সন্তানের বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় ছিলেন আশীতিপর প্রফুল্ল কুমার সাহা। পথে তার সঙ্গে কথাও বলেছেন ছেলে বাসুদেব সাহা। সেই ছেলে বাড়ি এসেছেন। তবে নিথর দেহে।
গোপালগঞ্জ শহরের উদয়ন রোডের বাড়ি থেকে মাত্র ১৭ কিলোমিটার দূরে এক দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে বারডেম হাসপাতালের চিকিৎসক বাসুদেব সাহার প্রাণ। ছেলের সঙ্গে পুত্রবধূ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া নাতিকেও হারিয়েছেন পৌরসভার সাবেক এই কমিশনার।
প্রফুল্ল কুমার সাহা বলেন, তার আট ছেলেমেয়ের মধ্যে বাসু তৃতীয়। বছর পাঁচেক আগে সে একবার বাড়ি এসেছিল। দীর্ঘদিন ধরে তার মা শিখা রানি সাহা বেশ অসুস্থ। তাকে দেখতেই শনিবার সকালে পরিবার নিয়ে রওনা হয় সে।
বলতে বলতে গলা ধরে আসে বাবা প্রফুল্ল কুমারের। কিছুটা সময় নিয়ে তিনি আবার বলতে শুরু করেন।
তিনি বলেন, ‘বাড়িতে আসার পথেও তার (বাসুর) সঙ্গে কথা হয়। তখন সে বলেছিল অল্প সময়ের মধ্যে সে চলে আসবে। কিন্তু ছেলে, পুত্রবধূ শিবানী সাহা ও নাতি স্বপ্নিল সাহা ফিরল লাশ হয়ে। তাদের মৃত্যুর খবর তার মাকে দেয়া হয়নি। এই শোক আমি সইব কী করে।’
সন্তানকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছেন বাবা প্রফুল্ল কুমার সাহা
চিকিৎসক ছেলের মৃত্যুর খবরে বাড়িতে ছুটে যান স্বজনরা। শনিবার সন্ধ্যার দিকে যখন তাদের লাশ বাড়িতে পৌঁছায়, তখন কান্নায় ভেঙে পড়েন সবাই। পুরো বাড়িতে তৈরি হয় এক শোকাবহ পরিবেশ।
ছোট ভাই লেলিন সাহা বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয়েছিল যখন তিনি ফেরিতে ছিলেন। কিন্তু আমরা বেলা ১১টার পর জানতে পারি তার দুর্ঘটনার খবর।’
কাঁদতে কাঁদতে ছোট বোন রাখি সাহা বলেন, ‘শুক্রবার রাতেও দাদার সঙ্গে কথা হয়। দাদা পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাড়িতে আসবেন। খুব খুশি ছিলেন। আমরা তার অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু এ কী হলো ভগবান।’
ব্যক্তিগত গাড়িতে রাজধানী থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে ফেসবুকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ফেরিতে দাঁড়ানো একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন বাসুদেব। তার মৃত্যুর খবরে সেই ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। নিজের আইডি থেকে ছবি শেয়ার করে এই মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন অনেকে।
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কারে বাসের ধাক্কায় শনিবার সকালে তিন দম্পতিসহ ৯ জন নিহত হন। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের কাশিয়ানী উপজেলার দক্ষিণ ফুকরা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো অন্যরা হলেন চিকিৎসক বাসুদেব সাহার ব্যক্তিগত গাড়ির চালক আজিজুর ইসলাম, কাশিয়ানী উপজেলার ফুকরা ইউনিয়নের দক্ষিণ ফুকরা গ্রামের ফিরোজ মোল্লা, তার স্ত্রী রুমা বেগম, একই গ্রামের অনীক বাবু ও অনীকের নববিবাহিত স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তার।