বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সাভারে ডুবেছে ২৫০ হেক্টর জমির ধান

  •    
  • ১৯ এপ্রিল, ২০২২ ১৩:২৫

কৃষক সুরুজ মিয়া বলেন, ‘প্রায় ৮০ হাজার টাকা খরচ করে ৪ পাকি জমিতে ২৮ ধান লাগাইছিলাম। আর ১৫-২০ দিন গেলেই ধান পাইকা যাইতো। কিন্তু হঠাৎ উজানের পানি আইসা নামায় ঢুইকা পড়ছে। আমার পুরা ক্ষ্যাত ডুইবা গেছেগা। আইজ কোনরকমে দেড় পাকি জমির ধান তুইলা আধাপাকাই কাইটা আনছি। পরে সেই ধান মাড়াই করতাছি। এমনিতেইতো সব শ্যাষ হইয়া গেছে তার ওপর কামলা খরচ দিয়া আবার কাঁচা ধান কাইটা আনা লাগতাছে।’

উজানের ঢলে হাওরে হঠাৎ তলিয়ে গেছে হাজার শত শত হেক্টর জমির ধান। বাধ্য হয়েই কাঁচা ও আধাপাকা ধান কেটে নিতে শুরু করেছেন কৃষকরা। ঢাকার সাভার শিল্পাঞ্চলেও দেখা গেছে এমন চিত্র।

তুরাগের পানিতে দুই শতাধিক হেক্টর জমির বোরো ধান ফসল তলিয়ে গেছে। কাঁচা অবস্থায় সেসব ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত অনেক কৃষক।

ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল ধামসোনা ইউনিয়নের সুবন্দি নামাপাড়া এলাকায় মঙ্গলবার গিয়ে দেখা যায় চাষিদের হাহাকার। এ ছাড়া আমিনবাজার, কাউন্দিয়া, আশুলিয়া ও ইয়ারপুর ইউনিয়নে দুশ্চিন্তার ভাজ পড়েছে চাষিদের কপালে।

কৃষি অফিস জানিয়েছে, সাভার শিল্পাঞ্চল হলেও মোট আবাদি জমির পরিমান ১৩ হাজার ৫৮৫ হেক্টর। এর মধ্যে ৮ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ করেন কৃষকরা। আবাদের আওতায় আসা ২৫০ হেক্টরের বেশি জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, সুবন্দি ও শ্রীপুরসহ আশপাশের এলাকার প্রায় এক হাজার কৃষক এক ফসলি নিচু জমিগুলোতে বছরের পর বছর ধান চাষ করে আসছেন। প্রায় তিন-চার কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এসব জমিতে এ বছর ধান আবাদ হয়েছে। চৈত্র মাসে হঠাৎ নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধিতে তাদের সব ফসল তলিয়ে গেছে। এতে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা।

সুবন্দি এলাকায় পানির কারণে আধাপাকা ধান কেটে এনে মারাই করতে দেখা যায় কৃষক সুরুজ মিয়াকে। চার পাকি (বিঘা) জমির সব ধানের গাছ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চোখেমুখে তার বিষাদের ছাপ।

সুরুজ মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রায় ৮০ হাজার টাকা খরচ করে ৪ পাকি জমিতে ২৮ ধান লাগাইছিলাম। আর ১৫-২০ দিন গেলেই ধান পাইকা যাইতো। কিন্তু হঠাৎ উজানের পানি আইসা নামায় ঢুইকা পড়ছে। আমার পুরা ক্ষ্যাত ডুইবা গেছেগা। আইজ কোনরকমে দেড় পাকি জমির ধান তুইলা আধাপাকাই কাইটা আনছি। পরে সেই ধান মাড়াই করতাছি। এমনিতেইতো সব শ্যাষ হইয়া গেছে তার ওপর কামলা খরচ দিয়া আবার কাঁচা ধান কাইটা আনা লাগতাছে।’

আব্বাস আলী নামে আরেক কৃষক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুই বিঘা জমিতে ধান লাগাইছিলাম এবার। চৈত (চৈত্র) মাসে কুন (কোন) থাইকা পানি আইসা আমার সব জমির ধান তলায় গেছে। কোনোরকম এক বিঘা জমির ধান আধাপাকা অবস্থায় কামলা নিয়া কাটছি। আরেক বিঘা জমির ধান পানির নিচে তলাইয়া গেছেগা। ওই ধান কাটাইতেও আমার ৫ হাজার ট্যাকা খরচ হইছে। কুন থাইকা ক্যামনে পানি আসলো কেউ কইতে পারে না। এলাকার মুরব্বিরাও চৈত মাসে এমুন পানি দেহে নাই।

‘গত ২০ বছরে আমরাও চৈত মাসে এই সময় পানি দেহি নাই। সন্ধ্যার পর আর অনেক রাইতে দুইবার জোয়ার আহে (আসে)। তখন ধান পানির নিচে থাকে। আর দিনের বেলা পানি কইমা যায়। তহন ধানের শীষ কোনরকম দেহা যায়। আমাগো এলাকার পরায় সবার ধান তলায় গেছে। সবাই খুব ক্ষতিগ্রস্ত হইছে।’

সাভার উপজেলা কৃষি অফিসার নাজিয়াত আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হঠাৎ জোয়ারের পানি তুরাগ নদ দিয়ে এসে আমিনবাজার, কাউন্দিয়া, আশুলিয়া, ধামসোনা ও ইয়ারপুর ইউনিয়নের কিছু অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে। ধানটা এমন অবস্থায় আছে যে এখনও কাটার মতো অবস্থা হয়নি। তার আগেই পানিতে তলিয়ে গেছে। ২৫০ হেক্টরের বেশি জমির ধান পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

করণীয় কী এমন প্রশ্নে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আসলে আমরা দেখতেছি যে এরকম জোয়ারের পানি নরমালি আসে না। কিন্তু এবার পানিটা অনেক আরলি (আগে) চলে আসছে। যে কারণে ধানের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। জোয়ারের পানিটা আমিনবাজার ও কাউন্দিয়া বিস্তীর্ণ এলাকা দিয়ে এমন ভাবে আসে যে এটাকে বাধ দিয়ে আটকানো সম্ভব না। তবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কীভাবে সহযোগিতা করা যায় সেটা আমরা দেখব।’

এ বিভাগের আরো খবর