পঞ্চম দিনের মতো কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে রাজধানী ছেড়ে যাচ্ছে ঘরমুখো মানুষ। ট্রেনের আসনের তুলনায় যাত্রীর সংখ্যা অনেক বেশি। দাঁড়িয়ে যেতে হবে লম্বা দূরত্ব। তারপরও পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে ভোগান্তি সহ্য করে বাড়ি যেতে উদগ্রীব যাত্রীরা।
রোববার সকালে কমলাপুর স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকেই প্রচুর মানুষের সমাগম। টিকিট না পেলেও অনেকেই চেপে বসেছেন ট্রেনে। অনেকেই আবার নিয়েছেন স্ট্যান্ডিং টিকিট। ট্রেনগুলোতে আসনের তুলনায় মানুষ অনেক বেশি।
কথা হয় গার্মেন্টসকর্মী রোজিনার সঙ্গে। দুই বোনের দুই মেয়ে নিয়ে চেপেছেন ধূমকেতু এক্সপ্রেসে। তবে টিকিট নেই তার কাছে। দুই বগির মাঝখানের জায়গাটিতে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন।
সংকোচ নিয়েই কথা বললেন নিউজবাংলার সঙ্গে। তিনি জানান, তারা দুবোন গার্মেন্টসে কাজ করেন। ঈদ উদযাপন করতে গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে যাবেন। টিকিট পাননি, কিন্তু ঈদ করতে তো যেতেই হবে। তাই উঠেছেন ট্রেনে।
রোজিনা বলেন, ‘বাসে গেলে অনেক টাকা ভাড়া লাগবে। ট্রেনে যদি টিটি এসে ধরে তাও বাসের অর্ধেক টাকায় পার পাওয়া যাবে।'লম্বা রাস্তা দাঁড়িয়ে বা মেঝেতে বসে যেতে কষ্ট হবে না? উত্তরে বলেন, ‘আমরা তো এমন কষ্ট করে অভ্যস্ত। কিন্তু বাচ্চা দুইটার সমস্যা হবে। তারপরেও কিছু করার নেই, দাঁড়িয়ে গেলেও বাড়িতে যেতেই হবে।’
স্টেশনে উপচে পড়া ভিড়ের মাঝে ভোগান্তি বাড়ায় গরম। তবে শনিবারের মতো এদিনও সকালের দিকে ঠান্ডা আবহাওয়া ও মৃদু বাতাসের বয়ে যাওয়ায় কষ্ট কিছুটা লাঘব হয়েছে যাত্রীদের।
আগের কয়েক দিন কমলাপুর স্টেশন থেকে ফাঁকা আসন নিয়ে ট্রেন ছেড়ে যেতে দেখা যায়। কারণ অনেক যাত্রীই এয়ারপোর্ট স্টেশন থেকে উঠবেন। তবে রোববার ফাঁকা সিট নিয়ে ট্রেন ছেড়ে যেতে দেখা যায়নি খুব একটা। যাদের টিকিট নেই বা স্ট্যান্ডিং টিকিট আছে তারা ফাঁকা আসনগুলোতে চেপে বসেছেন।
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলায় বাড়ি আবু সাঈদ রনির। বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। তিনি বলেন, ‘টিকিট তো পাইনি। শেষে স্টেশন থেকে স্ট্যান্ডিং টিকিট নিলাম। দাঁড়িয়ে যেতে হবে। কী আর করার। কষ্ট করেই বাড়িতে যেতে হবে।’
বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস ছিল। দিনভর অফিস শেষে বাড়ি ফেরার তাগিদ ছিল। ফলে বৃহস্পতিবার রাতে, শুক্রবার ও শনিবার বাড়ির ফেরা মানুষের ভিড় ছিল বাস, লঞ্চ ও ট্রেনে।
চট্টগ্রামে যাবেন আহমেদ তালুকদার। পেশায় ফটোগ্রাফার এই যাত্রী বলেন, ‘ঈদে বাড়ি ফেরা, পরিবারের সাথে ঈদ করতে চায় সবাই। সিট তো পর্যাপ্ত নয়। মানুষ কী করবে? নিরুপায় হয়েই দাঁড়িয়ে বসে বাড়ির পথে রওনা দিয়েছে।’
কিশোরগঞ্জগামী এগারসিন্দুর প্রভাতী এক্সপ্রেসের যাত্রী মৌরিয়ম আকতার বলেন, ‘ঈদ যত ঘনিয়ে আসে, ততই বেশি চাপ বাড়তে থাকে গণপরিবহনে। তাই আগেই চলে যেতাম, ইচ্ছে ছিল। কিন্তু আমার হাজবেন্ডের কাজের কারণে যেতে পারিনি। তাই এই ভিড় ঠেলে যেতে হচ্ছে। কিছুই করার নেই। বাড়িতে যেতেই হবে। কিন্তু বাচ্চা দুইটার একটু কষ্ট হচ্ছে এই ভিড় ও গরমে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সকালের দিকে রাস্তায় জ্যাম থাকতে পারে তাই অনেক আগেই রওনা দিয়েছিলাম। সময়ের আগেই স্টেশনে পৌঁছেছি।’
আরেক যাত্রী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আজকে ভিড় হবে এটা বুঝতে পারছিলাম। দাঁড়িয়ে যেতে হবে। তবুও কিছু করার নেই। বাড়িতে যেতেই হবে।’
গত দুই দিন দেখা গেছে, সকালে ও ইফতারের পরেও ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলোতে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। আর টিকিট না পাওয়ায় স্ট্যান্ডিং টিকিটের চাহিদাও ছিল বেশ।
বিনা টিকিটে কেউ যেন ভ্রমণ করতে না পারে তার জন্য স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ঢোকার মুহূর্তে চেক করছেন রেলওয়ের কর্মীরা। যাদের টিকিট নেই তাদেরকে 'ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষকের বাড়তি ভাড়ার টিকিট' দেয়া হচ্ছে।
স্টেশনের টিটি তসলিম বলেন, ‘বিনা টিকিটে ভ্রমণ ঠেকাতে এই টিকিট দেয়া হচ্ছে। মানুষের চাপ অনেক বেশি।’
এবারের ঈদযাত্রায় প্রতিদিন ৫৩ হাজার যাত্রী ট্রেনে রাজধানী ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকার উদ্দেশে যাত্রা করার কথা। এর মধ্যে শুধু আন্তনগর ট্রেনে আসন ২৭ হাজারের বেশি।
ঈদ শেষে ট্রেনের ফিরতি টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে রোববার সকাল থেকে। ফিরতি টিকিটের জন্য খুব বেশি লাইন দেখা যায়নি স্টেশন কাউন্টারে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যে স্টেশন থেকে যাত্রা সেই স্টেশন থেকেই দেয়া হবে ফিরতি টিকিট।
এবারের ঈদযাত্রার সুবিধার্থে ছয় জোড়া বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা রেখেছে কর্তৃপক্ষ।
২৩ এপ্রিল থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। ওই দিন ২৭ এপ্রিল, ২৪ এপ্রিল ২৮ এপ্রিলের টিকিট, ২৫ এপ্রিল ২৯ এপ্রিলের টিকিট, ২৬ এপ্রিলে ৩০ এপ্রিলের টিকিট এবং ২৭ এপ্রিল দেয়া হয় ১ মের টিকিট।
অগ্রিম টিকিটপ্রত্যাশীদের ব্যাপক ভোগান্তি দেখা গেছে। কেউ একদিন আবার কেউ দুই দিন লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে টিকিট পেয়েছেন।