ভারত সরকারিভাবে গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, বেসরকারিভাবে রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। তারা রপ্তানি বন্ধ করলেও এতে বাংলাদেশের ওপর তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না।রোববার দুপুরে সিলেট সদর খাদ্যগুদাম পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন।রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরুর পর বাংলাদেশে গম আমদানির সবচেয়ে বড় উৎস হয়ে উঠেছিল ভারত। তবে দেশটি থেকে গত শুক্রবার গম রপ্তানি বন্ধ রয়েছে।
এমনিতে খাদ্যপণ্যে ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে ভারতের এই খবর ভোক্তাদের খরচ আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ভাত দেশের প্রধান খাবার হলেও গত কয়েক দশকে আটা-ময়দাতেও বেশ নির্ভরতা তৈরি হয়েছে। ময়দা নিয়ে বানানো খাবারের চলও এখন কম নয়।
দেশে বছরে চালের চাহিদা আড়াই কোটি টনের কিছু বেশি। উৎপাদন এর চেয়ে বেশিই হয় বলে তথ্য নিয়ে থাকে কৃষি বিভাগ।
অন্যদিকে গমের চাহিদা ৮৪-৮৫ লাখ টনের মতো। এর মধ্যে নিজস্ব উৎপাদন ১০ লাখ টনের বেশি নয়। বাকি ৭৪ থেকে ৮৫ লাখ মেট্রিক টন আমদানি করা হয়।
২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশে আমদানি হওয়া মোট গমের ৪৫ শতাংশ রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে, ২৩ শতাংশ কানাডা থেকে, ১৭ শতাংশ ভারত থেকে এবং বাকিটা অন্য কয়েকটি দেশ থেকে এসেছে।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে দেশ দুটি থেকে গম রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে ভারত থেকেও গম আসা বন্ধের খবরে তেতে ওঠার আশঙ্কা দেখা গিয়েছে এই বাজারও।
ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর পেঁয়াজের দর ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে ১০ দিন যেতে না যেতেই।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘গম আমাদের দেশে হয় না, বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। গম আমদানি করা হতো ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে। কিন্তু এ দুই দেশের যুদ্ধের সময়ে আমরা সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে তিন লাখ মেট্রিক টন গম আমদানি করেছি। পরবর্তী সময়ে যা দরকার তাও ভারত থেকে আমদানি করা হবে।’
মন্ত্রী কথা বলেন হাওরে ফসলহানি নিয়েও। তবে পানির ঢলে ফসলের যতটুকু ক্ষতি হয়েছে, তার খুব বেশি প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন না তিনি। বলেন, ‘সুনামগঞ্জে সম্প্রতি বোরো ফসলের কিছু ক্ষয়ক্ষতি হলেও চাষাবাদ হয়েছে অনেক বেশি। এ থেকে আমাদের ধান-চালের শক্তিশালী একটি মজুত গড়ে উঠবে। এ ছাড়া গত আউশ ও আমন ধানেরও আমাদের প্রচুর মজুত রয়েছে এবং বৃষ্টির কারণে আগামী আউশ ফসলও ভালো হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই দেশে কোনোভাবেই খাদ্যসংকট তৈরি হবে না।‘এক বছর থেকে আমরা বিদেশ থেকে কোনো চাল আমদানি করিনি। আমাদের কৃষকদের উৎপাদিত ধান দিয়েই চালের চাহিদা মিটছে।’
সিলেটে ধান-চাল সংরক্ষণের জন্য ২৫ হাজার মেট্রিক টন ধারণক্ষমতার একটি সাইলো বা বড় গুদাম নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
দুপুরে ফ্লাইটে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেন। সেখান থেকে সিলেট সদর খাদ্যগুদাম পরিদর্শনে যান। পরিদর্শন শেষে সিলেট সার্কিট হাউসে কিছু সময় অবস্থান করে তিনি সুনামগঞ্জের উদ্দেশে যাত্রা করেন।