বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মেহেদির রঙ শুকানোর আগেই নির্যাতনে হাসপাতালে গৃহবধূ

  •    
  • ২৪ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০৮

হাসপাতালের বেডে শুয়ে মরিয়ম বলেন, ‘চাকুরী করে যৌতুকের দাবি পূরণ করতে চেয়েছি। কিন্তু সেটাও মানেনি তারা।’

চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি নববধূর সাজে স্বামীর ঘরে পা রেখেছিলেন মরিয়ম। কিন্তু মেহেদির রঙ শুকানোর আগেই স্বামীর নির্যাতনে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে তাকে। অভিযোগ উঠেছে, যৌতুকের দাবিতে মরিয়মকে নির্যাতন করে এ অবস্থা করেছেন তার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন।

শুক্রবার রাত ৮টার দিকে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে সদর থানায় একটি মামলা করেছেন নববধূ ফেরদৌসী বেগম মরিয়ম। তিনি লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের পশ্চিম গুড়িয়াদহ খালেক মোড় এলাকার মাইদুল ইসলাম রতনের স্ত্রী এবং আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের মদনপুর গ্রামের মনজুম আলীর মেয়ে।

মামলায় অভিযোগে আছে, বিয়ের পর মরিয়মকে ঢাকায় নিয়ে যান রতন। ঢাকায় থাকা খাওয়ার অনেক খরচ। তাই নতুন ব্যবসা করতে বাবা-মা ও ভাইদের পরামর্শে মরিয়মের কাছে তিন লাখ টাকা ও একটি মোটরসাইকেল দাবি করেন রতন। টাকার জন্য বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলতে মরিয়মকে চাপ দিতে থাকেন তিনি। কিন্তু টাকা না চাওয়ায় প্রায় প্রতিদিনই ঘরের দরজা বন্ধ করে মরিয়মকে মারধর করতেন স্বামী।

মরিয়মের আরও অভিযোগ, তাকে মারধর করে কোনো কোনো দিন ঘরে তালা লাগিয়ে বাইরে চলে যেতেন রতন। এ অবস্থায় বিনা চিকিৎসায় অনাহারে মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন তিনি। এক পর্যায়ে বাবার বাড়ির লোকজনের সঙ্গেও তার যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়।

স্বামীর অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে একদিন নিরুপায় হয়ে যৌতুকের দাবি পূরণের বিষয়ে আশ্বাস দিয়ে বাবার বাড়ি যেতে চান মরিয়ম। পরে তাকে নিয়ে ঢাকা থেকে নিজ বাড়িতে ফেরেন রতন। কিন্তু আশ্বাস অনুযায়ী, বাবাকে টাকা নিয়ে আসতে না বলায় নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়।

এ ছাড়া মরিয়মের পরিবারকে রতনের পরিবারের পক্ষ থেকে বলে দেয়া হয়- যৌতুক ছাড়া তারা তাদের মেয়ের সঙ্গে দেখাও করতে পারবেন না। এরই ধারাবাহিকতায় গত বুধবার শাশুড়ি আর স্বামী মিলে মরিয়মকে বেদম মারধর করেন। এ সময় চিৎকার করলে তাকে গলা চেপে হত্যার চেষ্টাও করা হয়।

মরিয়মের চিৎকারে বিষয়টি জানতে পেরে তার বাবার বাড়িতে খবর দেয় স্থানীয়রা। খবর পেয়ে মরিয়মের ভাই ওই বাড়িতে গেলে তাকেও লাঞ্চিত করে একটি ঘরে আটকে রাখা হয়। পরে ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলী খবর পেয়ে ভাই-বোনকে উদ্ধার করেন এবং আহত মরিয়মকে আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্সে ভর্তি করেন।

এ ঘটনায় বিচার চেয়ে যৌতুকলোভী স্বামী রতনকে প্রধান আসামি করে ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন নববধূ মরিয়ম।

হাসপাতালের বেডে শুয়ে মরিয়ম বলেন, ‘যৌতুকের টাকা আর মোটরসাইকেল ছাড়া ওই বাড়িতে গেলে লাশ হতে হবে বলে হুমকি দিচ্ছে স্বামী আর শাশুড়ি। বিয়ের মাত্র দুই মাসে প্রতিটি রাত কেটেছে লাঠির আঘাতে। তার পা ধরে জীবন ভিক্ষা চেয়েছি। চাকুরী করে যৌতুকের দাবি পূরণ করতে চেয়েছি। কিন্তু সেটাও মানেনি তারা।’

মরিয়মের বাবা মনজুম আলী বলেন, ‘আমার মেয়েকে বিয়ের পরে ঢাকায় নিয়ে যায়। কিন্তু কোনো ঠিকানা আমাদেরকে দেয়নি। ফোনও বন্ধ ছিল। রতনকে ফোন দিলে রিসিভ করত না। রতনের বাবা মা ফোনে জানাত মেয়ে ভাল আছে। এত নির্যাতনের খবর আমরা জানতাম না।’

মামলার বিষয়ে লালমনিরহাট সদর থানার ওসি শাহ আলম বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর