বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শোলাকিয়া, গোর-এ শহীদে মানুষের ঢল

  •    
  • ৩ মে, ২০২২ ১৫:৫৪

২০২০ ও ২০২১ সালে করোনার কারণে ঈদগাহ ময়দানে ঈদের জামাত হয়নি। দুই বছর বিরতি শেষে এবার ঈদ জামাতের আয়োজনের প্রস্তুতিকালেই সবচেয়ে বড় জমায়েতের জন্য এক ধরনের প্রতিযোগিতা ছিল লক্ষণীয়।

করোনাকালের দুই বছর পর খোলা ময়দানে ঈদের জামাতে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ও দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ ময়দানে মুসল্লিদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে।

কোন ময়দানের জামাত বড় হয়, এ নিয়ে দুই জেলার মানুষের মধ্যে বিতর্কের শেষ নেই। কিশোরগঞ্জবাসী মানতেই নারাজ যে দিনাজপুরের জামাত বড় হয়, তবে দিনাজপুরের জামাত থেকে ২০১৯ সালের মতোই ঘোষণা দেয়া হয়েছে ছয় লাখের জমায়েতের কথা।

২০২০ ও ২০২১ সালে করোনার কারণে ঈদগাহ ময়দানে ঈদের জামাত হয়নি। দুই বছর বিরতি শেষে এবার ঈদ জামাতের আয়োজনের প্রস্তুতিকালেই সবচেয়ে বড় জমায়েতের জন্য এক ধরনের প্রতিযোগিতা ছিল লক্ষণীয়।

কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় এবার জামাত হয়েছে ১৯৫তম। এর প্রতিটিই বরাবরের মতো বিশাল হয়েছে।

অন্যদিকে শোলাকিয়াকে টেক্কা দিতে গোর-এ শহীদের প্রস্তুতি ২০১৭ সাল থেকে শুরু। ২০১৯ সালে এসে আয়োজক কমিটি ঘোষণা দেয়, তাদের জামাত দেশের বৃহত্তম।

শোলাকিয়া ও গোর-এ শহীদের ময়দান- দুটোই আয়তনে বিশাল। তবে তাতেও সব মুসল্লিকে ধারণ করতে পারে না। দুই ময়দান ছাপিয়েই হাজার হাজার মানুষ নামাজ পড়েছেন লাগোয়া ফাঁকা জায়গা বা মাঠ এবং সড়কে।

মুষলধারে বৃষ্টিতে ছোট হয়নি শোলাকিয়ার জামাত

সকাল ১০টায় জামাত শুরু হওয়ার কথা থাকলেও কিশোরগঞ্জে বিখ্যাত হয়ে ওঠা ময়দানে দূরদূরান্ত থেকে আসা মুসল্লিরা ফজরের আমাজের আগে থেকেই মাঠে চলে আসতে থাকেন। ঈদগাহ জামে মসজিদে নামাজ পড়েন মাঠেই।

তবে সকাল ৭টা থেকেই শুরু হয় মূল স্রোত। একপর্যায়ে মাঠ ছাপিয়ে পাশের ময়দান, মূল সড়ক ও আশপাশের মসজিদে গিয়ে ছড়ায়।

২৬৫টি সারি হয়। প্রতিটি সারিতে প্রায় ৫০০ করে মুসল্লি দাঁড়াতে পারেন। সব মিলিয়ে শুধু মাঠের ভেতরেই প্রায় ১ লাখ ৩২ হাজার ৫০০ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন।

তবে এই মাঠই জামাতের শেষ কথা নয়। পাশের বিশাল আয়তনের আরেকটি মাঠ এবং কিলোমিটার দুয়েক রাস্তাতেও থাকে মুসল্লিদের ভিড়। এই হিসাবে জামাতে অংশগ্রহণকারী মানুষের সংখ্যা চার লাখের কম হবে না বলে ধারণা করছেন আয়োজক কমিটি।

সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শুরু হয় বজ্রপাত আর মুষলধারে বৃষ্টি। তার পরও কেউ মাঠ ত্যাগ করেননি। বজ্রপাত আর মুষলধারে বৃষ্টির ফলে বৈদ্যুতিক লাইনে সমস্যা সৃষ্টি হলে কিছুক্ষণের জন্য মাইকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে ইমামের সঙ্গে মুসল্লিরা মোকাব্বিরের ভূমিকায় তাকবির দিতে থাকেন।

ঈদুল ফিতরের জন্য নির্ধারিত ইমাম মাওলানা ফরিদউদ্দিন মাসউদ অসুস্থতার কারণে আসতে পারেননি। তার বিকল্প ইমাম মাওলানা শোয়াইব বিন আব্দুর রউফ ইমামতি করেন। তিনি কিশোরগঞ্জ শহরের বড়বাজার শাহাবুদ্দীন জামে মসজিদের খতিব।

নামাজ শেষে দেশ ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া করা হয়। এ ছাড়া মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা এবং দেশের কল্যাণে আরও বেশি অবদান রাখতে দোয়া করা হয়।

এই মাঠে নামাজ পড়তে এসেছেন জয়পুরহাট জেলার বাসিন্দা সোলাইমান হোসেনও। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই মাঠে নামাজ আদায় করার ইচ্ছে বহু দিন আগে থেকেই। করোনা মহামারি শুরু হওয়ার আগে একবার এই মাঠে নামাজ আদায় করার সুযোগ হয়েছিল। কিন্তু দুই বছর ধরে করোনা মহামারির কারণে এই মাঠে নামাজ আদায় করার সুযোগ হয়নি।’

তিনি বলেন, একটু বেশি আগ্রহ নিয়ে দুই দিন আগেই চলে এসেছি। এই মাঠ আর পুরো শহর ঘুরে দেখেছি। আজ নামাজ শুরু হওয়ার আগেই মুষলধারে বৃষ্টি আর বজ্রপাত শুরু হয়েছে। কিন্তু মাঠ ত্যাগ করার ইচ্ছে হয়নি। বৃষ্টিতে ভিজেই নামাজ আদায় করেছি।’

আপনার বাড়ি জয়পুরহাট, সেখান থেকে দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ তো কাছে। কাছে তার পরও কিশোরগঞ্জে এসেছেন কেন?- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ি থেকে দিনাজপুর ১০০ কিলোমিটার আর কিশোরগঞ্জ ৩০০ কিলোমিটারের বেশি। তার পরও এখানে আসার মূল কারণ হচ্ছে এই মাঠে এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় জামাত হয়। এ ছাড়া এই মাঠের ঐতিহ্য আছে।’

মুন্সীগঞ্জের বাসিন্দা সারোয়ার জাহানও এসেছিলেন শোলাকিয়ায়। এবারই প্রথম নয়। তার বয়স ৪৫ বছর। তার মধ্যে ২৫ বছর থেকেই এই মাঠে নামাজ করে আসছেন। শুরুটা হয়েছিল বাবার হাত ধরে।

তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারির কারণে এই মাঠে নামাজ অনুষ্ঠিত হয়নি। তার পরও আমি এসেছিলাম শুধু মাঠটি দেখার জন্য। বৃষ্টিতে ভিজে কাঁদামাটিতে বসে নামাজ আদায় করেও মনে আনন্দ পেয়েছি।’

মাঠের পাশে দোকানি জালাল উদ্দিন বলেন, ‘দুই বছর পর এবার আবারও দূরদূরান্ত থেকে লোকজন এসেছেন। গতকাল থেকেই আমার দোকানে ভিড় বেড়েছে।’

গোর-এ শহীদের মাঠ ছাপিয়ে ভিড় পাশের মাঠে

দিনাজপুরের এই ময়দানে সকাল ৭টার পর থেকে মুসল্লিরা আসতে থাকেন। কেবল শহরের মুসল্লিরা নয়, জেলার ১৩টি উপজেলা থেকে বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকে নামাজ পড়তে আসেন তারা।

সকাল সাড়ে ৮টা বাজতেই গোর-এ শহীদ বড় ময়দান পরিপূর্ণ হয়ে পড়ে। মাঠে নামাজ পড়ার জন্য দুই শতাধিক কাতারে মুসল্লিরা দাঁড়িয়ে যান। একেকটি কাতারে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ হিসাবে মাঠেই নামাজ পড়েন আড়াই লাখের মতো মানুষ।

তবে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সামনের সড়ক ও গোর-এ শহীদ বড় ময়দানের পাশে অবস্থিত আরেকটি মাঠেও মুসল্লিরা কাতারে দাঁড়িয়ে পড়েন। সেই মাঠটিতে অর্ধেক যানবাহন ও অর্ধেক মুসল্লি অবস্থান করেন।

টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, যশোর, গাইবান্ধা, নীলফামারী, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, কুড়িগ্রামসহ বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসল্লিরা এসেছেন নামাজ পড়তে।

টাঙ্গাইল জেলা থেকে নামাজ পড়তে গোর-এ শহীদ বড় ময়দানে এসেছেন শফিউর রহমান বাচ্চু। তিনি বলেন, ‘আমি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ছিলাম। এই মাঠের নাম অনেক শুনেছি। তাই এই মাঠে নামাজ পড়তে গতকাল রাতে দিনাজপুরে আসছি। এখানে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের রেস্ট হাউসে রাত্রি যাপন করে নামাজ পড়তে আসছি। লাখ লাখ মুসল্লির সঙ্গে নামাজ পড়ে অনেক খুশি লাগছে।’

সিরাজগঞ্জ থেকে এসেছেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ‘আমি দেশের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় ঈদের নামাজে অংশ নিয়েছি। কিন্তু দিনাজপুরের ঈদের নামাজটা অনেক বড় মনে হলো। এত পরিমাণ লোক এখানে আসছে এবং তাদের সঙ্গে নামাজ পড়তে পেরে অনেক ভালো লাগছে।’

বিশাল নামাজে ইমামতি করেছেন মওলানা শামসুল হক কাসেমী।

নামাজ শেষে জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম বলেন, ‘একসঙ্গে এই মাঠে ছয় লক্ষাধিক মুসল্লি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নামাজ আদায় করেছেন। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।’

ঈদের নামাজে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে চার স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। ৬৫৯জন অস্ত্রধারী পুলিশ সদস্য মাঠে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করেছেন।

এ ছাড়া পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, ডিবি, ডিএসবি, এনএসআই, ডিজিএফআই সদস্যরা সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করেছেন।

২০১৫ সালে বড় ঈদগাহ মিনার নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ছয়টি ঈদের জামাত হয়েছিল।

এ বিভাগের আরো খবর