বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

এবারও কি ডুববে চট্টগ্রাম

  •    
  • ১৬ মে, ২০২২ ১১:২১

জুনের মাঝামাঝিতে শুরু বর্ষা মৌসুম। কিন্তু মে মাসে এসেও জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ৬৭ শতাংশ। প্রকল্পের ৩৬টি খাল সংস্কারের মধ্যে শেষ হয়েছে মাত্র ১০টি খালের কাজ। ফলে আসন্ন বর্ষাতেও চট্টগ্রাম শহর জলে ডোবার আশঙ্কা করছেন সবাই।

বর্ষা এলেই জলাবদ্ধতা নিয়ে শঙ্কায় থাকেন চট্টগ্রামবাসী। প্রতি বর্ষায় ভাসতে হয় এ নগরীর ৭৫ লাখ মানুষকে। এক দশকের এ মৌসুমি জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতে ২০১৭ সালে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ শুরু করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। প্রকল্পের মেয়াদ পেরিয়ে গেলেও মেলেনি মুক্তি।গত ৫ মে ঈদের তৃতীয় দিন সকালে ঘণ্টাখানেকের বৃষ্টিতে ডুবে যায় নগরীর দুই নম্বর গেট, বহদ্দারহাট, শুলকবহর ও হালিশহর এলাকা। বৈশাখের ক্ষণিক বৃষ্টিতেই হাঁটুপানি হয় এসব এলাকার অলিগলি ও প্রধান সড়কে। বর্ষা এলে পরিস্থিতি কী হবে, এটা তার আগাম বার্তা।

জুনের মাঝামাঝিতে শুরু বর্ষা মৌসুম। কিন্তু মে মাসে এসেও জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ৬৭ শতাংশ। প্রকল্পের ৩৬টি খাল সংস্কারের মধ্যে শেষ হয়েছে মাত্র ১০টি খালের কাজ। ফলে আসন্ন বর্ষাতেও জলে ডোবার শঙ্কা যে অমূলক নয় তা অনেকটাই নিশ্চিত। এর সঙ্গে দ্বিমত না করলেও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বলছে, গতবারের চেয়ে জলাবদ্ধতা এবার কিছুটা কম হবে।

চট্টগ্রাম জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের নির্মাণকাজ করছে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। প্রকল্পের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এবার জলাবদ্ধতা গতবারের চেয়ে কিছুটা কম হবে। ইতোমধ্যে ১০টি খালের সংস্কারকাজ শেষ হয়েছে। আরো আটটি খালের কাজও জুনের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করছি। বর্ষার আগেই প্রকল্পের খাল-নালাগুলোর মুখ থেকে মাটির বাঁধ সরিয়ে পানিপ্রবাহের পথ সচল করে দেওয়া হচ্ছে।’

সরেজমিনে গিয়ে শনিবার দেখা গেছে, প্রকল্প এলাকায় খাল ও নালায় এখনও মাটির স্তূপ ও বাঁধ। এ কারণে সরু পথ দিয়ে খালের পানি চলাচল করছে। কিছু কিছু জায়গায় পুরো খালই ভরাট হয়ে গেছে। নগরীর চাক্তাই রাজাখালী খালের মুখে স্লুইস গেট নির্মাণ করা হলেও খালের মাঝে ও দুই পাশের মাটি এখনও সরানো হয়নি। বহদ্দারহাট এলাকার মির্জাখালের বিভিন্ন পয়েন্টেও মাটির বাঁধ রয়ে গেছে।হালিশহরের আর্টিলারি ব্রিজের পাশে বয়ে যাওয়া খালের দুই পাশে প্রতিরোধ দেয়াল নির্মাণ করা হলেও খালের মাঝে মাটির স্তূপ পড়ে আছে। এমনটি হলে আসন্ন বর্ষায় খালগুলোর পাশের এলাকাগুলো জলজটে পড়বে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।নগরীর ষোলশহর এলাকার বাসিন্দা আবুল কাশেম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সারা বছর দেখি খালের কাজ করে। কিন্তু বর্ষা এলেই ভয়ে থাকি কোমর সমান পানি ডিঙিয়ে চলাচল করতে হয় কি না। ঈদের পর এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় তা সহজেই অনুমেয় যে এ বছরও জলাবদ্ধতার করুণ দশা থেকে আমাদের মুক্তি মিলছে না।’ এবার জলাবদ্ধতা হলে সিডিএর প্রকল্পকে দোষারোপ করে কোনো লাভ নেই জানিয়ে প্রকল্পের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ আলী বলেন, ‘চট্টগ্রাম শহরে মোট ৫৭টি খাল ও ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার নালা আছে। আমাদের প্রকল্পের অধীনে রয়েছে মাত্র ৩০২ কিলোমিটার নালা। বাকি ১ হাজার ২৯৮ কিলোমিটার নালা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাছে।

‘তারা যদি সেসব নালা পরিষ্কার না করে, তাহলে জলাবদ্ধতা দূর হবে না। এ ছাড়া আমরা ৩৬টি খালের কাজ করছি। বাকি ২১টি খাল চসিক পরিষ্কার করবে। শুধু প্রকল্প দিয়ে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা দূর হবে না।’ প্রকল্পের বর্তমান অবস্থার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের শুষ্ক মৌসুমে যেহেতু খালের কাজগুলো চলছিল, সেহেতু খালের মধ্যে মাটি ছিল, বাঁধ ছিল। এগুলো আমরা সব অপসারণ করে দিচ্ছি, যাতে পানিপ্রবাহে কোনো বাধা না থাকে। এ মাসের মধ্যে সব খালের বাঁধ অপসারণ হবে।

‘প্রকল্পের অধীনে টাইডাল রেগুলেটর আমাদের পাঁচটি– কলাবাগিচা, মরিয়ম বিবি, টেকপাড়া, ফিরিঙ্গিবাজার ও মহেশখাল। এর মধ্যে কলাবাগিচা ও মরিয়ম বিবি খালে রেগুলেটরের গেট স্থাপন হয়ে গেছে। টেকপাড়া ও ফিরিঙ্গিবাজারে চলতি সপ্তাহে গেট লাগানোর কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে। ফলে এই চারটি গেট মে মাসেই ফাংশনাল হবে আশা করি। মহেশখালে কিছু গেটের যন্ত্রপাতি নেদারল্যান্ডস থেকে এখনও আসেনি। সেটিও জুলাইতে শেষ হবে।’

সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জলাবদ্ধতার ভোগান্তি এ বছর কিছুটা কমবে বলে আশা করছি। স্লুইস গেটের কাজ শেষ হলে এবার আগ্রাবাদে মা ও শিশু হাসপাতালে পানি উঠবে না।’

জলাবদ্ধতা নিরসনের সঙ্গে অনেক ফ্যাক্টর জড়িত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না হলে জলাবদ্ধতা প্রকল্পের পুরোপুরি সফলতা পাওয়া যাবে না। খালে মানুষজন ময়লা-আর্বজনা ফেলে। ফলে খাল নালা খালি থাকে না। এ ছাড়া পাহাড় কাটার ফলে মাটি এসে খাল ভরাট হয়ে যায়। এসব ফ্যাক্টরের সমাধান করতে হবে।

‘শুধু প্রকল্পের কাজ শেষ করলেই হবে না। এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দক্ষ জনবল নিয়োগ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে। আমরা প্রকল্পের কাজ শেষ হলেই তাদের বুঝিয়ে দিব। এর আগেই তাদের ট্রেইন-আপ করতে চাই।’ জলাবদ্ধতার ব্যাপারে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী গত মার্চে চসিকের এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘এবার গলাসমান পানিতে ডুববে চট্টগ্রাম। বর্ষার আগে খাল ও নালা থেকে মাটির বাঁধ না সরালে জলাবদ্ধতায় নগরবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হবে।’মেয়রের কথার সঙ্গে সুর মিলিয়ে চসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ বছরও জলাবদ্ধতা কিছুটা থাকবে। যেহেতু এখনো সিডিএ-র প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। প্রকল্পের বাইরে নালাগুলো আমরা প্রতিনিয়ত পরিষ্কার করছি। নালার পানি ৩৬টি খাল দিয়েই যায়।

‘খাল যদি পানি টানতে না পারে, তাহলে জলাবদ্ধতা হবেই। প্রকল্পের বাইরে চসিকের অধীনে ২১টি খালের কথা বলা হলেও এসব খালের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া দুস্কর। তবে কাগজে-কলমে যেহেতু এসব খাল আছে, তাই এগুলো পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করছি।’এদিকে ১০টি খাল চসিক বুঝে নিবে কি না- এমন প্রশ্নে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘১০টি খাল সম্পন্ন হলেও আমরা পুরো প্রকল্প শেষ না হওয়া পর্যন্ত তা নিয়ম অনুযায়ী বুঝে নিতে পারি না। তারপরও দুই সংস্থার প্রধান আলাপ-আলোচনা করে বিকল্প কোনো সিদ্ধান্ত চাইলে নিতে পারেন।’বর্ষায় জনগণের ভোগান্তি আগের মতো হবে বলে আশঙ্কা করছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের আহ্বায়ক প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার।তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এবার যদি অতিবর্ষণ আর জোয়ার একসঙ্গে হয়, জনগণ অতীতের মতোই ভোগান্তি পোহাবে। ৩৬টি খালের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১০টি খালের কাজ শেষ হয়েছে। এগুলো জনগণের সঙ্গে উপহাস ছাড়া কিছুই না। খালগুলোতে এখনও প্রতিবন্ধকতা আছে। টাইডাল রেগুলেটরগুলোও রেডি না। গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, চারটির কাজ তারা শেষ করেছে। তাই যদি হয় তাহলে এগুলো অপারেট করার মতো জনবল কি নিয়োগ দিয়েছে?’

এ বিভাগের আরো খবর