বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাংলাদেশের পি কে হালদার, ভারতের নীরব মোদি

  •    
  • ২১ মে, ২০২২ ০৮:৪২

বাংলাদেশের পি কে হালদারের মতো হুবহু ঘটনা ভারতের নীরব মোদির ক্ষেত্রে। ভারতের পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংকের ১৩ হাজার ৫০০ কোটি রুপি জালিয়াতি করে ব্রিটেনে পালিয়ে গিয়ে সেখানে গ্রেপ্তার নীরব মোদিকে এখনও ভারতে ফেরানো সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশের পি কে হালদারের মতোই ভারতেরও রয়েছেন এক পি কে হালদার- তার নাম নীরব মোদি। ইনিও বিপুল অঙ্কের টাকা ব্যাংক জালিয়াতি করে ভারত ছেড়ে বিদেশে পালিয়েছেন। আর তাকেও ফিরিয়ে আনার জন্যে দেনদরবার করে যাচ্ছে ভারত।

বাংলাদেশের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা জালিয়াতি করে পি কে হালদার ও তার সহযোগীরা পালিয়ে আসেন ভারতে। বাংলাদেশ সরকারের অভিযোগের ভিত্তিতে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগর থেকে ১৪ মে শনিবার পি কে হালদারসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।

ওই দিনই তাদের কোর্টে তুললে ইডির আবেদন অনুযায়ী পি কে হালদারসহ পাঁচজনকে তিন দিনের হেফাজত এবং এক নারীকে জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয় আদালত।

পি কে হালদার বাংলাদেশে পলাতক আসামি। তার বিরুদ্ধে ঢাকায় অনেক মামলা। ভারতে ধরা পড়ার পর এখন বাংলাদেশ সরকার চায় তাকে বিচারের জন্যে ঢাকার হাতে তুলে দেয়া হোক। এর জন্য বন্দিবিনিময় প্রক্রিয়া চালু করতে হবে। পি কে হালদার অবৈধভাবে ভারতে পালিয়ে এসে ভারতের পরিচয়পত্র, ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, এমনকি পাসপোর্ট জাল করে ভারতে থাকা– এসব গুরুতর অপরাধ। এ জন্য ভারতের আদালতে পি কে হালদারদের বিচার হবে। শাস্তি হতে পারে । তারপর আসবে বাংলাদেশ সরকারের হাতে তাকে প্রত্যর্পণের প্রশ্ন। ফলে বাংলাদেশ পক্ষ তাকে সহসাই হাতে পাচ্ছে না।

হুবহু একই ঘটনা নীরব মোদির ক্ষেত্রে। ভারতের পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংকের ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা জালিয়াতি করে ব্রিটেনে পালিয়ে যাওয়া হীরক ব্যবসায়ী নীরব মোদিকে এখনও ভারতে ফেরানো সম্ভব হয়নি।

২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ভারতের পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক বা পিএনবির বিশাল আর্থিক জালিয়াতির ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। তখনই গোপনে দেশ ছেড়ে পালান নীরব মোদি। ইংল্যান্ডে গিয়ে ১৭ মাস আত্মগোপন করে থাকার পর নীরব মোদিকে ২০১৯ সালের মার্চে গ্রেপ্তার করে সে দেশের সরকার।

নীরব মোদির গ্রেপ্তারের ঘটনাকে বানানো ছক বলে আওয়াজ তুলেছিলেন বিজেপিবিরোধী রাজনীতিবিদরা। সে সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘নীরব মোদি একটা চাল। একটা গট আপ কেস। আসলি ছুপা রুস্তম নিকাল গায়া । নির্বাচন এসেছে, তাই আমরা নীরব মোদির স্ট্রাইক দেখলাম। আরও স্ট্রাইক দেখব। নির্বাচনের জন্য এইগুলো রাখা থাকে সিনেমার মতো। এমন স্ট্রাইক করবেন না যাতে দেশ পিছিয়ে যায়। এটা সরকারের কোনো ক্রেডিবিলিটি নয়। এক্সপায়ারি ডেট ওভার হয়ে গেছে, বিজেপি সরকারের।’

এদিকে গ্রেপ্তার হলেও নিজের স্বাস্থ্যের কারণ দেখিয়ে ভারতে প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে আদালতে আবেদন করেন নীরব মোদি। সেই মামলার শুনানি এখনও শুরু হয়নি। ফলে নীরব মোদিকে ভারতে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি এখনো ঝুলে আছে। ২০১৮ সালে সিবিআই তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর করার আগেই তারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।

নীরব মোদি আর মেহুল চক্সি মামা-ভাগনে। হংকংয়ে হিরে জহরত মণি-মুক্তার ব্যবসা রয়েছে তাদের। সেখান থেকে দেড় হাজার কোটি টাকার হিরে জহরত ২০২০ সালে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে বলে ভারতের তদন্তকারী সংস্থা ইডি দাবি করেছে।

২০২২ সালের এপ্রিল মাসে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন দুই দিনের ভারত সফরে আসেন । তখন কোটি কোটি টাকার ব্যাংক জালিয়াতির নায়ক নীরব মোদি এবং বিজয় মালিয়ার ভারতে প্রত্যর্পণের বিষয়টি তোলেন তিনি। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তখন বলেন, ‘কিছুটা আইনি জটিলতা আছে। তবে বিচারের জন্য ওদের ভারতের হাতে তুলে দিতেই চাই।’

এদিকে ভারতের রিজার্ভ ব্যাংকের সাম্প্রতিক রিপোর্টে জানানো হয়েছে, ব্যাংক জালিয়াতি ঘটনা প্রতি বছরই ঘটছে। গত সাত বছরে প্রদেশ হিসেবে ব্যাংক প্রতারণার শীর্ষে রয়েছে মহারাষ্ট্র। তারপর দিল্লি, তেলেঙ্গানা, গুজরাট, তামিলনাড়ু। আরবিআইয়ের রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, গত সাত বছর দৈনিক অন্তত ১০০ কোটি টাকার ব্যাংক জালিয়াতির শিকার হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো।

২০১৫ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো মোট আড়াই লাখ কোটি টাকার প্রতারণার শিকার হয়েছে। মোট জালিয়াতির ৮৩ শতাংশ উল্লিখিত পাঁচটি রাজ্যে সংঘটিত হয়েছে বলে ভারতের শীর্ষ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ব্যাংক জালিয়াতি বন্ধ করার কথা বললেও বাস্তব চিত্রের কোনো পরিবর্তন যে হয়নি, তা ভারতের শীর্ষ ব্যাংকের রিপোর্টে পরিষ্কার।

হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নিয়ে ভারত ছেড়ে পালিয়ে গেছেন নীরব মোদি, বিজয় মালিয়া, মেহুল চক্সিসহ বহু প্রতারক। বিজয় মালিয়া, নিরব মোদি, মেহুল চক্সির মোট প্রতারণার অঙ্ক ২২ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা বলে জানা গেছে।

ভারতের রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ করে বিজয় মালিয়া, নীরব মোদি ও মেহুল চক্সি বাড়ি-গাড়ি সম্পত্তি করে বহাল তবিয়তে আছেন বিদেশে। তবে বর্তমানে নীরব ব্রিটেনের জেলে রয়েছেন। মেহুল চক্সি আন্টিগায় পালিয়ে গিয়ে সেখানকার নাগরিকত্ব নিয়েছেন ।

কেন্দ্রের মোদি সরকার এসব জালিয়াতের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানালেও বিরোধীরা সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিরোধিতার সুর চড়িয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ‘দেখুন, এত বড় বড় সব দুর্নীতি তো আর একজন লোকের পক্ষে সম্ভব নয়। এর সঙ্গে বড় বড় মাথারা যুক্ত। অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি যুক্ত আছেন। না হলে এতসব আইন-কানুনের ফাঁক গলে কী করে এত বড় বড় দুর্নীতি সংঘটিত হতে পারল? বাংলাদেশের পি কে হালদার বা ভারতের নীরব মোদি তৈরি হওয়ার পেছনে সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের একাংশের দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া এর অন্যতম কারণ । সরকারের সদিচ্ছা না থাকলে এই ধরনের দুর্নীতি দমন সম্ভব নয়।’

এ বিভাগের আরো খবর