আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট হবে কি না, তা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি নির্বাচন কমিশন।
ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচি উপলক্ষে তথ্য সংগ্রহকারী ও সুপারভাইজারদের প্রশিক্ষণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে একথা জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
সিইসি বলেন, ‘১০০ আসনে ইভিএমে নির্বাচন করার সক্ষমতা আছে বলে সহকর্মীরা জানিয়েছেন। ৩০০ আসনের বিষয়ে কোনো রকম সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।
‘যেটা স্পষ্ট করে বলতে চাই, অনেকে অনেক ইচ্ছা ব্যক্ত করতে পারেন। তবে ইভিএমে ভোটগ্রহণের বিষয়ে এখনও পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারনি।’
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘ভোটগ্রহণ কীভাবে হবে, ইভিএমে কীভাবে হবে, ব্যালটে কীভাবে হবে, কতটা ইভিএমে আর কতটা ব্যালট হবে- এই ব্যাপারটায় কোনো সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। বিষয়টি পর্যালোচনাধীন।
‘ইতিমধ্যে অনেক সভা করেছি। আগামীতে দু-চারটি সভা হবে। পরে সিদ্ধান্ত হবে। যতদূর সম্ভব স্বাধীনভাবে আমরা ভোটের কার্যক্রম পরিচালনা করব। এটা আমাদের এখতিয়ারভুক্ত।
তিনি বলেন, ‘অনেকেই অনেক মতামত দিতে পারেন। রাজনৈতিক দলগুলো মতামত দিতে পারে। আলটিমেটলি আমরা পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব, ভোট গ্রহণের পদ্ধতির বিষয়ে।’
ভোটার হওয়ার জন্য মানুষের উৎসাহ আছে, তবে ভোটের মাঠে কেন মানুষ যায় না- এমন প্রশ্নে হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব ভোটার তালিকা প্রণয়ণ করা। যে প্রশ্নটা এসেছে সে বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না।’ইভিএমের ভোট আলোচনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সেটা নিয়ে পত্র-পত্রিকায় আসছে। আমাদের সহকর্মীরা আপনাদের জানিয়েছেন।
‘হয়ত আপনারা বলতে পারেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটা বক্তব্য দিয়েছেন। বিভিন্ন দল থেকে বক্তব্য আসতে পারে। আমি জানি না, এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন না, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেছেন স্পষ্ট না।’
নির্বাচন কমিশন সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর, আনিসুর রহমান। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, ১৪০ উপজেলায় ভোটার তালিকা হালনাগাদ শুরু করা হবে। ৭৬ হাজার প্রশিক্ষিত তথ্য সংগ্রহকারী এই কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত থাকবেন। ২০ মে থেকে শুরু হওয়া এই কার্যক্রম চলবে তিন সপ্তাহ।
এর বাইরেও অনলাইনে আবেদন করে ভোটার হতে পারবেন নাগরিকরা। এছাড়া রিভাইজিং অথরিটির কাছে আবেদন করেও ভোটার হওয়া যাবে। যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে যে কোনো নাগরিক ভোটার হতে পারবেন।
এর আগে কে এম নূরুল হুদা কমিশন ২০২১ সালে নতুন ভোটারের তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ নিলেও সেটি হয়নি। তথ্য সংগ্রহ বাড়ি বাড়ি হবে, নাকি নির্ধারিত কিছু কেন্দ্রে হবে সেই মতপার্থক্যের কারণে ওই উদ্যোগ আলোর মুখ দেখেনি।
এরপর ভোটার নিবন্ধনে ইসির মাঠপর্যায়ে নির্বাচন অফিসে গিয়ে অফলাইনে ও অনলাইনে পাওয়া আবেদন এবং ২০১৯ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংগ্রহের সময়ে ১৬ বছর বয়সীদের যে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল, তাদের তথ্য দিয়েই চলতি বছরের মার্চে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়। কিন্তু ২০১৯ সালের পর যারা আবেদন করেছেন, তাদের বেশির ভাগের আবেদন ঝুলে আছে।
নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে সংরক্ষিত তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৩২ লাখ ৮৭ হাজার ১০ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ৫ কোটি ৭৬ লাখ ৮৯ হাজার ৫২৯ জন আর নারী ৫ কোটি ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার ২৭ জন। ৪৫৪ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার।