বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কমিউনিটি পুলিশের নামে ‘চাঁদাবাজি’

  •    
  • ১৮ এপ্রিল, ২০২২ ১৭:২২

বকশিশ তোলার বিষয়টি টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি জানেন বলেও দাবি করেছেন কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির মজিবর। তিনি বলেন, ‘আমরা থানায় জানিয়েই এই টাকা তুলছি। এটা কোনো চাঁদা নয়। ঈদ উপলক্ষে বকশিশ।’

গাজীপুরের টঙ্গী বাজারের ব্যবসায়ীরা কমিউনিটি পুলিশের নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলেছেন বাজারের নেতাদের বিরুদ্ধে। বাজারে কমিউনিটি পুলিশিং কমিটি এই চাঁদা তুলছে বলে জানা গেছে। তবে পুলিশ জানিয়েছে, কমিউনিটি পুলিশের কোনো কমিটি নেই, তাদের চাঁদা তোলার কোনো নিয়ম নেই।

সাপ্তাহিক হাট উপলক্ষে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকার, ব্যবসায়ীরা এই টঙ্গী বাজারে আসেন।

সেখানে মিতালি ফিলিং স্টেশনের সামনে থেকে শুরু করে হাজী মার্কেট, ভাওয়াল বিপণি মার্কেট, নোয়াখালী মসলা পট্টি, বস্তা পট্টি, তুরাগ নদীর পাড় রোড, বৌ- বাজার রোড, সিরাজউদ্দীন সরকার বিদ্যানিকেতন রোড, গরুর হাট রোডসহ বিভিন্ন অলিগলিতে বিট ভাড়া নিয়ে প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার দোকান বসানো হয়।

বাজারের যান চলাচল ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ‘পুলিশই জনতা, জনতাই পুলিশ’- এই স্লোগানে ২০১৪ সালে চালু হয় কমিউনিটি পুলিশিং সেবা।

তবে বাজার ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কমিউনিটি পুলিশের জন্য তাদের মাসে মাসে গুনতে হচ্ছে চাঁদা।

নরসিংদী থেকে আসা কাপড় ব্যবসায়ী সোহরাব মিয়া বলেন, ‘বাজারের নির্ধারিত খাজনা পরিশোধের পরও নানা অজুহাতে টাকা নেয়া হচ্ছে। গত দুই সপ্তাহ ধরে কমিউনিটি পুলিশের নামে প্রত্যেক দোকান ও বিট থেকে ২০ টাকা করে চাঁদা তোলা হচ্ছে। এই বাজারে আমাদের সঙ্গে রীতিমতো জুলুম করা হচ্ছে।’

আরেক ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা সপ্তাহে এক দিন হাটে আসি। এখানে কাউকে চিনিও না। যে যার মতো এসে চাঁদা দাবি করে। বাজারের খাজনার টাকা ছাড়াও বিটপ্রতি সপ্তাহে ৫০০ টাকা দিতে হয়। বিট ভাড়া নিতে অগ্রিম দিতে হয় ১০ হাজার থেকে শুরু করে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

‘এ ছাড়া বিদ্যুতের লাইটপ্রতি ১০০ টাকা, হিজড়া বাবদ ২০ টাকা, এখন নতুন করে যোগ হয়েছে কমিউনিটি পুলিশের চাঁদা। চাঁদা আদায় করছে বাজারের প্রভাবশালীরা, তাই বাজারের টহল পুলিশও তাদের কিছু বলে না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, মাসে মাসেও ১০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা তোলা হয়। বলা হয় কমিউনিটি পুলিশদের বেতন দেয়ার জন্য এই টাকা।

সরেজমিনে রোববার মধ্যরাতে ওই বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন দোকানে চাঁদা তুলছেন দুজন। আলাপ করে জানা যায় তাদের নাম মো. ফজলু ও মো. কবির।

কী কাজের জন্য টাকা নেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে ফজুল জানান, চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমানের নির্দেশে তারা কমিউনিটি পুলিশের জন্য ২০ টাকা করে তুলছেন। করোনার সময় টাকা নেয়া বন্ধ ছিল, গেল দুই সপ্তাহ ধরে আবার চালু হয়েছে। প্রতি সপ্তাহেই তারা দোকান ঘুরে ঘুরে টাকা নেন।

ফজলু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত সপ্তাহে মোট ১০ হাজার টাকা তুলেছি। ভোররাত পর্যন্ত টাকা উঠানোর পর সব টাকা জমা দেয়া হয় বাজার কমিটির নেতা মজিবুর রহমানের কাছে। তিনি আমাদের হাজিরা হিসেবে ১ হাজার টাকা দিয়ে বাকি টাকা বুঝে নেন।’

চাঁদা তোলা আরেক যুবক কবির বলেন, ‘বাজারের যানজট নিরসনে কমিউনিটি পুলিশের সদস্যরা কাজ করে। তাদের জন্য দোকানপ্রতি ২০ টাকা তোলা হয়। বাজার কমিটির নেতারা পুলিশের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই এই টাকা তোলার নির্দেশ দিয়েছেন।’

চাঁদা নয়, কমিউনিটি পুলিশের জন্য ঈদের বকশিশ তোলা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির কোষাধ্যক্ষ ও টঙ্গী বাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘টঙ্গী বাজারের যানজট নিরসনে কমিউনিটি পুলিশের ৮ সদস্য কাজ করে। তাদের জন্য ঈদের বকশিশ হিসেবে দোকানপ্রতি ২০ টাকা তোলা হচ্ছে।’

বকশিশ তোলার বিষয়টি টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি জানেন বলেও দাবি করেছেন মজিবর। তিনি বলেন, ‘আমরা থানায় জানিয়েই এই টাকা তুলছি। এটা কোনো চাঁদা নয়। ঈদ উপলক্ষে বকশিশ।’

তবে মাসে মাসে টাকা তোলার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেছেন।

টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদ মাসুদ বলেন, ‘কমিউনিটি পুলিশের নামে চাঁদা তোলার কোনো নিয়ম নেই। চাঁদা তোলার বিষয়ে কেউ অভিযোগ দিলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।’

টাকা তোলার বিষয়টি ওসি জানেন বলে মজিবরের যে দাবি, তা সত্য নয় বলেও জানান তিনি। বলেন, ‘কমিউনিটি পুলিশের কোনো কমিটিই নেই। টাকা তোলার বিষয়ে আমি জানি না।’

এ বিভাগের আরো খবর