জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায় নির্মিত ৭টি রেলস্টেশনের মধ্যে ৩টির সকল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব রেলস্টেশন বন্ধ থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নিম্ন আয়ের সাধারণ যাত্রীদের। এছাড়া গরিবের ট্রেন খ্যাত ধলেশ্বরী এক্সপ্রেস মেইল (৭৫-আপ, ৭৬-ডাউন) ট্রেনটিও দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে ময়মনসিংহ-ভূঞাপুর লাইনে চলাচল করা সকল যাত্রীদের প্রতিনিয়ত সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চারদিক জনশূন্য, ভূতুরে পরিবেশ। স্টেশনের সব কক্ষই তালাবদ্ধ। নেই বিদ্যুতের কোনো ব্যবস্থা। প্রতিটি রেলস্টেশনে একজন স্টেশন মাস্টার ও সহকারী মাস্টার এবং চারজন করে পয়েন্টম্যান থাকার কথা থাকলেও এসব স্টেশনে কেউ নেই। ফলে যাত্রীদের সহায়তা করা ও টিকিট কাটার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। সরিষাবাড়ী উপজেলায় আন্তঃনগর যমুনা, অগ্নীবিনা ও জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল করে। এছাড়া ময়মনসিংহ এক্সপ্রেস, ধলেশ্বরী এক্সপ্রেস (বেশ কিছুদিন ধরে বন্ধ), চট্টগ্রাম মেইল ৩৭ আপসহ ৩টি লোকাল ট্রেনসহ মোট ৬টি ট্রেন চলাচল করে। বন্ধ এসব রেলস্টেশনগুলোতে ২টি লোকাল ট্রেন সামান্য সময়ের জন্য যাত্রা বিরতি করলেও অন্য ট্রেনগুলো যাত্রা বিরতি করে না।
এ উপজেলায় রয়েছে ৭টি রেলস্টেশন। তার মধ্যে ১৮৯৯ সালের ব্রিটিশ শাসনামলে চালু হওয়া বাউসী, বয়ড়া ও নবনির্মিত শহীদ নগর বারইপটল স্টেশনে জনবল সংকটের কারণে সকল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে বন্ধ থাকা এসব স্টেশনে চলে ধান মাড়াই, খড় শোকানো ও চুরি, জুয়া, মাদকসেবনসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। স্টেশন বন্ধ থাকায় পড়ে থাকা মূল্যবান সরঞ্জাম নষ্ট হচ্ছে। এসব রেলস্টেশন দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় ক্ষোভ জানিয়েছে স্থানীয়রা।
এদিকে ময়মনসিংহ, জামালপুর, টাঙ্গাইল রেলপথে চলাচলকারী ধলেশ্বরী এক্সপ্রেস ট্রেনটি ২০১২ সালের ৬ জুলাই উদ্বোধন করা হয়। ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে আসা জামালপুর, টাঙ্গাইলে চলাচলকারী ধলেশ্বরী এক্সপ্রেস মেইল ট্রেনটি ইঞ্জিন সংকটের অজুহাতে ২০২৪ সালের ২৮ মে থেকে বন্ধ রয়েছে। ফলে এই রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন হাজার হাজার যাত্রী। ধলেশ্বরী এক্সপ্রেস ময়মনসিংহ থেকে দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে জামালপুর এবং টাঙ্গাইলের হেমনগর, ভূঞাপুর ও ইব্রাহিমাবাদ (পূর্বের নাম বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব) রেলওয়ে স্টেশনে চলাচল করত। এসব রুটে চলাচলকারী যাত্রীদের ট্রেনের ভাড়ার থেকে ২-৩ গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে বাধ্য হয়ে অন্য যানবাহনে করে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে।
ট্রেনের নিয়মিত যাত্রী মঞ্জুরুল ইসলাম, রিপন মণ্ডলসহ একাধিক যাত্রী বলেন, ‘ট্রেন মূলত নিম্ন আয়ের মানুষদের একমাত্র যাতায়াতের মাধ্যম। ট্রেনে অন্য যানবাহনের থেকে কম ভাড়ায় যাতায়াত করা যায়। নিরাপদ ভ্রমণ হিসেবে ট্রেনে আমরা কম টাকায় যাতায়াত করি। আমাদের যাতায়াতের কষ্টের বিষয়টির গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে এই ট্রেনটি চালুর দাবি জানাচ্ছি।’
বন্ধ থাকা নবনির্মিত শহীদ নগর বারইপটল স্টেশন এলাকার সুমন মিয়া, শাওন আহমেদ বলেন, ‘স্টেশনটি নির্মাণের পর স্টেশন মাস্টারসহ রেলের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকত। বেশ মুখরিত ছিল এই স্টেশনটি। তবে স্টেশনটি উদ্বোধনের কয়েকদিন পর থেকেই বন্ধ হয়ে যায়। ফলে কোটি কোটি টাকা খরচ করে নির্মিত রেল ভবন, কোয়ার্টার ও স্টেশনের মূল্যবান যন্ত্রপাতি, সরকারি আসবাবপত্র পরে পরে নষ্ট হচ্ছে।’
বন্ধ থাকা বয়ড়া স্টেশনের ব্যবসায়ী সুলতান মিয়া বলেন, ‘ব্রিটিশ আমল থেকে এই বয়ড়া রেলস্টেশন ছিল। এক সময় জনপ্রিয় ও জনসমাগম ছিল প্রচুর এই বয়ড়া স্টেশনে। তখন সকল ট্রেন যাত্রাবিরতি করত। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এই স্টেশন বন্ধ থাকায় তালাবদ্ধ অবস্থায় পরে আছে। আগের মতো লোকও আসে না ব্যবসাও নেই।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে (ঢাকা) অতি. মহাপরিচালক (অপারেশন) মো. নাজমুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, জনবল সংকটের কারণেই অনেক স্টেশন বন্ধ আছে। যমুনা সেতুর পূর্ব ইব্রাহীমাবাদ রেলস্টেশনের নির্মাণ কাজের জন্য ময়মনসিংহ থেকে চলাচলকারী ধলেশ্বরী মেইল ট্রেনটি বন্ধ রাখা হয়েছে। বর্তমানে ইব্রাহীমাবাদ রেলস্টেশনের নির্মাণকাজ অনেকটাই শেষ হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই হয়তো বন্ধ থাকা ধলেশ্বরী এক্সপ্রেস ট্রেনটি পুনরায় চালু করা হবে।