কিশোরগঞ্জের সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজের টয়লেটে এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রোগীর সঙ্গে আসা সেই কিশোরীকে ঈদের দিন মঙ্গলবার রাতে ধর্ষণ করা হয় বলে বুধবার রাতে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় মামলা করেন তার বাবা।
১২ বছর বয়সী এই কিশোরীর বাড়ি জেলার করিমগঞ্জ উপজেলায়।
হাসপাতালের পরিচালক হাবিবুর রহমান নিউজবাংলাকে জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে এক যুবক মেয়েটিকে হাসপাতালের চারতলা থেকে নিচতলার একটি বাথরুমে নিয়ে ধর্ষণ করেন বলে তাদেরকে জানিয়েছেন কিশোরীটির বাবা।
তিনি বলেন, ‘নিচতলার এই জায়গাটা আউটডোর হওয়ায় রাতে তালাবদ্ধ থাকে। নিচতলা থেকে সরাসরি সেখানে প্রবেশ করার সুযোগ নেই। তবে উপর থেকে ফায়ার এক্সিটের একটি সিঁড়ি আছে, সেদিক দিয়ে প্রবেশ করা যায়।
‘খবর পেয়ে আমি হাসপাতাল গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। সিসিটিভির ফুটেজ দেখেছি। নিচতলার একটি ফুটেজে দেখা গেছে অভিযুক্ত যুবক মেয়েটিকে সিঁড়ির কোণায় নেয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু মেয়েটি জোরাজুরি করছে।’
যুবকের বয়স ২৫ হতে পারে বলে ধারণা করছেন হাবিবুর রহমান।
স্বজনরা জানান, কিশোরীটির মা হাসপাতালে ভর্তি আছেন। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে ডাক্তার যখন ওয়ার্ড পরিদর্শনে আসেন, তখন রোগীর সঙ্গে থাকা বাড়তি লোকজদেরকে ওয়ার্ড থেকে বের করে দেয়া হয়।
সে সময় ওয়ার্ডের বাইরে অপেক্ষারত অবস্থায় অপরিচিত এক যুবক সেই কিশোরীকে নিচ তলায় নিয়ে যায়। যুবকের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে কিশোরীটি দৌড়ে চলে আসার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে তাকে মুখ চেপে ধরে, ভয়ভীতি প্রদর্শন করে টয়লেটে নিয়ে যাওয়া হয়।
ওয়ার্ড থেকে চিকিৎসক বের হয়ে যাওয়ার পর মেয়েটির বাবা খোঁজাখুঁজি করেও তাকে না পেয়ে ছুটাছুটি করতে থাকেন। পরে তার সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে আসা লোকজনও খুঁজতে থাকেন। পরে মেয়েটির চিৎকারে নিচতলা থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়।
কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দাউদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হাসপাতালের সিসিটিভির ফুটেজ দেখে অভিযুক্তকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।’
এই ঘটনার পর হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও ব্যাপক সমালোচনা চলছে। বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীসহ ক্ষোভ ঝেড়েছেন অনেক। হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।
শাপলা আক্তার নামে একজন লেখেন, ‘আমিও একদিন কাজিনকে নিয়ে এই হাসপাতালে গিয়েছিলাম। হাসপাতালের কয়েকটি তলায় বেশ অন্ধকার। যে কোনো মেয়ে বা নারীর জন্য নিঃসন্দেহে এই অন্ধকার আর নীরবতা ঝুঁকিপূর্ণ।’
জাকিয়া বিনতে ইদ্রিস নামে একজন লেখেন, ‘দিনের পর পর দিন ওদের অত্যাচার সহ্য করে আসছি। পাশে র্যাবের অবস্থান । অথচ এলাকার সাধারণ মানুষ খুব ভয়ে দিনাতিপাত করে। ওদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেও কোনো ফলাফল পাওয়া যায় না। কারণ, ওদের ক্ষমতা। মেডিক্যালের একটা ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু এই এলাকায় এমন আরও অনেক ঘটনা ভুক্তভোগীর চোখের পানি দ্বারাই আড়াল হয়েছে।’
ফাহমিদা হক নীলা নামে একজন লেখেন, ‘দুই দিন এই হাসপাতালে ছিলাম, খুবই বাজে অবস্থা।
জোর খাটাতে চায় এলাকার কিছু লোকজন। সাধারণ জনগণ বেশ হয়রানি হয় স্থানীয়দের দ্বারা।’
সামিয়া পরশ নামে একজন লেখেন, ‘এই হাসপাতালে মেয়েদের কোনো সেইফটি নাই, না আছে কর্তৃপক্ষের সচেতনতা। হাসপাতালে কেউ দেখার জন্য গেলেও হ্যারেজ হতে হয়, বখাটেরা ওঁৎ পেতেই থাকে।’
রফিকুল ইসলাম নামে একজন লেখেন, ‘সৈয়দ নজরুল আমাদের কিশোরগঞ্জের অহংকার। তার নামের সম্মান করতে হলে অবশ্যই এসব কাজের বিচার করতে হবে। সর্বোচ্চ প্রযুক্তির ব্যবহার করে আসামি ধরতে হবে।’