কিশোরগঞ্জের ইটনা সদর ইউনিয়নের বলদা ফেরিঘাট পার হয়ে বলদা হাওরে পা রাখতেই হাতের ডান দিকে চোখে পড়বে একটি স্লুইস গেট। তিন-চার বছর আগে নির্মাণ করা এই স্লুইস গেটের এখন কোনো গেটও নেই। পাশ থেকে মাটিও ক্ষয়ে গেছে। তাই স্লুইস গেটের ভেতর কিংবা এর আশপাশ দিয়ে পানির আসা-যাওয়ায় কোনো বাধা নেই।
স্লুইস গেটটিতে পানি আটকানোর যে গেট থাকার কথা তা ক্ষয়ে গেছে অনেক আগেই। তাই পানি আটকানোর জন্য গেটের মুখেই কেউ মাটি ভরাট করে রেখেছে। এ অবস্থায় যে খালের পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের জন্য এটি নির্মাণ করা হয়েছিল, সেই খালটি বর্তমানে গেটের ভেতর দিয়ে না গিয়ে গতিপথ বদল করে এর পাশ দিয়েই বয়ে গেছে।
ক্ষয়ে গেছে পানি আটকানার গেটগুলো
স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, এই স্লুইস গেটটি নির্মাণ করার পর তাদের কোনো কাজে আসেনি। এ ছাড়া এই স্লুইস গেট কে নির্মাণ করেছে কিংবা এর দেখভালের দায়িত্ব কার সেটাও জানেন না তারা।
স্লুইস গেটের পাশেই দেখা হয় কৃষক কামরুল ইসলামের সঙ্গে। বলদা হাওরে সাত একর জমি করেছেন তিনি। তিনি জানান, তিন-চার বছর আগে নির্মাণের পর এটিকে কেউ দেখতেও আসেননি। তাই এর কোনো সংস্কারও হয়নি। পাশের খালটিও ভরাট করতে কেউ আসেননি। কৃষকরা অবশ্য নিজ উদ্যোগে জমির ফসল রক্ষার্থে স্লুইস গেটের ৩০ গজ সামনে একটি বাঁধ তৈরি করেন প্রতি বছর।
কামরুল ইসলাম বলেন, ‘এটা নামে স্লুইস গেট, কোনো কামের না।’
একই হাওরের হালুয়া খালের পাড়ে তিন একর জমি চাষ করেছেন বানিয়াহাটির কৃষক বোরহান উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘এই স্লুইচ গেট নির্মাণের সময় আমরা ভেবেছিলাম এদিক দিয়ে হাওরে পানি ঢোকার আর সুযোগ নেই। কিন্তু এখন দেখছি তার উল্টোটা। এর গেট নষ্ট হয়ে পড়ে আছে কেউ কোনো খোঁজখবরও নেয় না। সংস্কারও করে না। আবার এর পাশ দিয়ে যে খালটি চলে গেছে সেটি ভরাট করারও কেউ নেই।’
এই হাওরের জিরাতি কৃষক আব্দুল কাদির স্লুইস গেটটিকে বেওয়ারিশ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘এই স্লুইস গেটের কোনো মা-বাপ নেই।’
খালের পানি এখন স্লুইচ গেটের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে
সরেজমিনে দেখা গেছে, উজান থেকে নেমে আসা পানি স্লুইস গেটের পাশ দিয়েই ধীরে ধীরে প্রবেশ করছে। তবে সেই পানিকে আটকে দিয়েছে ৩০ গজ সামনে কৃষকদের নিজ উদ্যোগে বাঁধ নির্মাণ করা নতুন বাঁধটি।
এই স্লুইস গেটের বিষয়ে খোঁজ নিতে ইটনা এলজিইডি অফিসে গেলে সেখানকার উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, এটি তারা নির্মাণ করেননি। কারা নির্মাণ করেছেন সেটাও তিনি জানেন না।
তবে এই অফিসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা দাবি করেছেন, স্লুইস গেটটি বিএডিসি নির্মাণ করেছে। কিন্তু এখন তারা সেটি স্বীকার করবে না।
বিএডিসি অফিসে গিয়েও এমন নজির দেখা গেছে। সেখানকার উপজেলা সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. রনি মিয়া বলেন, ‘স্লুইস গেটটি বিএডিসি নির্মাণ করেনি। বিএডিসি নির্মাণ করলে আমার কাছে তথ্য থাকতো।’
এরপর মোবাইল ফোনে যোগাযোগর চেষ্টা করা হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মতিউর রহমানের সঙ্গে। তবে তিনি কোনো সাড়া দেননি। পরে যোগাযোগ করা হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলামের সঙ্গে। তিনিও এই স্লুইস গেটটি করা নির্মাণ করেছে তার কিছুই জানেন না।
রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘এর পাশ পানি ঢুকছে শুনে আমি কিছু জিও ব্যাগ পাঠিয়েছিলাম। পরে শুনেছি কৃষকেরা নিজ উদ্যোগে একটি বাঁধ তৈরি করে নিয়েছেন।’
খালে পানি ঠেকাতে স্লুইস গেট থেকে ৩০ গজ দূরে কৃষকেরাই একটি বাঁধ নির্মাণ করেছেন
কেউই যখন স্বীকার করেছে না স্লুইস গেটটি কে বা কারা নির্মাণ করেছে, এ অবস্থায় স্থানীয় কৃষকদের প্রশ্ন বেয়ারিশ এই স্লুইস গেটটি তবে নির্মাণ করল কে? আর এর তদারকির দায়িত্বই বা কার হাতে!