ঠাকুরগাঁওয়ে অধিকাংশ বাড়ির উঠানে ও আশপাশের এলাকাজুড়ে দেখা মেলে অসংখ্য কাঁঠালগাছ। প্রতি বছরই গাছভর্তি কাঁঠাল হলেও এর ন্যায্য দাম পান না মালিকরা। তাই সস্তায় বিক্রি না করে বাধ্য হয়ে কাঁঠাল গবাদিপশুর খাবার হিসেবে ব্যবহার করেন।
অনেক সময় অযত্নে বেড়ে ওঠা কাঁঠাল পচে যায় গাছে। অনেকগুলো আবার পেকে গাছ থেকে খসে পড়ে নষ্ট হয়।
জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি বছরের মতো এবারও ব্যাপক ফলন হয়েছে কাঁঠালের। দফায় দফায় শিলাবৃষ্টি ও কালবৈশাখী আম, লিচুসহ অন্যান্য ফলের ওপর আঘাত হানলেও কাঁঠালের কোনো ক্ষতি হয়নি। তাই প্রায় সব গাছের ডালে ডালে ঝুলতে দেখা গেছে কাঁঠাল।
এ সময় কথা হয় হরিপুর উপজেলায় কাঁঠালডাঙ্গী গ্রামের ফরিদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার বাড়িতে কাঁঠালের ১০টি বড় গাছ। এ বছরও অনেক ফলন হয়েছে। ২০ দিনের মধ্যে পাকতে শুরু করবে। কিন্তু প্রতি বছরই দু-একটি খাওয়া হলেও অধিকাংশ পেকে, পড়ে নষ্ট হয়। সেগুলো পরে গবাদিপশুকে খাওয়াই।
‘পাইকাররা প্রতি কাঁঠালের দাম ৫ থেকে ১০ টাকা বলে। এবার ফলন আরও বেশি হওয়ায় দাম আরও কম বলবে। তাই কাঁঠাল বেচার চেয়ে গবাদিপশুকে খাওয়ানো ভালো।’
সদর উপজেলা মথুরাপুর এলাকার গৃহবধূ আনসুরা বেগম বলেন, ‘বাড়ির পাশে কাঁঠালগাছের পাতা সারা বছর ছাগলকে খাওয়ায়। পচা-ভালো সব কাঁঠালই ছাগল ও গরুকে খাওয়াই, তবে এর বিঁচি সংগ্রহ করি। এগুলো কয়েক মাস তরকারি হিসেবে খাওয়া যায়।’
একই গ্রামের নারী মমিনা খাতুন মনে করেন ঠাকুরগাঁওয়ে যে পরিমাণ কাঁঠাল উৎপাদন হয় তা অন্য কোনো জেলায় হয় না।
তিনি বলেন, ‘কাঁঠাল দেশের জাতীয় ফল। অথচ এর কোনো কদর নেই। সারা বছর ফলটি কীভাবে সংগ্রহ করা যায় বা আমের মতো গুরুত্ব পায়, সে উদ্যোগ নেয় না কৃষি বিভাগ।’
কৃষক আতাউর রহমান বলেন, ‘জেলার কাঁঠালের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ কাঁঠালে কোনো ঝুঁকি নেই। তবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে বছরজুড়ে মানুষ এর ন্যায্য দাম পাবে।’
গতবারের তুলনায় এ বছর কাঁঠালের আরও বাম্পার ফলন হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলার কাঁঠালের পাইকারি ব্যবসায়ী পয়গাম আলী। তিনি জানান, এ বছর এখনও কাঁঠাল কেনা শুরু হয়নি, তবে দু-একজন গাছ বা বাগান কিনে রাখছেন। ২০-২৫ দিনের মধ্যে কাঁঠাল কিনবেন ব্যবসায়ীরা।
গ্রাম ঘুরে ঘুরে বাড়ি ও বাগান থেকে সুলভ মূল্যে কাঁঠাল কেনেন ব্যবসায়ী পয়গাম। কিন্তু জেলায় চাহিদা না থাকায় সে কাঁঠাল পাঠান দক্ষিণাঞ্চলে। এতে গাড়ি ভাড়া অনেক বেশি খরচ হয়। অনেক সময় পথেই পচে যায় কাঁঠাল। এতে মোটা অঙ্কের লোকসান গুনতে হয় তাকে। অনেক ব্যবসায়ী লোকসানে পড়ে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন বলে জানান এ ব্যবসায়ী।
তিনি বলেন, ‘এ বছর কাঁঠাল আরও বেশি পচে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
ঠাকুরগাঁও ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, ‘জেলার অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুত করতে কাঁঠালে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। এই অঞ্চলে কাঁঠাল সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও গাছ মালিকরা কাঁঠালের ন্যায্য দাম পাবেন। তখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ হবে কাঁঠালের।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, জেলায় ২৫০ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের গাছ রয়েছে। তবে এর বেশিও হতে পারে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তা আবু হোসেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আবু হোসেন জানান, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও দিনাজপুরের কাঁঠাল সংরক্ষণবিষয়ক গবেষণা করছে বাংলাদেশ কৃষি ইনস্টিটিউটের ফল গবেষণা কেন্দ্র। কাঁঠাল দিয়ে কয়েকটি পণ্য উৎপাদন নিয়ে তারা গবেষণা করছেন, যেন কাঁঠালের পণ্যগুলো সারা বছর পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, ‘ঠাকুরগাঁও জেলায় প্রচুর পরিমাণে কাঁঠাল উৎপাদন হয়। এ অঞ্চলে কাঁঠাল সংরক্ষণ কেন্দ্র হলে অনেক কারখানা গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে।’