পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ করতে কোনো ধরনের চেষ্টার কথা নাকচ করেছেন ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম। তিনি বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে নিয়ে যে বক্তব্য রেখেছেন, সেটি তথ্যভিত্তিক নয়।
সরকারপ্রধান এ বিষয়ে অভিযোগ আনার পরদিন বৃহস্পতিবার ডেইলি স্টারের বাংলা ভার্সনে ‘মাহফুজ আনামের ব্যাখ্যা’ নামে তার বক্তব্য ছাপা হয়।
ডেইলি স্টার সম্পাদক বলেন, ‘আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই যে, আমি এ ধরনের উদ্দেশ্য নিয়ে কখনো যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাইনি, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যাইনি, কখনও হিলারি ক্লিনটনকে কোনো ই-মেইল পাঠাইনি, ওয়াশিংটনে বা বিশ্বের অন্য কোনো জায়গায় বা শহরে পদ্মা সেতুর অর্থায়নের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত কোনো বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কোনো ধরনের বৈঠক বা যোগাযোগ করিনি।
‘বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, আমার বিষয়ে করা মন্তব্য তথ্যভিত্তিক নয়।’
যা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী
১৯৮১ সালের ১৭ এপ্রিল শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের স্মরণে বুধবার আওয়ামী লীগ আলোচনা সভার আয়োজন করে। সেখানে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে অন্য অনেক বিষয়ের পাশাপাশি পদ্মা সেতু প্রসঙ্গ নিয়ে নানা বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি জানান, পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে বিশ্বব্যাংক যেন সরে যায়, সে জন্য ড. ইউনূস, ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক নানা সক্রিয় চেষ্টা চালিয়েছেন।
পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়ার শুরু থেকেই তুমুল আলোচনা হচ্ছে। প্রথমে সেতুর অর্থায়নের জন্য বাংলাদেশ যোগাযোগ করে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে। পাশাপাশি আইডিবি, এডিবি ও জাইকারও কিছু সহযোগিতা থাকার কথা ছিল।
তবে সেতুর পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির চেষ্টার অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক নানা বক্তব্য দেয়ার পর ২০১৩ সালে এই সেতু প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ায়।
শুরু থেকেই সরকার এই অভিযোগকে ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে আসছিল। দাতারা সেতু থেকে সরে যাওয়ার পর অভিযোগ করা হয়, সংস্থাটির এই সিদ্ধান্তের পেছনে ড. ইউনূসের হাত আছে।
গ্রামীণ ব্যাংক আইন অনুযায়ী ৬০ বছর বয়স হলেই তিনি এমডি পদের জন্য অযোগ্য হন। ইউনূসের বয়স ৭১ হওয়ার পর তাকে অপসারণ করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ, সে সময় তাকে এই পদে বহাল রাখতে নানা চাপ দেয়া হয়েছিল। সরকার রাজি না হওয়ায় পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বাতিল করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী সেদিন বলেন, ‘পদ্মা সেতুর অর্থ বন্ধ করাল ড. ইউনূস। কেন? গ্রামীণ ব্যাংকের একটা এমডির পদে তাকে থাকতে হবে। তাকে আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম, গ্রামীণ ব্যাংকের উপদেষ্টা হতে, ইমেরিটাস উপদেষ্টা হিসেবে থাকার জন্য, আরও উচ্চ মানের। কিন্তু সেখানে সে থাকবে না। তার এমডিই থাকতে হবে। কিন্তু তার বয়সে কুলায় না।
‘কিন্তু প্রতিহিংসা নেয় ড. ইউনূস এবং যেটা আমরা শুনেছি মাহফুজ আনাম। তারা আমেরিকায় চলে যায়, স্টেট ডিপার্টমেন্টে যায়। হিলারির কাছে ই-মেইল পাঠায়। বিশ্বব্যাংকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মিস্টার জোয়েলিক তার শেষ কর্মদিবসে কোনো বোর্ডসভায় না, পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়।’
প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ নিয়ে সেদিন মাহফুজ আনামের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কথা বলতে চাই না’।
বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগ কানাডার আদালতে নাকচ
পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগ নিয়ে সেতুর নির্মাণকাজে অনিশ্চয়তা দেখা দেয় শুরুতেই।
উড়ো খবরের সূত্রে দাতা সংস্থাটি সে সময় জানতে পেরেছিল, কানাডীয় কোম্পানি এস এম সি লাভালিন এই কাজ পেতে ঘুষ দেয়ার পরিকল্পনা করেছিল।
বিশ্বব্যাংক সে সময় বাংলাদেশের যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করার দাবি করেছিল। কিন্তু তার বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই জানিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন তা করতে রাজি হয়নি।
বিশ্বব্যাংক এ ঘটনায় একটি মামলা করে কানাডার একটি আদালতে। সেই মামলা বাংলাদেশের জন্য শাপেবর হয়েছে।
বাংলাদেশের ভাবমূর্তি রক্ষার আদেশ কানাডা থেকে আসার পর আর কেউ প্রশ্ন তোলার সুযোগই পায়নি।
রায়টি দেয়া হয় ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে। তবে গণমাধ্যমে রায় প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা ছিল এক মাস। আর ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে বিষয়টি নিয়ে জানাজানি হয়।
রায়ে অন্টারিও সুপ্রিম কোর্টের বিচারক ইয়ান নরডেইমার বলেন, বিশ্বব্যাংক যেসব তথ্য দিয়েছে সেগুলো ‘অনুমানভিত্তিক, গালগল্প ও গুজবের বেশি কিছু নয়।’