সুদের টাকার জন্য সন্তানকে বিক্রি করে দেয়ার ঘটনায় করা শিশু পাচার মামলায় লাকী আক্তারকে এক দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম কাজী মহসিনের আদালতে সোমবার বিকেলে আসামিকে তুলে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক এ আদেশ দেন।
আদালত পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি নিউজবাংলাকে জানান, শিশু পাচার মামলার প্রধান আসামি লাকীকে এক দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে শিশুটিকে তার মায়ের জিম্মায় দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এর আগে সদর উপজেলার ফতুল্লার মাসদাইর গাবতলী এলাকা থেকে লাকীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) নাজমুল নিউজবাংলাকে জানান, সুদের টাকা আদায় করতে নারীর ছেলেকে বিক্রি করার ঘটনায় রোববার শিশু পাচার আইনে মামলা হয়। ওই মামলায় গ্রেপ্তার প্রধান আসামি লাকীকে আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে রিমান্ডে পাঠান। বিধি মোতাবেক শিশুকে তার মায়ের কাছে দেয়া হয়েছে।
ফতুল্লা মডেল থানায় সংবাদ সম্মেলন করে রোববার দুপুরে পুলিশ জানায়, শনিবার ভোরে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থানা এলাকার দক্ষিণ পাশা এলাকা থেকে ওই শিশুকে উদ্ধার করা হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে সুদের টাকার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হলে রানীর ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়ে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার আলীগঞ্জ পিডব্লিউডি কলোনিতে।
সংবাদ সম্মেলনে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান বলেন, ‘সুদের টাকার জন্য বাচ্চা বিক্রি করে দেয়া হয়, স্থানীয়দের মাধ্যমে এমন খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে সেখান থেকে একজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পরে তার দেয়া তথ্যের মাধ্যমে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।’
ঘটনার বর্ণনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, অভাবের কারণে ওই এলাকার লাকী নামে এক নারীর কাছ থেকে দুই বছর আগে ৫ হাজার টাকা ঋণ নেন রানী। সেই ঋণের টাকার শুধু সুদ বাবদ ২ লাখ ১০ হাজার টাকা রানীর কাছ থেকে আদায় করা হয়। এরপর আরও ১ লাখ ৩ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে বলে রানীর কাছে দাবি করেন লাকী। এ জন্য তাকে নানা সময় মারধরের ভয়ভীতি দেখানো হতো।
তদন্তে পাওয়া গেছে, রানীর দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়েছেন লাকী নামের ওই নারী। তিনি মূলত ঋণ দিয়ে মানুষের কাছ থেকে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ আদায় করে আসছিলেন। তাকে সহযোগিতা করতেন তার বাবা মোহাম্মদ আজাদ ও স্বামী হজরত আলী। তারা দুজন চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারী। কলোনির আরও অনেক দরিদ্র মানুষের কাছ থেকে এভাবে টাকা আদায় করতেন তারা।
অভাবের কারণে ৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন ইটভাটার শ্রমিক রানী আক্তার। দুই বছর ধরে টানছিলেন ঋণের সেই সুদের বোঝা। সময়মতো টাকা দিতে না পারায় তার এক দিনের নবজাতককে বিক্রি করে দেয়া হয়। প্রায় এক বছর পর রানী তার সেই সন্তানকে ফিরে পান।