সরকার পতনের আন্দালনে শ্রমিকদের মাঠে নামার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বলেছেন, কেবল ঘরোয়া পরিবেশে স্লোগান দিলে চলবে না, রাজপথে নেমে কথা বলতে হবে।
আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসে রোববার সকালে রাজধানীতে বিএনপির সহযোগী সংগঠন শ্রমিক দলের মিছিলপূর্ব সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
র্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে ভারতের সহযোগিতা চাওয়ায় সরকারের কঠোর সমালোচনাও করেন তিনি।
ফখরুল বলেন, ‘আমাদের প্রায় ৩৫ লক্ষের উপরে নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। তাদের মধ্যে শ্রমিক ভাইয়েরাও আছেন অসংখ্য। ছয় শর অধিক নেতা-কর্মীকে গুম করা হয়েছে, সহাস্রাধিক লোককে হত্যা করা হয়েছে। বিনা বিচারে আটকাবস্থায় তাদেরকে গুলি করা হয়। এই অবস্থায় তাদেরকে চলতে দেয়া যেতে পারে না।
‘আসুন আমরা আমাদের সংগঠনকে শক্তিশালী করি, দেশের সমস্ত শ্রমিক শ্রেণিকে সংগঠিত করি। দেশে বরাবরই শ্রমিকরাই পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। আমাদের অতীতে যে গৌরবময় আন্দোলন হয়েছে সব আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে শ্রমিকরা।
‘শুধু এখানে বসে শ্লোগান দিলে হবে না। আপনাদেরকে রাজপথে শ্লোগান দিতে হবে এবং জনগণকে সংগঠিত করে এই ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করে তাদেরকে পরাজিত করে একটা নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যবস্থা করতে হবে।’
‘দুনিয়ার মজদুর এক হও’, ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’, ‘শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি দিতে হবে’, ‘চাল-ডাল-তেলের দাম কমাতে হবে’ ইত্যাদি শ্লোগান ধরেন বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আসুন এই শ্লোগান নিয়ে আমরা এগিয়ে যাই। ইনশাল্লাহ আমরা সফল হব।’
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এই সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। পরে শ্রমিক দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে মিছিল কাকরাইল, বিজয়নগর, পল্টন মোড় হয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবে গিয়ে শেষ হয়।
এতে ফখরুল ছাড়াও দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অংশ নেন।
ফখরুল বলেন, ‘সরকার জোর করে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে। তারা শ্রমিকসহ সব মানুষের অধিকার হরণ করে নিয়েছে। আপনারা ইচ্ছা করলে সমাবেশ করতে পারেন না, আপনারা ইচ্ছা করলে ইউনিয়ন করতে পারেন না। আজকে শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য দাবিতে থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
‘দ্রব্যমূল্য বেড়েছে আকাশচুম্বি। চালের দাম বেড়েছে ১০ গুণের মতো, তেলের দাম বেড়েছে, লবণের দাম বেড়েছে।
‘আমাদের শ্রমিক ভাইয়েরা কী কষ্টের মধ্যে আছেন তা আমার থেকে আপনারা ভালো জানেন। সেই কষ্ট সরকারের কানে যায় না। তারা ন্যায্য মূল্যে শ্রমিকদেরকে চাল-ডাল-তেল দিতে পারে না।’
সরকার উচ্চবিত্তের জন্য বেশি চিন্তা করে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। বলেন, ‘তারা বড়লোকদের জন্য হাসপাতাল তৈরি করে কিন্তু গরিব মানুষদের জন্য কোনো হাসপাতাল তৈরি হয় না। শ্রমিকরা বিনা পয়সায় চিকিৎসা পায় না, তাদের ছেলে-মেয়েরা শিক্ষার সুযোগ পায় না। সব কিছু থেকে এ দেশের শ্রমিক শ্রেণি বঞ্চিত। বড় বড় মেগা উন্নয়নের কথা সরকার। কিন্তু শ্রমিক ভাইদের জন্য তারা কোনো কিছু করে নাই।
‘মেগা উন্নয়ন করছেন ভালো কথা। আমি না খেয়ে থাকব আর আপনি বেগম পাড়া অথবা দুবাইতে অথবা মালয়েশিয়াতে বাড়ি করবেন এটা হতে পারে না।’
শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্ব ও প্রচার সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জুর পরিচালনায় আলোচনায় বিএনপির চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, শ্রম বিষয়ক সহসম্পাদক হুমায়ুন কবির খান, ফিরোজ-উজ-জামান মামুন মোল্লাসহ শ্রমিক দলের নেতারা বক্তব্য দেন। নিখোঁজ নেতাদের স্বজনদের সহযোগিতা
নয়া পল্টনের কার্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম দল ও দক্ষিণ কোরিয়া বিএনপির উদ্যোগে আলাদা অনুষ্ঠানে দলের নিখোঁজ নেতা-কর্মী ও নির্যাতনের শিকার নেতা-কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ঈদ উপহার ও আর্থিক সহযোগিতা দের রুহুল কবির রিজভী।