বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

স্বর্ণ পাচারের শাস্তি: শুধু বেতন কমল বেবিচক কর্মকর্তার

  •    
  • ২৮ এপ্রিল, ২০২২ ১৩:৪৪

বেবিচকের সহকারী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলামের শাস্তি হয়েছে নামেমাত্র। দীর্ঘ বিভাগীয় তদন্ত শেষে তার বেতন স্কেল শুধু কমানো হয়েছে। দিব্যি তিনি বিমানবন্দরে নিয়মিত অফিস করছেন। আর তার স্ত্রীকে আইনের মুখোমুখিই হতে হয়নি।

২০২১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর। সেদিন সৌদি এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে প্রায় ৫০ লাখ টাকার ছয়টি স্বর্ণবার নিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সহকারী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলামের স্ত্রী। সেই স্বর্ণ স্ত্রীর কাছ থেকে নিয়ে বাইরে পাচারের সময় গোয়েন্দাদের হাতে আটক হন জহিরুল ইসলাম।

এ ঘটনায় বেবিচকের সহকারী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলামের শাস্তি হয়েছে নামেমাত্র। দীর্ঘ বিভাগীয় তদন্ত শেষে তার বেতন স্কেল শুধু কমানো হয়েছে। দিব্যি তিনি বিমানবন্দরে নিয়মিত অফিস করছেন। আর তার স্ত্রীকে আইনের মুখোমুখিই হতে হয়নি।

বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানান, গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর রাত ২টার দিকে জহিরুল বিমানবন্দরে বোর্ডিং ব্রিজ এলাকায় তার স্ত্রীর কাছ থেকে স্বর্ণবারগুলো নিজের হেফাজতে নেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিষয়টি বিমানবন্দরের একটি গোয়েন্দা সংস্থার নজরে আসে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা শুরু করেন নজরদারি। কোনো ধরনের কাস্টমস ঘোষণা ছাড়াই জহিরুল বিমানবন্দরের গ্রিন চ্যানেল পার হওয়ার সময় তাকে চ্যালেঞ্জ করেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ।

একপর্যায়ে তল্লাশি করে জহিরুলের কাছ থেকে প্রায় ৮০০ গ্রাম ওজনের ছয়টি চোরাই স্বর্ণবার জব্দ করা হয়। এরপর তাকে আটক করে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) কাছে সোপর্দ করা হয়।

ওই কর্মকর্তা জানান, বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী আবদুল মালেক বিষয়টি জানার পর জহিরুলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাসে মুচলেকা দিয়ে বিমানবন্দর থেকেই তাকে ছাড়িয়ে নেন। পরে বেবিচকের একটি দীর্ঘ তদন্ত হয়। সেই তদন্ত শেষে শাস্তি হিসেবে সহকারী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলামের বেতন স্কেলে স্থায়ী অবনতি ঘটানো হয়।

এমন ঘটনায় বিস্মিত এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন স্বর্ণ চোরাচালানের শাস্তি কখনই এমন হতে পারে না। তারা বলছেন, জেল-জরিমানার বিপরীতে এ ধরনের শাস্তিতে বিমানবন্দরের অন্য কর্মকর্তারাও চোরাচালানে উৎসাহিত হতে পারেন।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান এয়ার কমোডর ইকবাল হোসেন নিউজবাংলাকে লেন, ‘এটা বিস্ময়কর ব্যাপার। কারণ আইন সবার জন্য সমান। একজন সাধারণ মানুষ চোরাচালান করলে যে শাস্তির বিধান রয়েছে, বেবিচকের কেউ করলেও একই শাস্তি রয়েছে।’

বেবিচক কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম এখন নিয়মিত অফিস করছেন (ডানে)

বেবিচকের সাবেক এই কর্মকর্তা প্রশ্ন রাখেন, ‘বেবিচকের একজন প্রকৌশলীকে হাতেনাতে স্বর্ণসহ ধরার পরেও কেন কাস্টমস অথবা গোয়েন্দারা তাকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে কেবল মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দিল? আর বেবিচকইবা কীভাবে তার কর্মকর্তাকে মুচলেকা দিয়ে নিয়ে এলো? এটা তো কোনো আইনের মধ্যেই পড়ে না।’

বিমানবন্দর সূত্র বলছে, বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী আবদুল মালেকের অত্যন্ত কাছের মানুষ জহিরুল ইসলাম। এর আগেও কয়েকবার বিভিন্ন ধরনের অপরাধ করে পার পেয়ে গেছেন তিনি। জহিরুলের বিরুদ্ধে বিমানবন্দরে গেট নির্মাণে কোটি টাকার অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ এখনও তদন্তাধীন।

এ বিষয়ে বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী আবদুল মালেকের সঙ্গে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে খুদেবার্তারও সাড়া দেননি তিনি।

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোহাম্মদ মফিদুর রহমানের কাছে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের তদন্তে তার (জহিরুল) অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় বেবিচকের চাকরি প্রবিধানমালা অনুযায়ী বিভাগীয় মামলায় জহিরুল ইসলামের বেতন স্কেল স্থায়ীভাবে অবনতিকরণ করা হয়েছে। সে চাকরিজীবনে আর কখনই প্রমোশন পাবে না।’

জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা কেন হলো না, জানতে চাইলে মফিদুর রহমান বলেন, ‘আসলে তদন্ত কমিটির কাছে সে সব স্বীকার করেছে, কোনো কিছুই গোপন করেনি। তাছাড়া এই স্বর্ণটা তার আত্মীয় এনেছে, আর সে সেটা বের করতে সহযোগিতা করেছে। এই সহযোগিতা করাও একটা অপরাধ। কারণ একজন সচেতন এবং সরকারি কর্মকর্তা হয়ে সে এই বেআইনি কাজ করতে পারে না। তাই তাকে এই শাস্তি দিয়েছি।’

তবে এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত করছেন বেবিচকের সাবেক চেয়ারম্যান এয়ার কমোডর ইকবাল হোসেন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা তো একটা পরিকল্পিত অপরাধ। কারণ সে পরিকল্পনাই করেছে, তার স্ত্রী দেশের বাইরে থেকে স্বর্ণ নিয়ে আসবে আর সে সেই স্বর্ণ বিমানবন্দরের গেট পার করে দেবে। তাই এখানে দুজনই সমান অপরাধী।

‘দুজনকেই শাস্তি পেতে হবে। অথচ এখানে বেবিচকের কর্মকর্তা হওয়ায় তাকে মুচলেকা দিয়ে নিয়ে এসে নামমাত্র শাস্তি দেয়া হলো, আর তার স্ত্রীকে কোনো রকম শাস্তি ছাড়াই ছেড়ে দেয়া হলো।’

বিষয়টি নিয়ে বেবিচকের সহকারী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলামের বক্তব্য জানার চেষ্টা করেছে নিউজবাংলা। তবে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে সাংবাদিক পরিচয় দিতেই তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এরপর তিনি আর ফোন ধরেননি।

এ বিভাগের আরো খবর