মুকুল আসার পর বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এমনিতেই ফলন কম আমের। তার ওপর রয়েছে কালবৈশাখিসহ উপকূলীয় ঝড়ের শঙ্কা। অন্যদিকে কাঁচা আমের চাহিদা বেশি থাকায় সাতক্ষীরায় বাজার ভরে গেছে কাঁচা আমে।
বাজারে প্রতিদিন পাইকারদের আনাগোনা বাড়ায় জেলার বাজারগুলোতে প্রতিদিন শত শত মণ আম বেচাকেনা হচ্ছে।
গত এক সপ্তাহ ধরে সাতক্ষীরা বাজারগুলোতে বাণিজ্যিকভাবে কাঁচা আম কেনা-বেচা শুরু হয়েছে। প্রতি মণ আম দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তাই আমচাষিরা বলছেন, তারা যে লোকসানের মুখে পড়তেন কাঁচা আম বিক্রি করে কিছুটা স্বস্তি পাবেন তারা।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে সাতক্ষীরায় উৎপাদিত আম বেশ সুস্বাদু ও মিষ্টি হওয়ায় দিন দিন জেলাটিতে আমের উৎপাদন বাড়ছে। গড়ে উঠছে নতুন নতুন আমবাগান।
গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন সুস্বাদু জাতের আগাম আম উৎপাদন ও বাজারজাত করে দেশে সুনাম কুড়িয়েছে উপকূলবর্তী এ জেলা।
আম চাষিরা বলছেন, চলতি মৌসুমে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় খরায় আম্রপালি, গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, হিমসাগরসহ বিভিন্ন প্রজাতির আমের গুটি ঝরে পড়েছে। তাই আশানুরূপ উৎপাদন নিয়ে শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন তারা।
বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক প্রয়োগ করেও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। ফলে আগের বছরের তুলনায় গাছে আমের পরিমাণ কম।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় ৫ হাজার ২৯৯টি বাগান ও ১৩ হাজার আমচাষি রয়েছেন।
সাতক্ষীরা শহরের আম ব্যবসায়ী বেলাল হোসেন বলেন, ‘এ বছর আমের ফলন কম। তার ওপর আবার বৃষ্টি না হওয়ায় গুটি ঝরে যাচ্ছে। যে টাকা দিয়ে বাগান কিনেছিলাম তা বিক্রি করে আসলে টাকা উঠবে কি না তা নিয়ে শঙ্কায় আছি।’
তিনি আরও জানান, ‘এখনও এক মাস সময় লাগবে পরিপক্ব আম বাজারে উঠতে। বিভিন্ন কোম্পানি কাঁচা আম কিনছে, তাই আম বিক্রিও করছি এখন।’
ব্যবসায়ীরা বলছেন, কাঁচা আম কিনে বিভিন্ন কোম্পানি আচার, চাটনি, জেলি, কাঁচা আমের জুসসহ বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু খাবার তৈরি করে। তাই বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা সাতক্ষীরা থেকে আম কিনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠাচ্ছেন।
শিমুলবাড়িয়া গ্রামের আম ব্যবসায়ী হানিফ গাজী বলেন, ‘বর্তমানে যে আমগুলো ভেঙে বাজারে বিক্রি করছি, সেগুলো দিয়ে বিভিন্ন ধরনের আচার তৈরি করা হয়। বিভিন্ন কোম্পানি এই আম আমাদের থেকে সংগ্রহ করছে।’
দেবহাটা থেকে আসা বাগান মালিক জহুরুল হক বলেন, ‘এ বছর আমার বাগানে ভালো মুকুল এসেছিল, কিন্তু আমের গুটি বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা ঝরে গেছে। যদি ঝড়বৃষ্টি না হয় তাহলে বর্তমানে বাগানে যে পরিমাণ আম রয়েছে এতে জমির হারিসহ খরচের টাকাটা হয়তো উঠবে।’
আগড়দাঁড়ি গ্রামের ব্যবসায়ী জলিল জানান, এখন বাজারে কাঁচা আমের দাম ভালো এবং ঝড় বৃষ্টিতে পড়ে যাওয়ার ভয়ে আগেই আম ভেঙে বিক্রি করছেন তিনি। এ বছর আমের ফলন খুবই কম।
সাতক্ষীরা বড় বাজারের কাঁচা-পাকা ফল ব্যবসায়ী রজব আলী বলেন, ‘বর্তমানে বাজারে যে আম উঠছে তার বাজারে ১২০০ থেকে ২ হাজার টাকা মণ পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। অন্য বছরের তুলনার এ বছর বাজারে কাঁচা আম বেশি উঠেছে।’
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ নুরুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর জেলায় আগাম বৃষ্টির কারণে আমের মুকুল নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে ফলন কমে গেছে। ইতোমধ্যে সাতক্ষীরার কিছু কিছু স্থানে বাজারে কাঁচা আম বিক্রি শুরু হয়েছে। এখনও পরিপক্ক আম বাজারে উঠতে দুই সপ্তাহের বেশি সময় লাগবে।’
অপরিপক্ক আম পাকানোর উদ্দেশ্যে যদি কেউ কেমিক্যাল স্প্রে ব্যবহার করেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ফলন ভালো করতে ও ফল তোলার বিষয়ে আমচাষিদের এখন সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।