ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের জেরে দুই দিনের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে খুলেছে রাজধানীর নিউ মার্কেট। তবে সকাল-দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামলেও মার্কেটে ক্রেতা উপস্থিতি একেবারে কম।
দোকানদাররা বলছেন, ঈদের মাত্র ১০ দিন বাকি, এই সময় যেখানে মার্কেটে হাঁটার জায়গা থাকে না, সেখানে ক্রেতার দেখা নেই, বিক্রিও হচ্ছে না। তবে গত দুই দিনে যে পরিস্থিতি ছিল তা থেকে বেরিয়ে দু-এক দিন গেলেই মানুষ আবার এ মার্কেটমুখী হবেন বলে আশা করছেন বিক্রেতারা।
এই মার্কেটের কাপড় বিক্রেতা মিলন সরদার বলেন, ‘বেচাকেনার অবস্থা খুবই খারাপ। মানুষ একটু ভয়ের মধ্যে আছে। তাই মার্কেটে এসেছে কম। সামান্য বিষয় থেকে এত বড় ঘটনা ঘটল, আর শাস্তি পাচ্ছি আমরা সবাই। ঈদের সময় বেচাকেনা না হলে কীভাবে চলব।’
সকাল ৯টার দিকে নিউ মার্কেটে দোকান খোলা শুরু হয়। বেলা ১১টার পর অনেক দোকান খোলা পাওয়া যায় নিউ মার্কেটে। এরপর ক্রেতা আসতে শুরু করলেও সংখ্যায় অনেক কম।
বিক্রেতা রনি বলেন, ‘বেচাকেনা নাই বললেই চলে। অন্যবার এই সময়ে বিক্রি করার জন্য দাঁড়ানোর সময় পাইনি, কাস্টমার জায়গা পায়নি আর আজ সকাল থেকেই বসে আছি। মাত্র ২ হাজার টাকার মতো বিক্রি করছি। অথচ অন্য বছর বিক্রি হয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা।
‘আজ তো সবে মার্কেট খুলল, দুই দিন গেলে কাস্টমার বাড়বে, সে আশাতেই আছি।’
দোকান খুললেও ফাঁকা নিউ মার্কেট। ছবি: নিউজবাংলা
মার্কেটে আসা ক্রেতা সোমা বলেন, ‘মনের মধ্যে ভয় নিয়ে মার্কেটে এসেছি। বাচ্চা, শ্বশুর-শাশুড়ির জন্য কিছু কেনাকাটা করব। এসে দেখলাম মানুষজন তেমন নেই। তবে একদিকে ভালোই হলো, ভিড় ছাড়াই কেনাকাটা করা যাচ্ছে।’
মার্কেটে হেঁটে হেঁটে শপিং ব্যাগ বিক্রি করছেন আরিফ। তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে তিনটা ব্যাগ বিক্রি করছি। কাস্টমার না আইলে বেচাকেনা হইবো না। ব্যাগ বেচতে না পাইরলে খামু কী?’
এ মার্কেটে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য আতোয়ার রহমান বলেন, ‘নিউ মার্কেট এলাকায় অনেক মানুষ আসে এর জন্য আমরা নিয়মিত টহলে থাকি। তবে আজ আমাদের বেশি সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন এখানে। যদিও সকাল থেকে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি হয়নি, সবকিছু স্বাভাবিক আছে। তবু আমরা সতর্ক আছি। তবে মানুষজন একেবারে কম দেখছি।’
ফোনে মায়ের সঙ্গে কথা বলছিলেন ফাস্টফুড দোকানের কর্মী মো. হানিফ। মার্কেটের পরিস্থিতি আজ ভালো বলে মাকে আশ্বস্ত করতে শোনা গেল তাকে।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘টিভিতে দেইখা দুই দিন ধইরা মা চিন্তায় আছে। বারবার ফোন দিয়া খবর জিগাইতাছে। আমগো মনের মধ্যে যদিও একটু টেনশন আছে। তয় এখন পর্যন্ত সবকিছু ভালোই আছে। শুধু কাস্টমার নাই। ইফতারের পরে কী হয় দেখা যাক।’
গত সোমবার মধ্যরাতে নিউ মার্কেটের দোকানমালিক ও কর্মচারীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংঘর্ষ শুরু হয়। এর জেরে মঙ্গলবার দিনভর ওই এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের রেশ থাকে বুধবার পর্যন্ত।
ওই সংঘর্ষে একজন ডেলিভারিম্যান ও এক দোকান কর্মচারীর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক।
সংঘর্ষের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে আহত হয়েছেন ১৫ জনের মতো সাংবাদিক।