বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বরাদ্দের চেয়ে কম খরচে ভবন নির্মাণ

  •    
  • ১৫ মে, ২০২২ ১৯:৩১

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ভবন নির্মাণে সরকার যত টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল, তার চেয়ে ৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা কম খরচ করে ১০ তলা ভবন নির্মাণ করেছে সংস্থাটি। বাকি সোয়া ৪ কোটির বেশি টাকা সরকারকে ফিরিয়ে দিয়েছে তারা।

সরকারি প্রকল্পে মেয়াদ আর বরাদ্দ বাড়ানো নিয়ে সমালোচনার মধ্যে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বরাদ্দের চেয়ে কম টাকায় কাজ করে বাকি টাকা ফিরিয়ে দিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছে।

কক্সবাজারে সরকারের মহাপরিকল্পনাকে ঘিরে ২০১৬ সালের যাত্রা শুরু করে সংস্থাটি। শুরুর দিকে প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী কার্যালয় ছিল না। চুক্তিভিত্তিক জনবল দিয়ে কাজ করানো হতো।

কর্তৃপক্ষের জন্য ১০ তলা স্থায়ী অফিস ভবন নির্মাণের জন্য সরকার ১১৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। কাজ শেষে বেঁচে যাওয়া ৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা সরকারকে ফেরত দেয় প্রতিষ্ঠানটি।

আগামী ১৮ মে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নবনির্মিত ভবনটি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এক কর্মকর্তা জানান, ২০১৭ সালের ২৭ মার্চ ভূমি বরাদ্দ কমিটির সভায় প্রতিষ্ঠানটির অফিস ভবন নির্মাণের জন্য ১ দশমিক ২১ একর জমি বরাদ্দ করা হয়। ১১৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বরাদ্দে ওই বছরের ৬ মে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী।

নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের ১৫ জুলাই। এর মধ্যে ২০২০ সালে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতিতে মেয়াদ বাড়ানোর পাশাপাশি আরও ২ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হয়। যা ২০২১ সালে এসে শেষ হয়।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা জানান, ভবনটির বেজমেন্ট গ্রাউন্ড ফ্লোর ২২ হাজার ২৫ স্কয়ার ফিট, গ্রাউন্ড ফ্লোর ১৬ হাজার স্কয়ার ফিট, প্রথম ফ্লোর ২০ হাজার ৮৮২ স্কয়ার ফিট, দ্বিতীয় ফ্লোর ১৬ হাজার ৭৭ স্কয়ার ফিট, তৃতীয় ফ্লোর ১৯ হাজার ৫৩১ স্কয়ার ফিটসহ মোট ১ লাখ ৯৩ হাজার ৮১ স্কয়ার ফিট।

এর মধ্যে রয়েছে মাল্টিপারপাস হল, ওয়াটার হারভেস্টিং, সোলার সিস্টেম, অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা, রেস্ট হাউস, ওয়াইজোন, রেস্টুরেন্ট সিসি ক্যামেরাসহ সব ধরনের অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা।

২০১৬ সালের ৬ জুলাই কক্সবাজারকে একটি আধুনিক ও পরিকল্পিত পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য জাতীয় সংসদ কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিল-২০১৫ পাস হয়। ২০১৬ সালের ১১ আগস্ট কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে ফোরকান আহমদকে নিয়োগ করে সরকার। এরপর ১৪ আগস্ট তিনি যোগদান করেন।

ফোরকান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভবনটি নির্মাণের সময় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী বদলি হয়েছেন। এতে নির্মাণ কাজে জটিলতা সৃষ্টি হয়নি। কাজের গুণগতমান এবং সব কর্মকর্তা আমাদের নজরদারিতে ছিল, এ কারণে অনিয়ম ঘটেনি, টাকাও সাশ্রয় হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেই ভিত্তিপ্রস্তর করে নিজেই উদ্বোধন করবেন, এটিই আমার বড় প্রাপ্তি।’

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘টাকা ফেরত দেয়াটা সত্যি প্রশংসার দাবি রাখে। তবে সড়ক প্রকল্পগুলোতে আরও সুপরিকল্পিত কাজ করা উচিত। যেমন প্রধান সড়ক প্রকল্প। সেখানে হয়তো পয়ঃনিষ্কানের ব্যবস্থা তেমন নেই। হয়তো একই কাজ আবার করতে হতে পারে। সে হিসেবে আরও অর্থ বাড়বে। ভবন নির্মাণের মতো এখানেও যদি পরিকল্পনা থাকে তাহলে সরকারের টাকা অপচয় হবে না।’

তিনি বলেন, ‘ভবনের চেয়ে নগর উন্নয়ন নিয়ে ভাবা উচিত। আশা রাখছি, প্রতিষ্ঠানটির নতুন মাস্টারপ্ল্যানে এসব বাস্তবায়ন হবে।’

কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের মুখপাত্র এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ভবন নির্মাণ শেষ হয়েছে। এখন কর্মকর্তা আরামে থাকবেন, কিন্তু সড়ক উন্নয়নের নামে প্রধান সড়কটি এখন ছোট খালে পরিণত। শুধু নিজেদের চিন্তা না করে জনগণের চিন্তাটা আগে করা উচিত ছিল।’

কী করতে যাচ্ছে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ

কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জানান, সমুদ্রসৈকতের ৭০ দশমিক ৬ একর জায়গাকে সংরক্ষিত অঞ্চল ঘোষণা করে সেটিকেই মহাপরিকল্পনার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে, যার গেজেটও হয়ে গেছে।

বিশাল এই সৈকতকে ছোট ছোট এলাকায় ভাগ করে আধুনিক করে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। আর বাঁকখালী নদীর চারপাশ হাতিরঝিলের আদলে তৈরি করা হবে। গড়ে তোলা হবে নতুন আধুনিক শহর। দেশি-বিদেশি পর্যটকরা যাতে আনন্দময় সময় কাটাতে পারেন, সে জন্য উন্নত দেশের সৈকত এলাকায় যে যে সুবিধা আছে, তার সবই কক্সবাজারে রাখা হবে।

তবে জনবলের সংকট নিয়ে আক্ষেপও করছেন তিনি। বলেন, ‘যেখানে আড়াই শতাধিক জনবল দরকার সেখানে বর্তমানে আছে অর্ধ-শতাধিক।’

কক্সবাজারের পরিকল্পিত উন্নয়নে নতুন করে আবারও ‘মাস্টার প্ল্যান’ তৈরির কাজ শুরু করেছে সংস্থাটি । এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯৪ কোটি টাকা, যা চূড়ান্ত করতে সময় লাগবে দুই বছর।

২০১৩ সালেও কক্সবাজারের উন্নয়নে আরও একটি ‘মাস্টারপ্ল্যান’ করা হয়েছিল। যা সরকার অনুমোদনও দিয়েছে। শহর ও সমুদ্রসৈকতের কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত এলাকা ঘিরে এই মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করেছিল নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরও।

তবে ২০১৩ সালে অনুমোদিত মাস্টারপ্ল্যানটি বাস্তবসম্মত নয় বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, ‘যারা প্ল্যান তৈরি করেছেন, তারা কেউ মাঠ পর্যায়ে কাজ করেননি। সম্ভবত ঢাকায় বসে প্ল্যান করা হয়েছে। ফলে প্ল্যানে একটি ১০ ফুটের রাস্তা ১০০ ফুট করার পরিকল্পনা দেয়া হয়েছে, যা করা সম্ভব নয়। ফলে নতুন করে মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করতে হচ্ছে।’

আবার শেলটেক নামের একটি বেসরকারি সংস্থা ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত চেষ্টা করে তৈরি করে কক্সবাজার পর্যটন এলাকার প্ল্যানটি। এটি বাস্তবতার নিরিখে অনেক গরমিল দেখা গেছে।

পৌরসভার টেকপাড়ার উকিলপাড়া এলাকাটি একটি আবাসিক এলাকা হলেও মাস্টারপ্ল্যানে একে দেখানো হয়েছে বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে। আবার শহরের পাহাড়তলির কচ্ছপিয়া পুকুরের পূর্ব এলাকাকে প্রাতিষ্ঠানিক এলাকা বলে মাস্টারপ্ল্যানে উল্লেখ করা হলেও বাস্তবে তা হচ্ছে একটি আবাসিক এলাকা।

কক্সবাজার সদর উপজেলার লাগোয়া উত্তর পাশের এলাকাটি আবাসিক এলাকা হিসেবে গড়ে উঠেছে। সেটিকেও মাস্টারপ্ল্যানে প্রাতিষ্ঠানিক এলাকা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ ছাড়া টেকনাফ-কক্সবাজার সড়কের সংযোগস্থল লিংক রোড এলাকাটি একটি বাণিজ্যিক এলাকা হলেও সেটিকে মাস্টারপ্ল্যানে উল্লেখ করা হয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক এলাকা হিসেবে। এসব কারণে নতুন করে মাস্টারপ্ল্যান করা জরুরি বলে মনে করে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।

আগের প্ল্যান ঢাকায় বসে করার কারণে বাস্তবসম্মত না হওয়ার কথা উল্লেখ করে ফোরকান আহমদ বলেন, ‘বাস্তবসম্মত এবং সবাইকে সঙ্গে নিয়ে মহাপরিকল্পনাটি করা হচ্ছে। যেখানে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় যুক্ত থাকবে। কোথায় আবাসিক এলাকা, কোথায় হাসপাতাল, মাকের্ট, কৃষি জমি, উন্মুক্ত স্থান, রাস্তা কত বড় হবে তা পরিষ্কারভাবে করা হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর