ঢাকা-বরিশাল রুটের বিলাসবহুল যাত্রীবাহী লঞ্চগুলোর কেবিন না পেয়ে এবারও বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। কেবিন না পেয়ে লঞ্চ কর্তৃপক্ষের দিকে টিকিট কালোবাজারিতে বিক্রির অভিযোগ তুলছেন অনেকে।
তবে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতি ট্রিপে ৩০ হাজারের বেশি কেবিনের চাহিদা রয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী কেবিন না থাকায় এমন অভিযোগ উঠছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদযাত্রা প্রশ্নে ডেক শ্রেণির যাত্রীদের টিকিট নিয়ে কোন জটিলতা না থাকলেও মিলছে না প্রথম শ্রেণির আসন। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে যাত্রীদের কাছ থেকে প্রথম শ্রেণির আসনের চাহিদা চায় লঞ্চ মালিকরা। সে অনুযায়ী লঞ্চ কোম্পানিগুলোর কাউন্টারে ঠিকানা আর ফোন নম্বরসহ পৌঁছে দেয়া হয় চাহিদার স্লিপ।
টানা ২ সপ্তাহ ধরে চাহিদা নেয়ার পর শুরু হয় কেবিনের টিকিট বিক্রি। বহু যাত্রী অভিযোগ করেন, চাহিদা অনুযায়ী আসন না পাওয়ার।
ঢাকা বরিশাল নৌ রুটে ২৬টি লঞ্চ চলাচলের অনুমতি রয়েছে। এসব লঞ্চে গড়ে ২০০টি প্রথম শ্রেণির জন্য কেবিন রয়েছে। তবে ঈদ এলেই কেবিন হয়ে যায় আকাশের চাঁদের মত। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও মিলছে না কাঙ্খিত কেবিন।
বৃহস্পতিবার থেকে ঈদ স্পেশাল সার্ভিস শুরু হওয়ায় অনেককে নদী বন্দরেও দেখা গেছে টিকিটের জন্য।
জাকির হোসেন নামে এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ‘শুক্রবার ঢাকা থেকে বরিশালে যাওয়ার তিনটি ডাবল কেবিনের চাহিদা দিয়েছিলাম। কাউন্টার থেকে একটি কেবিন দেয়া হয়েছে। এখন এই একটি কেবিন দিয়ে কী করব বুঝতেছি না।’
শাহবাজ হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘শনিবার আমার বোন, দুলাভাই আসবে। প্রথমে একটি ডাবল কেবিন চেয়েছিলাম সুন্দরবন লঞ্চের কাউন্টারে, না থাকায় সিঙ্গেল কেবিন চেয়েছি, তাও পাইনি। কাউন্টারের লোকজন মুখ চিনে টিকিট দিচ্ছে। এতে আমরা তো ভালো ভোগান্তিতে পড়েছি। বিষয়টিতে প্রশাসনের নজরদারি দেয়া উচিত।’
নগরীর আলেকান্দা এলাকার বাসিন্দা শেখ মোহাম্মদ রানা বলেন, ‘কাউন্টারে টিকিট না পেলেও নদী বন্দরে গেলে দালালদের কাছ থেকে অনায়াসে টিকিট পাওয়া যাবে। কেননা লঞ্চ কর্তৃপক্ষ বেশি দামে কালোবাজারে টিকিট বিক্রি করে দেয়।’
এদিকে লঞ্চ কর্তৃপক্ষের হিসাব মতে, ঢাকা বরিশাল নৌ রুটে ২৬টি লঞ্চ চলাচল করে। ড়তে এসব লঞ্চে ২০০ থেকে ২২৫টি কেবিন রয়েছে। সে হিসাবে কেবিন সংখ্যা দাঁড়ায় ৫ হাজার ৮৫০টি।
বিপরীতে ঈদ উপলক্ষে প্রতি ট্রিপে চাহিদা রয়েছে ১ হাজার থেকে দেড় হাজার কেবিনের। সেই হিসাবে গড়ে প্রতি ট্রিপে কেবিনের চাহিদা ৩১ হাজার ২০০টির বেশি।
এসব বিষয়ে সুরভী নেভিগেশনের পরিচালক রেজিন উল কবির বলেন, ‘আমার লঞ্চে প্রথম শ্রেণির আসন রয়েছে ২২৫টি, চাহিদা ১ হাজার। এখন বাকি ৭৭৫ জনকে আমি কোথা থেকে কেবিন দেব?’
সালমা শিপিং কর্পোরেশনের এজিএম রিয়াজুল করিম বেলাল বলেন, ‘২১৫টি কেবিনের মধ্যে ২০টি রাখতে হয় প্রশাসন, পুলিশসহ বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জন্য। বাকি ১৯৫টি কেবিনের বিপরীতে চাহিদা আছে কম করে হলেও ১ হাজার ২০০। কেবিন তো আর আমরা তৈরি করে দিতে পারব না।’
চাহিদা বেশি হওয়াতেই সমস্যা হচ্ছে। আর মানুষ না বুঝেই এমন অভিযোগ তুলছেন বলে জানান তিনি।
কেন্দ্রীয় লঞ্চ মালিক সমিতির সহসভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, ‘ঈদে ঢাকা-বরিশাল রুটে আমাদের ২৬টি লঞ্চ রাতে এবং ডে সার্ভিসে দুইটি যাত্রীবাহী নৌ যান চলবে। এর সবগুলোই বৃহস্পতিবার থেকে দিচ্ছে ডাবল ট্রিপ। প্রয়োজনে দিন রাত ২৪ ঘণ্টা লঞ্চ চালাব আমরা। যাতে ঈদে কেউ ঢাকায় আটকে না থাকে। এটা ঠিক যে, সবার চাহিদা মতো কেবিন দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু আমরা মনে করি আরাম আয়েশ নয়, নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানোটাই আসল কথা।’
বিআইডব্লিউটিএ বরিশালের নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ইন্সপেক্টর কবির বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে ১৪ কোম্পানির ২৩টি লঞ্চ ঢাকা থেকে বরিশালে আসবে যাত্রী নিয়ে। এগুলো সবই স্পেশাল সার্ভিস দেবে। আজ লঞ্চে অনেক যাত্রী চাপ থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সব লঞ্চগুলোকে নিয়ম মেনে লঞ্চ চালানোর জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’