নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে শিশু তাসকিয়া আক্তার জান্নাত হত্যা মামলায় প্রধান আসামি মাঈন উদ্দিন রিমন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
আমলি আদালত-৩-এর বিচারক তৌহিদুল ইসলামের আদালতে ১৬৪ ধারায় এই জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।
নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ডিবি পুলিশের পরিদর্শক সবজাল হোসেন।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত আমলি আদালতে ছিলেন রিমন। এরপর তাকে কারগারে পাঠানো হয়। জবানবন্দিতে তিনি শিশু তাসকিয়াকে গুলি করে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।
পুলিশ হেফাজতে আসামি মাঈন উদ্দিন রিমন। ছবি: নিউজবাংলা
রিমন স্বীকারোক্তিতে জানান, মামলার আসামি বাদশা তার চাচা। ভিকটিম পক্ষের লোকজনের সাথে বিবাদী পক্ষের মাটি কাটা নিয়ে বিরোধ চলছিল। ঘটনার দিন মহিনদের বাড়ির সামনে ১০/১২ জন মিলে তারা প্রতিপক্ষের লোকজনকে মারার জন্য যান। জুয়েলের কাছে থেকে ২০ হাজার টাকায় অস্ত্র ভাড়া নেন। বাদশা ও মহিনের নির্দেশে শিশু তাসকিয়া আক্তার জান্নাত ও তার বাবাকে গুলি করেন রিমন নিজেই। পরে তাসকিয়া মারা যায়।
এর আগে এই মামলায় চার আসামিকে পাঁচ দিন করে রিমান্ডে পাঠায় আদালত।
যাদের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে তারা হলেন মহিন উদ্দিন, আকবর হোসেন, মো. সুজন ও মো. নাঈম।
র্যাবের হাতে আটক ওই পাঁচ আসামির নামে অস্ত্র আইনেও মামলা হয়েছে।র্যাব-১১-এর সিপিসি-৩ নোয়াখালী ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার খন্দকার শামীম হোসেন জানান, বুধবার রাতে র্যাবের উপসহকারী পরিচালক বোরহান উদ্দিন বাদী হয়ে জেলার চরজব্বর থানায় মামলাটি করেন।
সুবর্ণচর উপজেলার চরক্লার্ক এলাকায় অভিযান চালিয়ে মঙ্গলবার রাতে আসামিদের গ্রেপ্তার করে র্যাব। এ সময় র্যাবের সঙ্গে তাদের গোলাগুলি হয় বলে বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়। বলা হয়, তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি দেশে তৈরি পাইপগান, একটি ম্যাগাজিন ও গুলি উদ্ধার করা হয়।
১৩ এপ্রিল বাবার কোলে থাকা অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারায় তাসকিয়া।
যা ঘটেছিল
পুলিশ জানায়, পূর্ব হাজীপুর গ্রামের খোরশেদ আলম দুর্গাপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের মো. বাদশার কাছে তার কৃষিজমির মাটি বিক্রি করেন। চুক্তি অনুযায়ী ৬ ফুট মাটি কেটে নেয়ার কথা। তবে বাদশা এর চেয়ে বেশি মাটি কাটতে চাইলে খোরশেদের ভাই ফিরোজ আলম বাধা দেন।
বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সালিশ-বৈঠক করে মীমাংসার চেষ্টা হয়। এতে অংশ নেন তাসকিয়ার বাবা আবু জাহের। তবে প্রথম দফার আলোচনা ভেস্তে যায়। ৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় ফিরোজের বাড়িতে বৈঠক চলাকালে রিমনের নেতৃত্বে সেখানে ককটেল হামলা ও গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটে।
পরদিন ফিরোজ থানায় অভিযোগ দেন। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তবে অভিযুক্ত কাউকে না পাওয়ার কথা জানিয়ে পুলিশ চলে আসে।
এই থানায় যাওয়ার কারণে ১০ তারিখ আবার ফিরোজের বাড়িতে হামলা হয়। তখন ৯৯৯-এ ফোন করে বিষয়টি জানায় ফিরোজের মেয়ে শেফালি। এরপর আবারও ঘটনাস্থলে এসে পুলিশ অভিযুক্তদের ধরতে ব্যর্থ হয়।
অভিযোগ ওঠে, তাসকিয়ার বাবা আবু জাহেরের কারণে ওই বৈঠকগুলো কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়া শেষ হয়। তখন সন্ত্রাসীরা জাহেরকে হত্যার পরিকল্পনা করে তার ওপর হামলা চালায়।