ঈদের আগে মে দিবসের ছুটি। এর আগের দুই দিন ছিল সাপ্তাহিক ছুটি। দীর্ঘ ছুটি কাটাতে গেল শুক্রবার থেকেই মানুষ ঢাকা ছাড়ছেন। মে দিবসে রোববার সকালেও ঢাকা ছাড়ার ঢল দেখা গেছে ঘাটগুলোতে। অন্যবারের চেয়ে এবারের ঈদযাত্রায় মোটরসাইকেলে আধিক্য দেখা গেছে সবখানেই।
মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট এলাকায় গত দুই দিনের তুলনায় চাপ বেড়েছে রোববার সকালে। নদী পাড়ি দিতে সকাল ৮টা পর্যন্ত ৮ শতাধিক ছোট-বড় যানবাহন অপেক্ষায় দেখা গেছে।
ঘাটসূত্রে জানা গেছে, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার-মাঝিকান্দি নৌপথে ছোট-বড় মিলিয়ে ১০টি ফেরি দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। পাশাপাশি রয়েছে ৮৫টি লঞ্চ ও ১৫২টি স্পিডবোট ও ৮টি ট্রলার।
সেহরির সময় থেকেই এ ঘাটে ভিড়তে শুরু করেন দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা। ফেরিতে মোটরসাইকেলের চাপ দেখা গেছে বেশি। এক নম্বর ঘাট দিয়ে কেবল মোটরসাইকেলই পার করছে বিআইডব্লিউটিসি। সকাল থেকে ৪টি ফেরিতে করে কয়েক হাজার মোটরসাইকেল পার করেছে।
ঢাকার হাজারীবাগ থেকে রওনা হয়েছেন আরাফাত রহমান, যাবেন খুলনা। রাজধানীতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করার পাশাপাশি তিনি মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং করেন। নিজের মোটরসাইকেলেই স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে তিনি যাত্রায় বের হয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা যদি বাসে বা ভেঙে যাই, যেতে লাগবে ৩০০০ টাকা, আসতে ৩০০০ টাকা। মোটরসাইকেল নিয়ে বের হয়েছি, ৯০০ টাকার তেল ভরেছি। আশা করি এই টাকায় আমি বাড়িতে পৌঁছে যাব।
‘তবে ফেরিঘাটে এসে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। এতসংখ্যক মোটরসাইকেল কীভাবে পার হবে, কখন পার হবে নির্দিষ্ট সময় বলতে পারছি না। সাড়ে পাঁচটা বাজে এসেছি, এখনও সিরিয়াল পাইনি। আমার আগে আরও তিনটি ফেরি ছেড়ে গেছে।’
লঞ্চের যাত্রী আবদুল হালিম বলেন, ‘মিরপুর থেকে বাসে করে দেড় ঘণ্টায় মাওয়া ঘাটে এসেছি। লঞ্চে পাড়ি দেব। বরিশাল যাব। রাস্তায় কোনো সমস্যা হয় নাই, তবে লঞ্চঘাটে প্রচুর যাত্রী। অপেক্ষা করতে হয়নি অবশ্য, ঘাটে এসেই লঞ্চে উঠতে পেরেছি।’
জাফর ইকবাল ঘাট পার হবেন স্পিডবোটে। তিনি বলেন, ‘আমি বেসরকারি ইউনিভার্সিটির ছাত্র। বন্ধুর ব্যবসার কারণে আমাকে ঈদযাত্রায় একটু দেরি করে রওনা হতে হলো। আসতে অসুবিধা হয় নাই। তবে স্পিডবোটে পাড়ি দেব বলে দেড় শ টাকার টিকিট কেটেছি। পার হতে ২০ মিনিট সময় লাগবে। অপর প্রান্তে গেলে কিছু না কিছু পাব, সহজেই ফরিদপুরে পৌঁছাতে পারব।’
ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে সপরিবারে ঘাটে এসেছেন সত্তার মুন্সি; যাবেন বরিশাল।
তিনি বলেন, ‘সেই ভোরে এসেছি, ৩ ঘণ্টায় একটুও এগোতে পারিনি। কখন ফেরি পাব ঠিক নাই। কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল সংখ্যা বাড়ানো।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) শিমুলিয়া বন্দর কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘সকাল থেকে প্রচণ্ড চাপ রয়েছে যাত্রীদের। স্পিডবোট ও লঞ্চঘাট এলাকায় পা ফেলানোর মতো জায়গা নেই। ভোর থেকে ১৫২টি স্পিডবোট ও ৮৫টি লঞ্চ দিয়ে যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে।
‘গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে যাওয়াতে সাধারণ যাত্রী যারা বাসে, সিএনজিতে করে আসছেন, তাদের সংখ্যাটাই বেশি। তারাই লঞ্চে পারাপার হচ্ছেন। যাদের টাকা নিয়ে সমস্যা নাই তারা স্পিডবোটে যাচ্ছেন।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) জামাল হোসেন জানান, ভোর থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত কয়েক শত গাড়ি পারাপার হয়েছে। ঘাট এলাকায় ৮ শতাধিক যানবাহন থাকলেও মহাসড়কে এর প্রভাবে কোনো চাপ নেই।
তিনি বলেন, ‘১ নম্বর ফেরিঘাট দিয়ে শুধু মোটরসাইকেল পারাপার করছি। এই ঘাট শুধু মোটরসাইকেল পারাপারের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে। সকাল থেকে শুধু মোটরসাইকেল বহন করে ৪টি ফেরি ছাড়া হয়েছে। ঘাট এলাকায় যত মোটরসাইকেল, তাতে আরও দশটি ফেরি ছেড়ে গেলেও শেষ হবে না। মোটরসাইকেলের চাপই এবার ঈদযাত্রায় সবচেয়ে বেশি।’
এদিকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটে গত দুদিনের চেয়ে রোববার সকালে মোটরসাইকেল ও ব্যক্তিগত গাড়ি কম দেখা গেছে।। পাটুরিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে আসা প্রতিটি ফেরি ও ফেরিতে থাকা বাসগুলো ছিল যাত্রীবোঝাই। বেশ কিছু লঞ্চে ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি যাত্রী দেখা গেছে।
পাটুরিয়া থেকে আসা যাত্রীরা গন্তব্যে যেতে পরিবহন না পাওয়ার অভিযোগ করছেন। পরিবহন পেলেও ভাড়া বেশি চাওয়া হচ্ছে বলে জানান তারা।
ঢাকা থেকে ফরিদপুরের বোয়ালমারিগামী ফরহাদ শেখ বলেন, ‘অনেকক্ষণ বাসের জন্য অপেক্ষা করে বাস পেলাম না। বাধ্য হয়ে এখন লেগুনায় ৮০ টাকার ভাড়া ২০০ টাকা দিয়ে যেতে হচ্ছে। এই ঘাটে আসলে প্রতি বছরই ঈদের এই ভোগান্তি পোহাতে হয়।’
বোয়ালমারিগামী আরেক যাত্রী কাওছার আহমেদ বলেন, ‘আমিও অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি, ফরিদপুর যাওয়ার বাস পাচ্ছি না। এখান থেকে ফরিদপুরে অটো, মাহেন্দ্র, লেগুনা যাচ্ছে কিন্তু ভাড়া চাচ্ছে কয়েক গুণ বেশি।’
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুল হক বলেন, ‘ভাড়া বেশি নেয়ার সুযোগ নেই। আমাদের কাছে অভিযোগ আসলেই আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি।’
বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক প্রফুল্ল চৌহান বলেন, ‘এই নৌপথে এখন ছোট-বড় ২১টি ফেরি ও ২১টি লঞ্চ চলাচল করছে।’