বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জুনে উদ্বোধন মাথায় রেখেই পদ্মা সেতুর কাজ

  •    
  • ১১ মে, ২০২২ ০৮:১৯

প্রকল্পের কাজ শেষের দিকে। জুন শেষ হওয়ার আগেই শেষ হবে পদ্মা সেতুর মূল কাজ। সেতুটি যান চলাচলের জন্য উপযুক্ত হবে। তবে সেতু কবে উদ্বোধন করা হবে তা ঠিক হবে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে।

সংযোগ সড়ক আগেই নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুতে শেষ স্প্যান বসেছে দেড় বছর হলো। এখন চলছে সেতুর ওপর সড়কে পিচ ঢালাইয়ের কাজ। চলতি মাসেই শেষ হবে পিচ ঢালাইসহ মূল সেতুর কাজ। অপেক্ষা শুধু কবে চালু হবে যানবাহন চলাচল।

আগামী জুন মাসের মধ্যে সেতুর কাজ শেষ করার লক্ষ্য ধরে সব কিছু এগিয়ে চলছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রকল্পের শুরু থেকেই সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ধরে সেতুর কাজ এগিয়েছে। প্রতিটি অংশের কাজ শেষ করার সুনির্দিষ্ট তারিখ ঠিক করা আছে। সে হিসাবে জুন শেষ হওয়ার আগেই শেষ হবে পদ্মা সেতুর মূল কাজ। সেতুটি যান চলাচলের জন্য উপযুক্ত হবে। তবে সেতু কবে উদ্বোধন হবে তা ঠিক হবে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। সবুজ সংকেত পেলে যেকোনো দিন খুলে দেয়া হবে এ সেতু।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পদ্মা সেতুতে শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে। সব কিছুই পরিকল্পনা মতো এগোচ্ছে। আগামী জুনকে ঘিরে আমাদের সব প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে, সব কাজও হচ্ছে।’

চলতি মাসেই শেষ হবে পিচ ঢালাইসহ মূল সেতুর কাজ। অপেক্ষা শুধু কবে চালু হবে যানবাহন চলাচল। ফাইল ছবি

আগে থেকেই সরকারের ঘোষণা রয়েছে, আগামী জুনে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে বহুল প্রতীক্ষিত এ সেতু। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের মূল সেতু ছাড়াও ৩ দশমিক ৬৮ কিলোমিটারের ভায়াডাক্ট বা সংযোগ সেতু মিলিয়ে পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার।

গত ২৮ মার্চ সেতুর সর্বশেষ অবস্থা ও কাজের অগ্রগতি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খোন্দকার আনোয়ারুল ইসলামসহ সেতু বিভাগ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা এতে অংশ নেন। পরে ৩০ মার্চ এক অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, আগামী ৩০ জুন পদ্মা সেতু চালু হবে।

৪ এপ্রিল সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রীর বরাতে বলা হয়, জুনেই পদ্মা সেতু উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

কিন্তু সেতুর উদ্বোধনের ক্ষণ নিয়ে নতুন আলোচনা আসে ৬ এপ্রিল জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যে। এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চলতি বছরের শেষ নাগাদ পদ্মা সেতু চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।’

প্রশ্ন ওঠে, তাহলে কি আরও ছয় মাস অপেক্ষা করতে হবে পদ্মা সেতুর জন্য?

যদিও পরদিন সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ বছরের শেষ নাগাদ পদ্মা সেতু চালু করতে পারব। তবে আমাদের অর্থবছর শেষ হবে জুন মাসে। আমরা বিশ্বাস করি, এর মধ্যে এটি চালু করতে পারব।’

তাই বছর শেষটা কি জুন নাকি ডিসেম্বর এ নিয়েই এখন যত আলোচনা।

৫ মে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আবারও জানান, এই জুনেই পদ্মা সেতু উদ্বোধন করা হবে। ঈদের পর নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘পদ্মা সেতু উদ্বোধনের তারিখ পেছানো হয়নি। আগামী জুনেই পদ্মা সেতু উদ্বোধন করা হবে।’

প্রকল্পের অগ্রগতি

পদ্মা সেতুর কাজ হয়েছে কয়েকটি ভাগে। মূল সেতু, নদী শাসন, সংযোগ সড়ক ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ, ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে মূল সেতুর নির্মাণ ও নদী শাসন কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এরপর ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে বসানো হয় প্রথম স্প্যান। এর মধ্যে মূল সেতু ও নদী শাসন ছাড়া সব কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। সংযোগ সড়ক খুলে দেয়া হয়েছে আরও আগে।

মূল সেতুসহ সব কাজ আগামী জুনের মধ্যে শেষ হলেও নদী শাসন কাজ শেষ হতে পারে বছরের শেষ নাগাদ, যদিও কাজ শেষ করার বিষয়ে সময় বেঁধে দেওয়া রয়েছে। তবে পদ্মা সেতু প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। এতে ঠিকাদারের দেনা-পাওনা বুঝিয়ে দেওয়া এবং সেতুতে কোনো সমস্যা হলে ঠিকাদার যাতে ঠিক করে দিতে পারেন, এ জন্য শেষ এক বছর রাখা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র বলছে, এপ্রিল শেষে পদ্মার মূল সেতুর কাজ শেষ হয়েছে ৯৮ শতাংশের বেশি। সব মিলিয়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৯৩ দশমিক ৫০ শতাংশ। ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকার এ প্রকল্পে এপ্রিল পর্যন্ত খরচ হয়েছে ২৭ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা। অর্থাৎ আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৯০ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আগামী জুনের মধ্যেই সেতুর কাজ শেষ হবে, তাই আগামী বছর এ প্রকল্পে বড় ধরনের বরাদ্দও রাখা হচ্ছে না বলে জানিয়েছে কমিশন।

২০০৭ সালে একনেকে পাস হওয়া পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় ছিল ১০ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। ২০১১ সালে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে দ্বিতীয় দফা সংশোধনের পর ব্যয় দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। বর্তমানে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। প্রকল্প শেষ হওয়ার আগে আরেক দফা প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করতে হবে।

প্রকল্প গ্রহণের আগে এক সমীক্ষায় বলা হয়, পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ হারে জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) বৃদ্ধি পাবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি বাড়বে অতিরিক্ত ২ দশমিক ৩ শতাংশ হারে। মোংলা বন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরের সঙ্গে রাজধানী এবং বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের ১৯টি জেলাকে সারা দেশের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করবে এ সেতু।

চূড়ান্ত হচ্ছে টোল হার

আগামী পাঁচ বছরের জন্য পদ্মা সেতুতে টোল আদায়, যানবাহন চলাচল ব্যবস্থাপনায় আধুনিক পদ্ধতি চালু এবং সেতু ও নদী শাসনের কাজ রক্ষণাবেক্ষণ করবে কোরিয়া এক্সপ্রেস করপোরেশন (কেইসি) ও চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি)। এ কাজে পাঁচ বছরে তাদের দিতে হবে ৬৯৩ কোটি টাকা।

দেশি অর্থায়ন হলেও পদ্মা সেতু প্রকল্পে ব্যয়ের টাকা সেতু কর্তৃপক্ষকে ঋণ হিসাবে দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ১ শতাংশ সুদসহ ৩৫ বছরে তা ফেরত দিতে হবে।

সরকার এরই মধ্যে যানবাহনের জন্য টোল হারও প্রায় চূড়ান্ত করেছে। এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে।

প্রস্তাব অনুসারে, যানবাহনের ধরন অনুসারে সর্বনিম্ন ১০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৬ হাজার টাকা টোল দিতে হবে। এর মধ্যে মোটরসাইকেলে ১০০ টাকা, কার ও জিপের টোল ৭৫০ টাকা, পিকআপে ১ হাজার ২০০ টাকা, মাইক্রোবাসে ১৩০০ টাকা, ছোট বাসে ১৪০০ টাকা, মাঝারি বাসে ২০০০ টাকা, বড় বাসে ২ হাজার ৪০০ টাকা, ৫ টন পর্যন্ত ছোট ট্রাকে ১৬০০ টাকা, ৫ থেকে ৮ টনের মাঝারি ট্রাকে ২১০০ টাকা, মাঝারি ট্রাকে (৮ থেকে ১১ টন) ২ হাজার ৮০০ টাকা, ছোট ট্রেইলার (তিন এক্সেল) ৫৫০০ টাকা এবং বড় মালবাহী ট্রেইলারের (চার এক্সেল) ৬ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।

এদিকে পদ্মা সেতুর বাইরে ঢাকার পোস্তগোলা বা বাবুবাজার থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ছয় লেনের এক্সপ্রেসওয়ের জন্যও টোল দিতে হবে। আগামী জুলাই থেকে এ সড়কে টোল বসার কথা রয়েছে। এতে একটি বাসে প্রতি কিলোমিটারে ৯ টাকা হারে টোল দিতে হবে। মাঝারি একটি ট্রাকের টোল হবে প্রতি কিলোমিটারে ১০ টাকা। ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ের দূরত্ব ৫৫ কিলোমিটার। সে হিসাবে প্রতিটি বাসে ৪৯৫ এবং ট্রাকে সাড়ে ৫০০ টাকা টোল দিতে হবে। তবে এ পথে তিন সেতুতে আলাদা টোল নেওয়া হবে না। তিনটি সেতুর জন্য একটি বড় বাসে গড়ে ২০০ টাকা টোল দিতে হয়।

এ বিভাগের আরো খবর