রংপুরে দিন দিন ভুয়া চিকিৎসকের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। সিভিল সার্জনের অভিযানে বেরিয়ে আসছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাতে রংপুর মহানগরীর ধাপ এলাকায় ইউনাইটেড নামে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ঘটেছে এমনই এক চ্যাঞ্চল্যকর ঘটনা।
সরেজমিনে ওই হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, অপারেশন থিয়েটারে এক প্রসূতির সিজারিয়ান অপারেশন চলছে। ঠিক সেই সময়ে হাসপাতালে হাজির হয় ভ্রাম্যমাণ আদালত।
অপারেশন থিয়েটারে গিয়ে দেখা মিলল এক যুবকের। রোগীকে সেলাই দিতে ব্যস্ত ওই যুবক প্রথমে নিজেকে চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দেন। পরে জানা গেল, তিনি ডাক্তার তো দূরে থাক, অষ্টম শ্রেণির গণ্ডি পেরিয়েছেন মাত্র।
অভিযানে যাওয়া সিভিল সার্জনের উপস্থিতি টের পেয়ে বোরকা পরে হাসপাতাল থেকে পালানোর চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা পাননি প্রশান্ত নামের ওই ভুয়া চিকিৎসক।
অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালটির পাঁচ বছর ধরে লাইসেন্স নবায়ন নেই। পরিবেশ ছাড়পত্রসহ নেই বৈধ কোনো কাগজপত্র। তবুও ওই হাসপাতালে জটিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসা চলছে সমান তালে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল (বুধবার) রাতে সেখানে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত।
অভিযানের সময় অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে অষ্টম শ্রেণি পাস প্রশান্তকে হাতেনাতে ধরেন রংপুর সিভিল সার্জন শাহীন সুলতানা। এ সময় নানা অজুহাত দেখিয়ে বাইরে বেরিয়ে সটকে পড়ার চেষ্টা করেন ওই যুবক। পরে দুই ঘণ্টা টয়লেটে বোরকা পরে লুকিয়ে থাকার পর পালানোর চেষ্টা করেন তিনি। তারপরও শেষ রক্ষা পাননি। ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে আটক করে তিন মাসের কারাদণ্ড দেন।
এ ঘটনায় হাসপাতালের মালিক সামসুদ তিবরীজকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও তিন দিনের কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইশরাত জাহান মিশু। তাৎক্ষণিক হাসপাতাল মালিক জরিমানার টাকা পরিশোধ করে জেল খাটার হাত থেকে রক্ষা পান।
জানা গেছে, গাইবান্ধা পলাশবাড়ী উপজেলার পশ্চিম গোপীনাথপুর গ্রামের ময়না বেগমের (২৬) সন্তান প্রসব বেদনা উঠলে বুধবার বিকেলে ওই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর রাতে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে তার সিজারিয়ান অপারেশন করা হয়।
এদিকে, অভিযান প্রসঙ্গে সিভিল সার্জন শাহীন সুলতানা বলেন, ‘অভিযানে ওই বেসরকারি হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে গিয়ে এক প্রসূতি নারীকে পাওয়া যায়। তখন সিজার করে তার সন্তান বের করা হয়েছিল; সেলাই দিচ্ছিলেন এক যুবক।’
‘তিনি প্রথমে নিজেকে ডাক্তার দাবি করেন। পরে বলেন, আমি ডাক্তার নই, এইট পাস করেছি মাত্র। এরপর তিনি বোরকা পরে হাসপাতাল থেকে পালানোর চেষ্টা করেন।’
তিনি বলেন, ‘হাসপাতালটির মালিক দাবি করছিলেন, ওই নারীর সিজার করিয়েছেন রংপুর ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির চিকিৎসক রিফাত আরা। তবে রিফাতকে ওই সময়ে পাওয়া যায়নি।’
এক প্রশ্নের জবাবে সিভিল সার্জন বলেন, ‘ওই বেসরকারি হাসপাতালের বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই। লাইসেন্সের মেয়াদও পাঁচ বছর আগে শেষ হয়েছে। নবায়নের জন্য আর আবেদনও করেনি। এ ধরনের হাসপাতাল ও ক্লিনিকের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে কাজ করা হচ্ছে।’
সিভিল সার্জনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রংপুরে প্রায় ৫০টিরও বেশি ক্লিনিকের লাইসেন্স নেই। থাকলেও তা নবায়ন করা হয়নি। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই এসব ক্লিনিকে চালানো হচ্ছে অপারেশন। আর এজন্যই সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে , যা অব্যাহত থাকবে।