বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আমরা অবশ্যই আন্দোলন গড়ে তুলতে সক্ষম হব: ফখরুল

  •    
  • ১৮ এপ্রিল, ২০২২ ১৭:৪৭

আমাদের সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে আগামী দিনে অবশ্যই সেই ধরনের একটা আন্দোলন তৈরি করতে সক্ষম হব, যে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা যে ভয়াবহ দানব আমাদের ওপর চেপে বসে আছে, তাকে পরাজিত করে সত্যিকার অর্থেই জনগণের একটি প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হব, পার্লামেন্ট তৈরি করতে সক্ষম হব।’

নির্বাচন বানচাল ও সরকার পতনের আন্দোলনে নেমে দুই দফা খালি হাতে ঘরে ফেরা বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আশা করছেন, আগামীতে তারা একটি সফল আন্দোলন গড়ে তুলতে সক্ষম হবেন, যে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন হবে।

দেশে এখন ‘অক্টোপাসের মতো দম বন্ধ করার পরিবেশ’ বিরাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‘এই অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।’

সোমবার গুলশানে বিএনপির আয়োজিত এক আলোচনায় দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরতে গিয়ে এই মন্তব্য করেন ফখরুল।

বিএনপির সাবেক সাংসদ ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়ার ১০ বছরপূর্তি উপলক্ষে ‘ইলিয়াস আলীসহ সকল গুমের শিকার ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দাও’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে একটি ভিডিও ক্লিপ দেখানো হয়, যাতে দাবি করা হয়, দলটির ছয় শ নেতা-কর্মী গুম হয়েছেন।

২০১৭ সালে ১৭ এপ্রিল বনানীর আমতলীর কাছ থেকে ইলিয়াস আলী ও তার গাড়ি চালক আনসার আলীকে অপহরণের অভিযোগ করছে বিএনপি। এরপর থেকে তাকে আর ফিরে পাওয়া যায়নি। এই ঘটনার জন্য বিএনপি দায়ী করছে সরকারকে।

বিএনপি নেতা বলেন, ‘প্রতিদিন বাংলাদেশে মানুষের অধিকার নিয়ে মানুষ কথা বলার চেষ্টা করছে, বলতে পারছে না। তাঁকিয়ে দেখুন চারদিকে একটা ভয়াবহ রকমের মতো একটা অক্টোপাসের মতো সমস্ত কিছু দম বন্ধ করার একটা পরিবেশ সৃষ্টি করে দিয়েছে।

‘এই অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। আমরা চেষ্টা করছি। আমাদের সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে আগামী দিনে অবশ্যই সেই ধরনের একটা আন্দোলন তৈরি করতে সক্ষম হব, যে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা যে ভয়াবহ দানব আমাদের ওপর চেপে বসে আছে, তাকে পরাজিত করে সত্যিকার অর্থেই জনগণের একটি প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হব, পার্লামেন্ট তৈরি করতে সক্ষম হব।’

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপি আন্দালনে নামে ২০১২ সালেই। ২০১৩ সাল থেকে ভোটের দিন পর্যন্ত আন্দোলন হয়ে উঠে সহিংস। সেটি চলে ভোট শেষে আরও এক সপ্তাহ।

তবে নতুন সরকার গঠন হলে আন্দোলন স্থগিত করে বিএনপি। ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি সরকারের এক বছর পূর্তির দিন থেকে আবার অনির্দিষ্টকালের অবরোধ ও পরে হরতাল ও অবরোধ ডাকে দলটি। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই কর্মসূচি অকার্যকর হয়ে পড়ে। ওই বছর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়ার পর আন্দোলনের বিষয়টি আর মাথায় থাকেনি, যদিও কর্মসূচি তুলে নেয়া হয়নি।

২০১৮ সালের ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপি আবার আন্দোলনের কথা বললেও শেষ পর্যন্ত দলীয় সরকারের অধীনেই ভোটে আসে দলটি। তবে সেই নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি অভিযোগ তুলে ভোট শেষে আবার আন্দোলনের ঘোষণা দেয়া হয়, যদিও সেই ধরনের কোনো কর্মসূচির ঘোষণা আসেনি।

গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে আবার সরকার পতনের এত দফা আন্দোলনে নামার কথা জানাতে থাকেন বিএনপির নেতারা। তবে করোনার বিধিনিষেধের করণে কর্মসূচিগুলো আর গতি পায়নি।

করোনার তৃতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার পর বিধিনিষেধ প্রত্যাহার হলে বিএনপি নেতারা আবার আন্দোলন গড়ে তোলার কথা বলছেন।

ফখরুল বলেন, ‘আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের দেশকে রক্ষা করবার জন্য, আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করবার জন্য, আমাদের গণতন্ত্রকে ফিরে পাবার জন্য এবং গুম হয়ে যাওয়া সন্তানদের ফিরে পাওয়ার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রাম করি, আন্দোলন করি।

‘একটা সত্যিকার অর্থেই গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে নিয়ে আসি যেখানে জবাবদিহিতা থাকবে যেন এই ধরনের কোনো মা কাঁদবে না, কোনো সন্তান তার বাবাকে খুঁজবে না-এই পরিবেশ আমরা তৈরি করি।’

গুম হওয়া পরিবারের খবর রাখেন তারেক রহমানযারা ‘গুম হয়ে গেছেন’ তারা ফিরে আসবেন- এমন আশা করছেন বিএনপি নেতা। বলেন, ‘আমাদের গুম হয়ে যাওয়া পরিবারগুলো আছেন তাদের স্বজনদের কথায় আমরা কষ্ট পেলেও অনুপ্রাণিত হই। তারা যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, এখনও করে যাচ্ছেন সেটা আমাদেরকে এই সংগ্রামে আমাদের এই যুদ্ধে সাহস যোগাবে এবং আমরা সামনের দিকে আরও এগিয়ে গিয়ে সফল হতে পারব।’

ফখরুল বলেন, ‘আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব প্রত্যেকটি গুম হওয়া পরিবারের খবর রাখেন। আমাদের মানবাধিকার সেল তারা চেষ্টা করে বিষয়টাকে আন্তর্জাতিক মহলে নিয়ে এসে কাজ করার জন্যে।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘গুম করে নানা নির্যাতন করা এমনকি থানায় জিডি পর্যন্ত করতে দেয় নাই- আজকে কিন্তু এই বিষয়গুলো আর গোপন থাকে নাই। গুম হওয়া পরিবারে কান্নায় আমরা ভাষাহীন।

‘এই অবস্থা থেকে যদি মুক্তি পেতে হলে বর্তমানে এই স্বৈরাচারি ফ্যাসিস্ট সরকারের হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করতে হবে। এই কান্নার শেষ দেখতে হলে এই সরকারকে বিদায় করতে হবে।’

বিএনপির মানবাধিকার বিষয়ক কমিটির সদস্য ফারজানা শারমিন পুতুল ও ইলিয়াস আলীর ছেলে আবরার ইলিয়াসের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মঈন খান, গণ-অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ এবং বিএনপির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদও বক্তব্য রাখেন।

এই অনুষ্ঠানে ‘গুম হওয়া নেতা-কর্মীদের’ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা, সাইদুর রহমানের বাবা শফিকুর রহমান, মাজহারুল ইসলাম রাসেলের ভাই মশিউর রহমান লোটাস, পারভেজ হোসেনের ছোট মেয়ে আদিবা হোসেন হৃদি, নুরুজ্জামান রনির স্ত্রী মনিসা, মনির হোসেনের ভাই ওবায়দুল্লাহ হোসেন তাদের অনুভূতির কথা তুলে ধরেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, জ্যেষ্ঠ নেতা শাহজাহান ওমর, জয়নুল আবদিন ফারুক, শাহজাদা মিয়া, ইসমাইল জবিউল্লাহ, অধ্যাপক সাহিদা রফিক, অধ্যাপক তাজমেরী এস এ ইসলাম, অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, অধ্যাপক মামুন আহমেদ, শ্যামা ওবায়েদ, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, মীর হেলাল, ফরিদা ইয়াসমীন, আবেদ রাজাসহ কেন্দ্রীয় নেতারা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে ঢাকায় যুক্তরাজ্য ও কানাডা দূতাবাসের কূটনীতিকরা ছিলেন।

এ বিভাগের আরো খবর