বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভাঙনের মুখে জিওল ও তেরাইল্ল্যের বাঁধ

  •    
  • ২০ এপ্রিল, ২০২২ ২২:৫০

বাঁধ রক্ষায় দিনরাত তারা পরিশ্রম করছেন বলে জানান মারজান মিয়া। গ্রামের মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে জড়ো হয়ে বাঁধ রক্ষার্থে কাজ করছেন গ্রামবাসী।

কিশোরগঞ্জের ইটনায় জিওলের বাঁধে ফাঁটল দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া মৃগা ইউনিয়নের তেরাইল্ল্যের বাঁধও রয়েছে ঝুঁকিতে।

একই হাওরে দুটি বাঁধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় এই হাওরে জমি চাষাবাদ করা কৃষকরা। এ হাওরের পশ্চিম দিকে জিওলের বাঁধ আর পূর্বদিকে তেরাইল্ল্যের বাঁধ। একটি ভেঙে গেলে অপরটি টিকে থাকলেও পুরো হাওরটি তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কৃষকদের।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন বাঁধ রক্ষায় সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।

গত ৩ এপ্রিল থেকে উজানের ঢলে নেমে আসা পানিতে তলিয়ে গেছে জেলার নদীর তীরবর্তী চরাঞ্চল ও খালে বিলে চাষবাদ হওয়া জমির ফসল। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি ছোট হাওরের জমির ফসলও তলিয়ে গেছে।

কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় এখন পর্যন্ত ৭৫০ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে।

স্থানীয় কৃষকদের দাবি, তলিয়ে যাওয়া জমির পরিমাণ আরও বেশি।

ইটনা সদর ইউনিয়নের কৃষক শাহজাহান মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত দুই দিন আগেও বাঁধের অবস্থা ভালো ছিল। মঙ্গলবার রাতে প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে।

‘আল্লাহ আল্লাহ করে আর এক সপ্তাহ সময় পেলেই এই হাওরের ফসল কেটে শেষ করা যেত।’

ইটনা সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা আসলাম মিয়া বলেন, ‘গতকাল রাতে বৃষ্টিপাতের যে অবস্থা দেখেছিলাম তাতে এই বাঁধের আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলাম।

‘আজকে আবারও পানি বেড়েছে। আবার বৃষ্টির ভাবও আছে। আবার যদি বৃষ্টি হয় তবে বাঁধের আশা ছেড়ে দিতে হবে। এই অবস্থায় খুবই দুশ্চিন্তায় আছি।’

মৃগা ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মারজান মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মৃগা হাওরের তেরাইল্ল্যের বাঁধও রয়েছে ঝুঁকিতে। এই বাঁধ ভেঙে গেলে অন্যান্য বাঁধ ঠিক থাকলেও জিওলের হাওর তলিয়ে যাবে।’

বাঁধ রক্ষায় দিনরাত তারা পরিশ্রম করছেন বলে জানান মারজান মিয়া। গ্রামের মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে জড়ো হয়ে বাঁধ রক্ষার্থে কাজ করছেন গ্রামবাসী।

তিনি বলেন, ‘বৃষ্টি হলেই আতঙ্ক বাড়ে কৃষকের মনে। এ ছাড়া বৃষ্টির হওয়ার ফলে বাঁধ রক্ষায়ও বেগ পেতে হচ্ছে।’

মৃগা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আলী হোসেন বলেন, ‘এই হাওরের পশ্চিমদিকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে জিওলের বাঁধ আর পূর্বদিকে তেরাইল্ল্যের বাঁধ। এর যেকোনো একটি ভেঙে গেলে আরেকটি ঠিকে থাকলেও লাভ নেই। পুরো হাওরের ফসলই তলিয়ে যাবে নিমিষেই। এজন্য কৃষকেরা রাতদিন পরিশ্রম করছেন।’

কৃষি অফিসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জিওলের বাঁধ আর তেরাইল্ল্যের বাঁধের ওপর নির্ভর করছে এ উপজেলার চারটি ইউনিয়নের প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমির ফসল। এই বাঁধ ভেঙে গেলে ইটনার সদর ইউনিয়ন, জয়সিদ্দি ইউনিয়ন, মৃগা ইউনিয়ন ও ধনপুর ইউনিয়নের কৃষকদের প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

বাঁধ রক্ষায় কাজ করছেন গ্রামবাসী। ছবি: নিউজবাংলা

ইটনা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা উজ্জল সাহা বলেন, ‘গতকালও ধনু নদীতে পানি বেড়েছে। আবার গতরাত এবং সকালেও বৃষ্টি হয়েছে। এতে পানি বেড়েই চলেছে।

‘বাঁধগুলো এখনও সুরক্ষিত আছে। তবে নদীতে যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে বাঁধ ছাড়াই বিভিন্ন দিক দিয়ে অল্প অল্প করে হাওরে পানি প্রবেশ করছে। এখন যদি পানি আর না বাড়ে তাহলে কৃষকেরা ফসল ঘরে তুলতে পারবে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জিওলের বাঁধ রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড সেখানে কাজ করে যাচ্ছে। বাঁধের পাশেই আরেকটি বিকল্প বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। গতকালের বৃষ্টিতে বাঁধে খানিকটা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

‘বাঁধের গোড়া মজবুত করতে সেখানে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু ভরাট করা হচ্ছে। শত শত শ্রমিকও প্রতিনিয়ত কাজ করছে। বাঁধের গোড়ায় মাটি ভর্তি বস্তাও ফেলা হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তেরাইল্ল্যের বাঁধ রক্ষায়ও কাজ করা হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। তারপরেও আল্লাহর ওপরই শেষ ভরসা।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ছাইফুল আলম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে আসা তথ্যমতে জেলার ৭৫০ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে শুধু ইটনা উপজেলার ৩৭০ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত পুরো জেলায় ৪০ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে।

‘হাওরের কৃষকদের সঙ্গে আমাদের কর্মকর্তারা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। আবারও বৃষ্টি হলে বিভিন্ন হাওরের ফসল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই যেসব জমির ধান ৭০ থেকে ৮০ ভাগ পেকেছে, সেসব ধান দ্রুত কেটে ফেলার জন্য কৃষকদের বলা হয়েছে।’

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, ‘উজানের ঢলে নদীর তীরবর্তী চরে এবং নিচু জমিতে পানি ঢুকে পড়েছে। ধনু নদীতে পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাওয়ার ফলে পাহাড়ি ঢলের পানি নিম্নাঞ্চলসহ মোহনায় ছড়িয়ে পড়েছে। নদীর গভীরতা ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর আমরা লিখব, যাতে এই নদীর তলদেশ খনন করা হয়।’

এ বিভাগের আরো খবর