বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মাটির হাঁড়িতে পাখির বাসা

  •    
  • ২২ মে, ২০২২ ১৯:১২

কারমাইকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আমজাদ হোসেন বলেন, ‘বর্তমান ছয় শ একর জমির ওপর ক্যাম্পাসে হাজার হাজার গাছ রয়েছে। এসব গাছ রক্ষণাবেক্ষণ আমরা করি। এখানে গাছ-গাছালি থাকায় বিভিন্ন প্রজাতির পাখিরা বসবাস করে। পাখির নিরাপদ আশ্রয় এই ক্যাম্পাসে। এখানে সব ধরণের পাখি শিকার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।’

বেলা গড়িয়ে বিকেল, এরপর সন্ধ্যা। এই সময়টা নীড়ে ফেরা পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে সরব হয় চারপাশ। পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত ক্যাম্পাসটি হলো রংপুরের কারমাইকেল কলেজ। শহরের অদূরে সবুজ গাছ গাছালিতে ঘেরা ছয় শ একরের সবুজ শ্যামল প্রাচীন এই বিদ্যাপীঠ।

প্রায় ২৪ হাজার শিক্ষার্থী ছাড়াও প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী এ ক্যাম্পাসে আসেন পাখি আর প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে।

পাখিদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে একদল তরুণ-তরুণী। তারা সবাই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ’ এর সদস্য।

২০১২ সালে রংপুরে কাজ শুরু করে সংগঠনটি। বর্তমানে তাদের সদস্য সংখ্যা ২৫ জন।

পাখিদের আশ্রয় দিতে কারমাইকেল কলেজের গাছগুলোর নিরাপদ ডালে উঠে মাটির হাঁড়ি বেঁধে দিয়ে পাখির বাসা তৈরি করে দিয়েছেন তারা। ইতোমধ্যে অনেক পাখি আশ্রয় নিয়েছে এ হাঁড়িতে। পাখিরা বসছে, খেলা করছে, কিচিরমিচির শব্দ করছে।

ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশের সদস্য জান্নাত মোহনা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পাখিদের নিরাপদে আশ্রয় দেয়ার সতর্কতায় পাখি শিকার, বিক্রি ও হত্যা বন্ধে সচেতনতা তৈরিতে সাইনবোর্ড লাগিয়েছি। সেই সঙ্গে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইনও করেছি।

‘এ কাজে কেউ গাছের নিচ থেকে মই ধরেছিল, আবার কেউ মই বেয়ে গাছের মগডালে উঠে শক্ত রশি দিয়ে হাঁড়ি বেঁধেছে। আনন্দ নিয়েই কাজটি করছি আমরা।’

সংগঠনটির আরেক সদস্য সাদমান সাবাব বলেন, ‘আমি নিজেই গাছে উঠে গাছের ডালে শক্ত করে হাঁড়ি বেঁধে দিয়েছি। এ সময় আমার এক বন্ধু মই ধরে নিচে দাঁড়িয়েছিল। কাজটি করতে বেশ ভালো লেগেছে।’

তিনি বলেন, ‘পাখিরা গাছে আশ্রয় নেয়, গাছেই ডিম পাড়ে ও বাচ্চা ফোটায়। তাছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগে গাছে আশ্রিত পাখির ক্ষতি হয়ে থাকে। নিরাপদ আশ্রয় ও প্রয়োজনীয় খাদ্যের অভাবে প্রকৃতিতে পশু-পাখির সংখ্যা দিনে দিনে কমছে। এসব দিক বিবেচনা করে পাখির জন্য একটি নিরাপদ আবাসস্থল নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই এ কাজটি করেছি আমরা।’

ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ রংপুর টিম প্রধান নুসরাত ফারজানা ঐশী বলেন, ‘কলেজের বড় বড় গাছে মাটির হাঁড়ি বেঁধে দেয়া হয়েছে। মাটির হাঁড়িগুলোর ওপরের অংশ খোলা। এসব হাঁড়িতে বাসা তৈরি করবে পাখিগুলো। সেখানেই ডিম দিবে এবং বাচ্চা ফুটাবে। আমরা সবাই এমন স্বপ্নই দেখছি।’

প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে পাখিরা হারাচ্ছে তাদের আবাসস্থল। এ ছাড়া পাখি প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখে। এ ভাবনা থেকেই পাখির জন্য নিরাপদ আশ্রয় তৈরি ও তাদের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিত করতে সংগঠনটি গাছে গাছে পাখির বাসা হিসেবে মাটির হাঁড়ি বাঁধার এ উদ্যাগ।

কারমাইকেল কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক তানজেউর রহমান বলেন, ‘বিকেলে পাখির কিচিরমিচির ডাক যে কাউকে মুগ্ধ করবে। পুরো ক্যাম্পাসটিতে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ থাকায় এখানে পাখিরা আসে। নিরাপদে থাকতে পারে।’

কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী খাদিজা খাতুন বলেন, ‘আমরা পাখির ডাক শোনার জন্য বৃন্দাবসে বসি। বিকেলে গ্রুপ স্টাডি করি। সত্যিই খুব ভালো লাগে। এত বড় ক্যাম্পাসে মাঝে মাঝে পাখির ছুটাছুটি সত্যিই অসাধারণ দৃশ্য।’

রংপুরের বদরগঞ্জ থেকে আসা মুকিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বড় মেয়ে মুহাইমিয়া মুন এই কলেজে পড়ে। আমি প্রায়ই এই ক্যাম্পাসে আসি। বিকেলে কলেজের বাংলা বিভাগের সামনে বসলে মনটা জুড়ায়ে যায়। পাখির ডাক, কোকিলের ডাক মুগ্ধ করে আমাকে।’

কারমাইকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আমজাদ হোসেন বলেন, ‘বর্তমান ছয় শ একর জমির ওপর ক্যাম্পাসে হাজার হাজার গাছ রয়েছে। এসব গাছ রক্ষণাবেক্ষণ আমরা করি। এখানে গাছ-গাছালি থাকায় বিভিন্ন প্রজাতির পাখিরা বসবাস করে। পাখির নিরাপদ আশ্রয় এই ক্যাম্পাসে। এখানে সব ধরণের পাখি শিকার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।’

পাখি গবেষক অধ্যাপক ড.আবু সালেহ মোহাম্মদ ওয়াদুদুর রহমান (তুহিন ওয়াদুদ) নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই কলেজ ক্যাম্পাস থেকে আমি নিজ হাতে ৫০ প্রজাতির পাখির ছবি তুলেছি। এখানে অনেক বিরল প্রজাতির পাখি রয়েছে। এমন একটি উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।’

এ বিভাগের আরো খবর