রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার রাত ১২টার দিকে এই সংঘর্ষ শুরু হয়। আধ ঘণ্টা ধরে দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে।
পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা শুরু করে। প্রথমে উভয় পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার শেল ছোড়ে পুলিশ। এক পর্যায়ে সংঘর্ষ থামলেও নিউমার্কেট এলাকাজুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
নিউমার্কেট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. সাহেব আলি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাত ১২টার দিকে ব্যবসায়ী ও ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ব্যবসায়ী ও ছাত্রদের দুই দিকে সরিয়ে দিয়েছি। কিন্তু কলেজ প্রান্ত থেকে ছাত্ররা ইট-পাটকেল ছুঁড়ে মারছে।’
সংঘর্ষ বাধার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কী কারণে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছে সে সম্পর্কে আমরা এখনো নিশ্চিত নই। তবে যতটা শুনেছি, নিউমার্কেটে একটি ফাস্টফুডের দোকানের দুই কর্মচারীর মধ্যে ঝগড়া বাধে। এ সময় তাদের একজন গিয়ে ছাত্রদের ডেকে আনে। ছাত্ররা ওই দোকানে গেলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাদের ঝগড়া শুরু হয়। এক পর্যায়ে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়।’
তবে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবি, কলেজের মাস্টার্স হলের দুই ছাত্রকে মারধর করেন নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরা। খবর পেয়ে কলেজের শিক্ষার্থীরা মার্কেটের সামনে এলে ব্যবসায়ীরা তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, পুলিশ ব্যবসায়ীদের পক্ষ নিয়ে তাদের দিকে একের পর এক টিয়ারশেল ছুড়ছে। সুযোগ পেয়ে ব্যবসায়ীরা পুলিশের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়ছে।
রাত দেড়টার দিকেও নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরা চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের সামনে অবস্থান নিয়ে থাকেন। আর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছিলেন কলেজের ফটকের সামনে।
রাত সোয়া ১টায় সরেজমিনে দেখা যায়, নিউমার্কেটের সামনে পুলিশের সঙ্গে অবস্থান করছেন ব্যবসায়ীরা। আর কলেজের সামনে অবস্থান করছেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। কিছুক্ষণ পরপরই শিক্ষার্থীরা পাথর নিক্ষেপ করছেন। ককটেলও ছোঁড়া হচ্ছে। পুলিশ পাল্টা গ্যাসগান ছুড়ছে। আর পুলিশের পাশে দাঁড়িয়েই ব্যবসায়ীরা শিক্ষার্থীদের দিকে পাথর ছুড়ছেন।
এদিকে রাত দেড়টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম ঘটনাস্থলে আসে। এরপর রাত ১টা ৪০ মিনিটের দিকে পুলিশ অ্যাকশনে যায়। পুলিশ টিয়ার গ্যাস ছুড়তে ছুড়তে চন্দ্রিমা মার্কেটের সামনে থেকে ঢাকা কলেজের দিকে অগ্রসর হলে পুলিশকে লক্ষ্য করে শিক্ষার্থীরা পাথর ও ককটেল ছুড়তে থাকে।
রাত ১টা ৪৫ মিনিটের দিকে ঘটনাস্থলে হাজির হয় পুলিশের জলকামান ইউনিট৷ এরপর পুলিশ এই ইউনিটকে সঙ্গী করে ঢাকা কলেজের দিকে অগ্রসর হয়।
ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ এবং হলের প্রাধ্যক্ষ রাত সোয়া ৩টার দিকে শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে কলেজ ক্যাম্পাসের দিকে নিয়ে যান।
এর আগে রাত ১টার দিকে মোশাররফ হাজারি নামের এক ছাত্র গুলিবিদ্ধ হন বলে অন্য শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন। মোশাররফ ম্যানাজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী।
এক শিক্ষার্থী জানান, পুলিশ যখন কলেজ গেটের কোনায় দাঁড়িয়ে কলেজের ভেতর টিয়ারগ্যাস আর রাবার বুলেট ছুড়েছে, তখন ওই শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হন।
শিক্ষার্থী আহতের ঘটনায় উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের শাস্তি দাবি করেছেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি না আদায় হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিউমার্কেট বন্ধ করে দেয়ার হুঁশিয়ারি দেন তারা।
পুলিশের রমনা জোনের এডিসি হারুন অর রশীদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুই ঘন্টা আগে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের কোনো একটা ইস্যু নিয়ে ঝামেলা শুরু হয়। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা রেসপন্স করি।
‘এসে দেখি ব্যবসায়ী এবং শিক্ষার্থীরা মুখোমুখি অবস্থায়৷ তাদের মধ্যে ইট পাটকেল এবং লাঠিসোটা নিয়ে সংঘর্ষ চলছে। আমরা আমাদের মতো পদক্ষেপ নিয়ে উভয় পক্ষকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হই। আড়াই ঘণ্টা পর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের কলেজের মধ্যে এবং ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে ঢুকে যায়।’
আহতের সংখ্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘উভয় পক্ষে আহতের সংখ্যা কতো আনুমানিক সেটা এখন বলা যাচ্ছে না।’
কোনো আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি সম্পূর্ণ শান্ত হলে আমরা ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে ঘটনার সুত্রপাত কিভাবে হয়েছে, সেটি বিচার বিশ্লেষণ করে তারপর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’