বাঁধ উপচে হাওরে ঢুকছে পানি; তলিয়ে যাচ্ছে ধান। এ নিয়ে সুনামগঞ্জের কৃষকদের মধ্যে চলছে হাহাকার।
এরই মধ্যে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ফেসবুক পেজ থেকে পোস্ট করা হয়েছে একটি স্ট্যাটাস, যা হাওরবাসীর আতঙ্ক বাড়িয়েছে, তবে পাউবোর এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পোস্টটি ভুলবশত দেয়া হয়ে থাকতে পারে। সেটি ডিলিট করা হয়েছে।
রোববার রাতে পেজের ওই পোস্টে লেখা হয়, ‘আজ সুনামগঞ্জের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত। আজ হল নকআউট পর্ব। কোন হাওর টিকে গেলো, টিকে গেলো। কৃষক ধান আল্লাহ মাপ কর। বাঁধে পানি ছুঁইছুই...।’
পোস্টের বিষয়ে জানতে চাইলে পাউবো সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামসুদ্দোহা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটি আমাদেরও নজরে এসেছে, তবে এই পোস্ট কে দিয়েছে তা জানি না। নজরে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা তা ডিলিট করে দিয়েছি।
‘এটি ভুলবশত কেউ দিতে পারে। আবার অন্য কেউ আমাদের পেজকে ট্যাগ করার কারণেও পেজে দেখাতে পারে, তবে এখন আর এটি আমাদের পেজে দেখা যাচ্ছে না।’
হাওরবাসীর জন্য রোববার রাত ঝুঁকিপূর্ণ জানিয়ে শামসুদ্দোহা বলেন, ‘ঢল অব্যাহত থাকায় নদীর পানি বেড়েই চলছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বাঁধে আর কাজ হবে না। বাঁধ উপচে বেশিরভাগ হাওরই তলিয়ে যাবে।’
এ কারণে দ্রুত হাওরের ধান কেটে নেয়ার পরামর্শও দিয়েছেন এই কর্মকর্তা।
পাউবোর পেজ থেকে এমন পোস্ট হওয়ায় ক্ষুব্ধ জগন্নাথপুরের পাটলী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘এমনিতেই হাওরবাসী আতঙ্কে রয়েছে। পাউবো কর্মকর্তাদের গাফিলতি ও অনিয়মের কারণে আমাদের আতঙ্ক ও ক্ষতি আরও বেড়েছে। এই অবস্থায় কৃষকদের পাশে থাকা ও সচেতন করার বদলে তারা ফেসবুকে আরও আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন।’
এদিকে অব্যাহত ঢলে নদীর পানি বেড়ে সবশেষ রোববার সকালে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের গুরমার হাওরে ও শনিবার রাতে জগন্নাথপুরের হালির হাওরের বাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করেছে। এতে তলিয়ে যাচ্ছে এই দুই হাওরের ফসল।
গ্রামবাসী জানান, রোববার সকাল ৯টার দিকে উজানে পানি বাড়তে থাকায় টাঙ্গুয়ার হাওরের ওয়াচ টাওয়ার সংলগ্ন বর্ধিত গুরমার ২৭ নম্বর প্রকল্পের মাটি দেবে যায় এবং স্থায়ী বাঁধ উপচে পানি ঢুকতে শুরু করে হাওরে।
এ কারণে গুরমা হাওর অংশের খাউজ্যাউরি, নোয়াল, আইন্যা, কলমা ও গলগলিয়া এবং ধর্মপাশা উপজেলার বংশীকুণ্ডা এলাকার হাওরগুলোর ফসলের মাঠেও প্রবেশ করেছে পানি।
গুরমার হাওরের কৃষক মতিন বলেন, ‘এটা নতুন কোনো বাঁধ নয়, এটা হাওরপাড়ে পুরোনো স্থায়ী বাঁধ। ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নদীতে অতিরিক্ত পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাঁধে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয়। আজ সকাল থেকে বাঁধ উপচে হাওরে পানি ঢুকতে শুরু করেছে।’
সমাজকর্মী আহমদ কবীর বলেন, ‘গুরমার হাওরে আপর (স্থায়ী বাঁধ) উপচে পানি ঢুকছে। উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে আমরা সকাল থেকে বাঁশের চাটাই, বস্তা দিয়ে পানি আটকানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি। ১০ দিন ধরে ইউএনওসহ আমরা বাঁধে দিন-রাত পার করছি।’
তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জুনাব আলী বলেন, ‘আমি বর্তমানে শনির হাওরে অবস্থান করছি। পানির চাপে বাঁধগুলো দুর্বল হচ্ছে। এ হাওরের কুমাইরা খাল স্থায়ী বাঁধের (আপর) নিচে ফুলফা দিয়ে পানি ঢুকছে। এ ছাড়া ভগিয়ানীর পশ্চিমের বাঁধের অবস্থাও ভালো না।’
সুনামগঞ্জ পাউবোর আবহাওয়া ও বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র রোববার সকালে বলেছে, ‘আগামী ২৪ ঘণ্টা (সোমবার সকাল পর্যন্ত) ভারতের মেঘালয়, আসাম ও তৎসংলগ্ন এলাকাসহ দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টিপাত হবে।
‘এতে সুরমাসহ এই এলাকার নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।’