতাকর্মীরা জানান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ দুটি বলয়ে বিভক্ত। এক পক্ষ সাবেক সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী। অন্যটি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফলের অনুসারী।
প্রতিটি বলয়ের অনুসারীদের মধ্যে আলাদা আলাদা বেশ কয়েকটি উপগ্রুপ রয়েছে। এর মধ্যে সিক্সটি-নাইন, ভিএক্স, কনকর্ড, একাকার, রেড সিগন্যাল, এপিটাফ, বাংলার মুখ, উল্কা গ্রুপ নাছিরের অনুসারী। সিএফসি ও বিজয় গ্রুপ মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফলের অনুসারী।
ঢাকায় অবস্থান করা নাছির ও নওফেল অনুসারী চার নেতার সঙ্গে কথা হয়েছে নিউজবাংলার। তারা হলেন নওফেল অনুসারী বিজয় গ্রুপের নেতা মো. ইলিয়াস, নাছিরের অনুসারী রেড সিগন্যাল গ্রুপের রকিবুল হাসান দিনার, ভিএক্স গ্রুপের প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয়, বাংলার মুখ গ্রুপের নেতা আবু বকর তোহা।
তারা নিউজবাংলাকে জানান, কমিটির বিষয়ে দুই নেতা (নাছির-নওফেল) সবকিছু ঠিক করে দিয়েছেন অনেক আগেই। সেদিক থেকে কোনো বাধা নেই। এখন কমিটি দপ্তর সেলে জমা দেয়া বাকি।
কমিটি সেলে জমা পড়েছে কি না গ্রুপ নেতারা নিশ্চিত করে বলছেন না। তারা জানান, দলীয় দপ্তরে জমা দেয়া পুরোপুরি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের হাতে। দপ্তরে জমা পড়লেই কমিটি অনুমোদন হয়ে যাবে।
অনেক দিন ঢাকায় থেকে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন তারাও।
কেন্দ্রে তালিকা জমা দেয়া নিয়ে নাটকীয়তা
কমিটি এখনও দপ্তর সেলে জমা দেয়নি বলে বৃ্হস্পতিবার নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন চবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু।
তিনি বলেন, ‘শিগগিরই সব জেনে যাবেন। আমরা একদম দ্বারপ্রান্তে আছি। রেজাল্ট (কমিটি) নিয়েই চট্টগ্রাম ফিরব।’
ছাত্রলীগের একটি সূত্র জানায়, পূর্ণাঙ্গ কমিটির কয়েকটি পদ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল। সিনিয়রিটি ইস্যু ও গুরুত্বপূর্ণ পদে একাধিক যোগ্য নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। জটিলতা নিরসন করে কমিটির খসড়া তৈরি হয়ে গেছে। এ জন্য ঢাকায় এতে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রলীগ নেতা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কমিটি দপ্তরে জমা পড়লেও কেউ সেটা প্রকাশ করতে চাইছেন না। এখনও অনেকে কেন্দ্রে লবিং করছেন। এ কারণে কমিটি জমা দেয়ার বিষয়টি কোনো নেতাই পরিষ্কার করে বলছেন না।’
চবি ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, ‘অনেক কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে সবকিছু প্রস্তুত। কমিটি নিয়ে শিগগিরই ক্যাম্পাসে ফিরব।’
চবি ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে দেয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই নেতার একজন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপসাংস্কৃতিক সম্পাদক শেখ নাজমুল আহমেদ।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কমিটি হলে আপনারা দেখতে পাবেন। কমিটি সেলে জমা পড়েছে কি না সেটা এখন বলা যাবে না। কমিটি প্রেসের মাধ্যমে জানতে পারবেন।
‘কমিটির কাজ চলছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই প্রকাশ হবে। দ্রুত সময়, দু-এক দিনের মধ্যেও হতে পারে।’
কমিটিতে পদসংখ্যা অনিশ্চিত
চবি ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি কত সদস্যের হবে, তা নিয়েও কৌতূহল রয়েছে নেতাকর্মীদের মধ্যে। প্রথম দিকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ২০১ সদস্যের কমিটি হবে বলে জানিয়েছিলেন নেতারা। পরে নেতাকর্মীরা জানান, এই সংখ্যা বাড়তেও পারে। ২৫১ সদস্যের হতে পারে।
পদের সংখ্যা নিয়ে মুখ খোলেননি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
চবি ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাউল বলেন, ‘যাদের আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে জায়গা দিতে পারব না, তাদের হল ও ফ্যাকাল্টি কমিটিতে পদ দেয়া হবে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি পেলে দ্রুত সময়ে হল ও ফ্যাকাল্টি কমিটি করা হবে।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের দুই সদস্যের কমিটি ঘোষণার প্রায় তিন বছর পার হয়েছে, এখনও হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি।
২০১৯ সালের ১৪ জুলাই রেজাউল হক রুবেলকে সভাপতি ও ইকবাল হোসেন টিপুকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় কমিটি। তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল।