শেরপুরে বিভিন্ন এলাকায় বোরো ক্ষেতে নেক ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। এ রোগের প্রাদুর্ভাবে গাছের শিষ শুকিয়ে চিটা হয়ে যাচ্ছে ধান। এতে কাঙ্ক্ষিত ফলনের আশা ছেড়ে দিয়েছেন জেলার কৃষকরা।
কৃষকদের অভিযোগ, কৃষি বিভাগের পরামর্শে কীটনাশক প্রয়োগ করেও কাজ হচ্ছে না, ধানগাছকে ব্লাস্ট থেকে রক্ষা করা যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে বোরো ধান রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। তবে কৃষি বিভাগের দাবি, ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করে সুফল পাওয়া যাচ্ছে।
শেরপুরে চলতি মৌসুমে ৯১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। যখন ধানের শীষ বের হতে শুরু করেছে, তখনই সদরসহ জেলার বিভিন্ন এলাকার শত শত একর জমির ধান নেক ব্লাস্টে আক্রান্ত হলো।
কৃষকরা জানিয়েছেন, সদর উপজেলার বাজিতখিলা, সুলতানপুর, পাকুরিয়া, চরশেরপুর, কামারেররচর, ধলা ইউনিয়ন; নকলার বরইতা, গনপদ্দী, উরফা, নকলা, গৌড়দ্বার, পাঠাকাটা, চর অষ্টধর, চন্দ্রকোনা ইউনিয়নসহ জেলার অনেক এলাকায় এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নেক ব্লাস্টে আক্রান্ত ধানের শিষ ধীরে ধীরে সাদা হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। শিষের গোড়ায় প্রথমে এই রোগ দেখা দিচ্ছে। এতে শিষের ধান চিটা হয়ে যাচ্ছে।
কথা হয় কৃষক বাজিতখিলার কবির মিয়া, চরশেরপুরের আব্দুল মালেক, মানোয়ার হোসেন, নদর হোসেন, কামারেরচরের নওয়াব আলী, নকলার বরইতার গ্রামের রহুল আমিন, শফিকুল ইসলাম, সুলতানপুরের আমজাদসহ অনেকের সঙ্গে।
নিউজবাংলাকে রহুল আমিন বলেন, ‘কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়া আমরা বাজার থাইক্কা কীটনাশক নিয়া ছিটাইতাছি, তাও কাম হইতাছে না। ঋণ নিয়া ধান চাষ করছি। ফলন না পাইলে ঋণ কিবা কইরা পরিশোধ করমু।’
সুলতানপুরের আমজাদ বলেন, ‘আমরা গরিব কৃষক। ঋণ-ধার কইরা ধান লাগাই। ধানও ভালা হইছে, এহন তো ধানে চিটা হইয়া যাইতাছে। ফলন না পাইলে যে ঋণ করছি, এহন টেহা কইথনে দিমু।’
চরশেরপুরের মো. মানোয়ার হোসেন বলেন, ‘যা লাগাইছি, সব তো আস্তে আস্তে শেষ হইয়া যাইতাছে। এহন ধানের শিষ বাড়ানির সময়, আর এহনি সব নষ্ট হইয়া যাইতাছে।’
শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মুহিদ কুমার দেব বলেন, ‘দিনের বেলায় প্রচণ্ড গরম, রাতে ঠান্ডা পড়ায় ধানে নেক ব্লাস্ট দেখা দিয়েছে। এটি শুধু শেরপুরেই না, প্রায় সারা দেশেই আবহাওয়াজনিত কারণে কমবেশি এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করে সুফল পাওয়া যাচ্ছে।’
জেলার যেসব জমিতে ব্রি-২৮ ও ৮৪ জাতের ধান চাষ করা হয়েছে, সেসব জমিতেই এ রোগ দেখা দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতি বছরই এ জাতের ধানে নেক ব্লাস্ট আক্রমণ করে থাকে। তাই আমরা কৃষকদের এ দুই জাতের ধান চাষ না করতে বলে আসছি।’