বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘মরে গেছে কোচপাড়ার মুড়ি’

  •    
  • ২০ এপ্রিল, ২০২২ ১২:২৮

মানিক বলেন, ‘চার বছর আগেও দিনে এক শ কেজি চাল ভেজে মুড়ি করতাম আমরা। রমজান মাসে ১২৫ কেজি চালেরও মুড়ি করতে হয়েছে। প্রতিদিনের মুড়ি প্রতিদিন বিক্রি হয়ে যেত। এখন এক বস্তা মানে ৫০ কেজি চালের মুড়ি বিক্রি করতে সময় লাগে এক সপ্তাহ।’

একসময় মধ্যরাত হলেই কোচপাড়ায় শুরু হতো মুড়ি ভাজা। গরম বালুতে চাল দিলেই তা মুহূর্তে হয়ে উঠত মুড়ি। মাটির চুলার আগুন আর মুড়ি ফোটার হালকা শব্দ মিলে তৈরি হতো ছন্দ।

এখন সেই ছন্দে হয়েছে পতন। মুড়ি ভাজা চলে শুধু তিনটি পরিবারে। বাকি পরিবারগুলো পেশা বদলে ফেলেছে।

নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার ধর্মপাল ইউনিয়নের কোচপাড়ার মুড়ি বিক্রি হতো জেলার বাইরের বাজারেও।

এখন সেই গ্রামেরই অনেকে বলছেন, মরে গেছে এই এলাকার মুড়ি। চার বছর আগেও এলাকার ছয় শ মানুষ মুড়ি ভেজে সংসার চালাত। এখন তাদের কেউ রিকশা বা ভ্যান চালান, কেউ জেলায় বা বাইরে দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন।

এমন পরিবর্তনের কারণ হিসেবে তারা দায়ী করছেন অটোমেশিনে ভাজা কম দামের মুড়ি ও করোনা মহামারিকে।

ধর্মপাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু তাহের নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কোচপাড়ার মানুষের হাতে ভাজা মুড়ির বিশেষ কদর ছিল মানুষের কাছে। এই মুড়ির স্বাদ অন্য রকম। তবে অটোমেশিনের মুড়ি কম দামে পাওয়া যাওয়ায় এখানকার মুড়ির কদর কমে গেছে। সেই সঙ্গে করোনা মহামারিতে অনেকেই পুঁজি হারিয়ে ফেলেছেন।’

এখনও যারা মুড়ি ভাজার পেশায় টিকে রয়েছেন তারা হলেন মানিক রায়, বেনাট রায় ও সুবেধ রায়।

মানিক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চার বছর আগেও দিনে এক শ কেজি চাল ভেজে মুড়ি করতাম আমরা। রমজান মাসে ১২৫ কেজি চালেরও মুড়ি করতে হয়েছে। প্রতিদিনের মুড়ি প্রতিদিন বিক্রি হয়ে যেত। এখন এক বস্তা মানে ৫০ কেজি চালের মুড়ি বিক্রি করতে সময় লাগে এক সপ্তাহ।’

সুবেধ বলেন, ‘অটোমেশিনের মুড়ি সাইজে বড়, দামে কম। কম দামে পাওয়ায় ব্যবসায়ীরা মেশিনের মুড়ি কেনেন। আমাদের মুড়ি পড়ে থাকে। আগে বস্তাপ্রতি এক হাজার টাকা লাভ আসত। এখন তার অর্ধেকও আসে না। সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় খরচ বাড়লেও মুড়ির দাম সেভাবে বাড়েনি।’

প্রতি বস্তা হাতে ভাজা মুড়ি ও মেশিনের মুড়ির দামের পার্থক্য ২০০ টাকা বলে জানান বেনাট। হাতে ভাজা মুড়ি বিক্রি হয় ২৩০০ টাকায় আর মেশিনে ভাজা ২১০০ টাকায়।

স্থানীয় অঞ্জনা রায় জানান পুরোনো দিনের কথা। বলেন, ‘এই তো কয়েক বছর আগেও এই এলাকায় এলে মুড়ির গন্ধ পেত মানুষ। বাড়ি বাড়ি ভাজা হতো মুড়ি। পরিবারের সবাই মিলে এই কাজ করত। অল্প পুঁজিতে লাভ বেশি ছিল। এখন আর সেই দিন নেই।’

তিলোবালা বলেন, ‘আমি আর আমার স্বামী মিলে মুড়ি ভাজতাম। কাজের সহযোগিতার জন্য অন্যদেরও ডেকে আনতাম। মুড়ি ভেজে আর সংসার চালাতে না পারায় আমার স্বামী এখন দিনমজুরি করে।’

মহেন রায় জানান, ব্যাপক চাহিদার কারণে আগে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ব্যবসায়ীরা মুড়ি কিনে আনত। এখন যারা মুড়ি ভাজেন তারাই বাজারে গিয়ে দিয়ে আসেন।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প উন্নয়ন করপোরেশনের (বিসিক) উপমহাব্যবস্থাপক হুসনে আরা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মুড়ি ভাজার সঙ্গে যারা জড়িত আমরা তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। আমাদের কাছ থেকে তারা বিভিন্ন পরামর্শ নেন। কেউ যদি মনে করেন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঋণ নেয়ার সুযোগ আছে, তাহলে তারা আমাদের কাছে আসতে পারেন।’

এ বিভাগের আরো খবর