বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রণোদনার সার-বীজ পাচ্ছেন না ‘প্রকৃত কৃষক’

  •    
  • ২৫ এপ্রিল, ২০২২ ১৫:৪৫

ত্রিশাল ইউএনও আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘প্রকৃত কৃষকরা বঞ্চিত হয়েছেন কি না উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে খোঁজখবর নেয়া হবে। অসাধু ডিলারদের বিরুদ্ধেও যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

ময়মনসিংহের ত্রিশালে সরকারি বরাদ্দের বিনা মূল্যের সার ও বীজ প্রকৃত কৃষকরা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।

সম্প্রতি কৃষি প্রণোদনা বিতরণ কার্যক্রম শুরু হলে সুবিধাভোগী কৃষকরা এ অভিযোগ করেন। তাদের দাবি, উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের বেশির ভাগ প্রকৃত কৃষকই প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

উপজেলার কয়েকজন কৃষক অভিযোগে জানান, জমি নেই এমন চাষিরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তাদের নাম তালিকাভুক্ত করে নেন। এরপর বিনা মূল্যে সার-বীজ উত্তোলন করে কম টাকায় ডিলারদের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে ডিলারদের কাছ থেকে চড়া দামে তাদের সেগুলো কিনতে হয়।

গত সোমবার আনুষ্ঠানিক কৃষি প্রণোদনা বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। কৃষকরা প্রতি বিঘা ধান চাষের জন্য ৫ কেজি উপশী বীজ, দেড় কেজি হাইব্রিড বীজ, ২০ কেজি ডিএপি সার ও ১০ কেজি এমওপি সার পাবে বলে জানানো হয়। তালিকাভুক্ত কৃষকদের মধ্যে ধাপে ধাপে এগুলো বিতরণ করা হবে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, উপজেলায় আউশ মৌসুমে প্রণোদনা দিতে ৩ হাজার ৬৪০ জন সুবিধাভোগী কৃষকের তালিকা তৈরি করেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা।

সরেজমিনে কয়েকজন কৃষককে সার উত্তোলন করেই তা কৃষি কর্মকর্তাদের সামনে ডিলারের কাছে বিক্রি করতে দেখা যায়। এসব সার কিনে নেন একতা ট্রেডার্সের মালিক ডিলার আনিসুজ্জামান।

ঘটনাটি তাৎক্ষণিক জানাজানি হলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ডিলারের গোডাউন থেকে ৩০ বস্তা সরকারি সার জব্দ করলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে জানা যায়।

এ ঘটনায় আনিসুজ্জামান বলেন, ‘কৃষি অফিসের সামনেই কৃষকদের কাছ থেকে সারগুলো কিনেছি। তারা প্রকৃত কৃষক কি না জানি না। তারা কার কাছ থেকে কার্ড সংগ্রহ করেছেন তাও জানি না।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী প্রণোদনার সার-বীজ বিতরণে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের প্রকৃত কৃষকের তালিকা প্রস্তুত করার কথা। কিন্তু তারা সরেজমিনে কৃষকদের সঙ্গে কথা না বলে কিংবা মাঠ পর্যায়ে না গিয়ে জনপ্রতিনিধিদের ওপর নির্ভর করছেন।

এতে যাচাই-বাছাই ছাড়াই জমিহীন এমনকি কোনো দিন কৃষিকাজ করেননি এমন কৃষকের নামও তালিকায় স্থান পেয়েছে। ফলে প্রকৃত কৃষকরা বঞ্চিত হওয়ায় তাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা গেছে।

বৈলর ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল বাতেন বলেন, ‘২১০ শতক জমিতে আউশ আবাদ করেছি। কিন্তু আমাকে কৃষিকার্ড দেয়া হয়নি। বিনা মূল্যে পাওয়া তো দূরের কথা, ডিলারদের কাছ থেকে চড়া মূল্যে সার ও বীজ কিনে কাজ করি। কখনও সরকারের প্রণোদনা পাইনি।’

স্থানীয় আবেদ আলী, মোহাম্মদ আলী, ফজলুল হক, জয়নাল আবেদীন, জালাল উদ্দিন, আব্দুল আজিজ ও আমানুল্লাহসহ আরও কয়েকজন কৃষক জানান, তারা ১৮ কাঠা থেকে ৬০ কাঠা পর্যন্ত জমিতে চাষাবাদ করেছেন। কিন্তু কেউ কৃষিকার্ড পায়নি। কখন কার্ড দেয়া হয়েছে তাও জানেন না।

তাদের অভিযোগ, ইউনিয়নের বেশির ভাগ প্রকৃত কৃষকদের এ সরকারি সুবিধার আওতায় আনা হয়নি। খোঁজখবর না নিয়েই যাদের জমি খুব কম, কিংবা নেই, জমি থাকলেও চাষ করেন না এমন ব্যক্তির নাম তালিকায় রাখা হয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানিয়া রহমান বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সরেজমিনে প্রকৃত কৃষকের তালিকা প্রস্তুত করবেন। এরপর তালিকা অনুযায়ী আমরা কার্ডের মাধ্যমে সার-বীজ বিতরণ করব।

‘অনেক সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা কৃষক পরিচয়ে তালিকায় অনেকের নাম তুলতে বলেন। তখন তাদের কথা বিশ্বাস করে যাচাই-বাছাই ছাড়াই অনেকের নাম উঠে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনেক কৃষক প্রণোদনার সার-বীজ উত্তোলন করে বিক্রি করে দেন। বিতরণের প্রথম দিন হাতেনাতে আমরা ডিলারের গুদাম থেকে ৩০ বস্তা সার জব্দ করেছি। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

একই সঙ্গে তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের জমিজমা সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়া হবে। সুবিধাভোগী ছাড়া অন্যদের নাম উঠলে তা বাদ দেয়া হবে। প্রকৃত কৃষকরা তালিকায় স্থান পাবেন।’

ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘সরকারি বরাদ্দের সার ডিলারের গুদাম থেকে জব্দ করার ঘটনা শুনেছি। প্রকৃত কৃষকরা বঞ্চিত হয়েছে কি না উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে খোঁজখবর নেয়া হবে। অসাধু ডিলারদের বিরুদ্ধেও যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর