মামলা থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য নেতাকর্মীদের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে বলে মনে করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার দুপুরে দিনাজপুর শহরের ইনস্টিটিউট মাঠ প্রাঙ্গণে জেলা বিএনপির কাউন্সিলে প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দিনাজপুর সংগ্রামের জনপদ, এই অঞ্চলের মানুষ সংগ্রাম করতে জানে। তাই এই জেলায় প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পদচারণা ছিল। এমনকি তিনি নিজের জীবন সঙ্গিনী হিসেবে বেছে নিয়েছেন দিনাজপুরের কন্যা বেগম খালেদা জিয়াকে।
‘কিন্তু তিনি আজ মিথ্যা মামলায় গৃহবন্দি হয়ে আছেন। গণতন্ত্রের মাকে মিথ্যা মামলা থেকে বের করে আনতে আন্দোলনে বিএনপি নেতাকর্মীদের ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বাংলাদেশে খালেদা জিয়া ও তার পরিবার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন বলে বিদেশে প্রচার হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকার আজ প্রশাসনকে ধ্বংস করে দিয়েছে। সংবাদমাধ্যমকে দলীয়করণ করেছে এই সরকার।
‘জনগণ বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তার পুত্র তারেক রহমানের নেতৃত্বে এই দেশের গণতন্ত্র আবার ফিরে আসবে। এই সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। একই সঙ্গে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন করতে হবে। এ জন্য দরকার দুর্বার আন্দোলন।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনি শুক্রবার বলেছেন, যেসব নেতা হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি করে পাচার করেছেন তাদের আওয়ামী লীগে জায়গা হবে না। তাহলে আপনি নিজেই স্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা দুর্নীতি করে টাকা বিদেশে পাচার করেছেন।
‘আজ আপনাদের দুর্নীতির সীমা এতটাই বেড়ে গেছে যে র্যাবের মতো একটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্থগিতাদেশ দিয়েছে।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘দেশ একটা কঠিন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। ’৭১ সালে একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তির দেশের জন্য আমরা যুদ্ধ করেছিলাম। কিন্তু আজ আওয়ামী লীগের কার্যক্রম আমরা হতাশ হয়ে পড়ছি। আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার পক্ষের কথা বললেও বাস্তবে তারা স্বাধীনতাবিরোধী কাজ করছে।
দিনাজপুর জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রেজিনা ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক আসাদুল হাবিব দুলু, কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, রংপুর বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক, সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এ জেড এম রেজওয়ানুল হক, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আখতারুজ্জামান মিয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা মকছেদ আলী মঙ্গলিয়া, সম্মেলন ও কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব আনিসুর রহমান চৌধুরী, জেলা তাঁতীদলের আহ্বায়ক রেজাউল ইসলাম প্রমুখ।
জেলা বিএনপির কাউন্সিল
জেলা বিএনপির কাউন্সিলে সাতটি পদের বিপরীতে ১৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। জেলার ১৩টি উপজেলার ২০টি ইউনিটের ১ হাজার ৯১৯ জন কাউন্সিলর ও ডেলিগেট গোপন ব্যালটের মাধ্যমে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
২০১০ সালের ২৬ জানুয়ারি জেলা বিএনপির সর্বশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। তিন বছর মেয়াদি এই কমিটি পার করে ৬ বছর ৮ মাস। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২৯ আগস্ট ওই কমিটি ভেঙে দিয়ে সাবেক এমপি এ জেড এম রেজওয়ানুল হককে আহ্বায়ক, ১১ জনকে যুগ্ম আহ্বায়ক ও ১১৯ জনকে সদস্য করে মোট ১৩১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।
তিন মাসের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হওয়ার কথা থাকলেও ঐক্যমতের অভাবে ওই আহ্বায়ক কমিটি দিয়েই অতিবাহিত হয়েছে সাড়ে পাঁচ বছর। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জেলা বিএনপির কাউন্সিল করার বিষয়ে আবারও আলোচনা শুরু করে কেন্দ্রীয় বিএনপি।
এরই মধ্যে জেলা বিএনপির কাউন্সিলের জন্য একাধিকবার তারিখ ঘোষণা করা হলেও নানা কারণে সেই তারিখগুলোয় কাউন্সিল করতে পারেনি জেলা বিএনপি।