বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কেমন আছেন অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে নিখোঁজদের স্বজনরা

  •    
  • ১ মে, ২০২২ ২০:৩৩

বরগুনা সদর উপজেলার মোল্লাহোরা গ্রামের সুমন সরদার লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তার স্ত্রী তাসলিমা, দুই মেয়ে সুমাইয়া আক্তার ও সুমনা আক্তার নিখোঁজ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বউ, মাইয়্যার কোনো খোঁজ পাই নাই। মুই ঈদ দিয়া কী হরমু। মোর বউ, মাইয়ায় কি ওইহানে কয়বরে আছে, তাইলে কন মুই এট্টু কয়বরডা দেইখ্যা আই।’

ঢাকা থেকে বরগুনাগামী অভিযান-১০ লঞ্চ গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর ঝালকাঠির সুগন্ধ্যা নদীতে পৌঁছালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ৫০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া নিখোঁজ হন আরও অনেকে।

সেই ঘটনার চার মাস পর এসেছে ঈদ। তবে খুশির পরিবর্তে স্বজন হারানোর কষ্ট এখনও তাড়া করছে অনেককে।

লঞ্চ দুর্ঘটনায় স্বজন হারানো কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়েছে নিউজবাংলার।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বাবা-মা, ভাই হারান হাফসা। তার বয়স ১৮ বছর।

তার বাবা বরগুনা সদর উপজেলা বুড়িরচর ইউনিয়নের হাকিম শরীফ, তার মা পাখী বেগম ও ভাই নাসরুল্লাহ।

হাফসার আরও দুই ভাই-বোন রয়েছে। সুমাইয়া আক্তার ও ফজলুল হক। তাদের বয়স যথাত্রুমে ১৪ ও ১০ বছর। তারা সবাই অভিভাবকহীন।

হাফসা বলেন, ‘পেরতেক (প্রতি) ঈদে আব্বায় ঢাকাইদ্দা (ঢাকা থেকে) মোগো তিন ভাই-বুইনের লই ঈদের জন্য নতুন জামাকাপুর কিন্না লইয়া বাড়তে আইত। এইবার ঈদ আইয়া পড়ছে। মোর আব্বায় আর বাড়তে আয় না। ছোড ভাইডায় কয়, আফা আব্বায় বাড়ি আইবে না? মোগো জামা-কাফুর কিন্না দেবে কেডা। মুই কী উত্তর দিমু, মোগো এহন তিন ভাইবুইনের ভাতই জোডে না, ঈদ করমু কিদ্দা।

‘মোর বাপ-মা, ভাইর লাশটারও কোনো খোঁজ এহনো পাইলাম না।’

সম্প্রতি প্রকাশিত মাধ্যমিকের ফলাফলে জিপিএ-৫ পেয়েছে হাফসা। তার কাঁধে এখন ছোট দুই ভাই-বোনের দায়িত্ব।

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানী ইউনিয়নে ছোট টেংরা গ্রামের আফজাল হোসেনের মেয়ে ফজিলা আক্তার পপির এখনও খোঁজ মেলেনি। পপির মেয়ে লামিয়া, তার নানা আফজাল হোসেনের কাছে রয়েছেন এক মাস থেকে।

আফজাল বলেন, ‘প্রত্যেক ঈদে তার মা ওর জন্য জামা, খেলনা নিয়া বাড়িতে আইস্যা ঈদ কইর‌্যা যায়। এইবার রোজার শুরু হইতেই নাতি জিগায়, নানু মোর মায় কি আর আইবে না, মোরে ঈদের নতুন জামা গায়ে ঘুরাইতে নেবে না। ওরে মুই জামাকফুর কিন্না দিছি। কিন্তু ওর মায়ের অভাব কেমনে দূর করমু।’

বরগুনা সদর উপজেলার মোল্লাহোরা গ্রামের সুমন সরদার লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তার স্ত্রী তাসলিমা, দুই মেয়ে সুমাইয়া আক্তার ও সুমনা আক্তার নিখোঁজ হয়েছে। স্ত্রী-সন্তানদের হারিয়ে সুমন এখনও স্বাভাবিক হতে পারেননি।

তিনি বলেন, ‘বউ, মাইয়্যার কোনো খোঁজ পাই নাই। মুই ঈদ দিয়া কী হরমু। মোর বউ, মাইয়ায় কি ওইহানে কয়বরে আছে, তাইলে কন মুই এট্টু কয়বরডা দেইখ্যা আই।’

বরগুনার তালতলী উপজেলার ছোটবগী গ্রামের বাবুলের মা রেখা বেগম। তার দুই বছরের নাতি জুনায়েদের খোঁজ মেলেনি। জুনায়েদ ও রেখা বেগমকে হারানোর শোক কাটাতে পারেননি বাবুল।

তিনি বলেন, ‘মোর মা আর নাতিডারে পাই নায়। ওগো কোমমে পামু হ্যাও মুই জানি না। ঈদ দিয়া কী হরমু কন, মোর আর কি ঈদ আছে। ও আল্লাহ, মোর মায়েরে আর নাতিডারে ফিরাইয়া দ্যাও।’

বামনা উপজেলার বুকাবুনিয়া গ্রামের উত্তম হালদাদের ছেলে কৃষ্ণ হালদার ঢাকার উত্তরার একটি স্কুলের নবম শ্রেণিতে পড়ত। কৃষ্ণ হালদারের মা গীতা রানি ও ছোট ভাই প্রত্যয়কে নিয়ে বামনার গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিল। দুর্ঘটনার পর গীতা রানি প্রত্যয়কে নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দেন। তারা তীরে উঠতে সক্ষম হলেও কৃষ্ণ নিখোঁজ। কৃষ্ণ হালদারের সন্ধান তারা পাননি।

বরগুনা জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, সুগন্ধ্যা ট্র্যাজেডিতে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৫০ জন। এর মধ্যে ২৪ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ৪১ জনের লাশ উদ্ধার হয় ও চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ছয়জন মারা যান। জানুয়ারির ২ ও ৩ তারিখে ঢাকায় চিকিৎসাধীন দগ্ধ দুজন ও সর্বশেষ গত ২১ জানুয়ারির শেষ ও ফেব্রয়ারির শুরুতে এক নারী ও তার স্বামী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন মারা যান। নিহতদের মধ্যে শনাক্ত না হওয়ায় ২৩ জনকে বরগুনায় ও একজনকে ঝালকাঠিসহ ২৪ জনকে দাফন করে জেলা প্রশাসন। বাকি ২৬ জনের মরদেহ শনাক্ত করে নিয়ে যান স্বজনরা।

ঘটনার পর বরগুনা জেলা প্রশাসন নিখোঁজ ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করে। ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত জেলা প্রশাসন ৩২ জন নিখোঁজ থাকার তথ্য দিয়েছে।

২৭ ডিসেম্বর সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ নিখোঁজ ৩২ জনের বিপরীতে তাদের ৫১ জন স্বজনের ডিএনএনের নমুনা সংগ্রহ করেছে।

বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শনাক্ত হওয়া মৃতদের স্বজনদের আমরা প্রাথমিকভাবে ২৫ হাজার করে টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়েছি। আমরা ডিএনএ পরীক্ষার নমুনা পেলেই ঠিক কতজন নিখোঁজ আছেন, এটা শনাক্ত ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারগুলোকে চিহ্নিত করতে পারব। এরপর সোশ্যাল সেফটি নেটের আওতায় বিশেষভাবে তাদের সহায়তার আওতায় আনা হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর