আসছে ঈদ-উল-ফিতরে ঘরমুখো মানুষদের বিশেষ সেবা দিতে নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় চলছে বিশেষ কর্মযজ্ঞ। যথাসময়ে ৫০টি নতুন বগি প্রস্তুত করতেই এমন ব্যস্ততা। লক্ষ্যপূরণে বর্তমানে নির্ধারিত কর্মঘণ্টার পরও অতিরিক্ত সময় দিচ্ছেন শ্রমিকরা। বাতিল করা হয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ধরনের ছুটিও।
রোববার কারখানাটির বিভিন্ন অংশ ঘুরে সংশ্লিষ্টদের এমন ব্যস্ততা দেখা গেছে। সকাল সাতটা থেকে শুরু করে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত টানা কাজ চলছে এই কারখানার ২৪টি বিভাগে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কারখানাটিতে শ্রমিকদের কেউ রঙ লাগাচ্ছেন, কেউ বডি প্রস্তুত করছেন, কেউ ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ তৈরি কিংবা চাকা মেরামত করছেন। ওলেল্ডিং, কোচের সিট মেরামতসহ নানা কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তারা। যেন দম ফেলারও সময় নেই। তারপরও যাত্রী পরিবহনে বিশেষ এই সেবা যোগ করার কর্মযজ্ঞে খুশি তারা।
উৎপাদন মেশিন শপের শ্রমিক রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘আধঘণ্টার বিরতি ছাড়া আমরা সকাল সাতটায় কারখানায় প্রবেশ করি আর বের হই বিকেল পাঁচটার পর।’
তিনি জানান, অন্যান্য সময়ে সাধারণত সকাল সাতটা থেকে দুপুর একটা এবং দুপুর দুইটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত কাজ হয় এখানে। ঈদের কারণে বর্তমানে এক ঘণ্টা অতিরিক্ত সময় দিচ্ছেন শ্রমিকরা। তবে এই অতিরিক্ত কর্মঘণ্টার জন্য শ্রমিকদেরকে বাড়তি টাকাও দেবে সরকার।
একই বিভাগের আরেক শ্রমিক ইসকান্দার আলী বলেন, ‘ঈদের কারণে বাড়তি চাপ থাকে আমাদের। কারণ যাত্রী সেবায় অতিরিক্ত কোচ তৈরি করতে হয়। এজন্য অনেক কিছু ভুলে নিবেদিত হয়ে আমরা মানুষদের সেবায় কাজ করি।’
ইসকান্দার জানান, তার বিভাগে ১০০টি মেশিন রয়েছে। প্রত্যেক মেশিনে অন্তত ৩ জন করে শ্রমিক প্রয়োজন। সেই হিসেবে ৩০০ শ্রমিকের প্রয়োজন হলেও রয়েছেন মাত্র ৫০ জন।
হুইল শপের শ্রমিক ইলিয়াস হোসেন জানান, সাধারণ সময়ে তিনি দৈনিক ২ থেকে ৩টি চাকার কাজ করতে পারেন। কিন্তু ঈদের চাপ থাকায় বর্তমানে অতিরিক্ত সময় এবং বাড়তি পরিশ্রম মিলিয়ে প্রতিদিন তিনি ৫টি চাকার কাজ করছেন।
ইলিয়াস বলেন, ‘যাত্রীদের নিরাপদ ভ্রমণের কথা ভেবে এখন আমরা কোনো ছুটি কাটাচ্ছি না।’
কারখানার জিওএইচ শপের ইনচার্জ সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান জানান, আসন্ন ঈদে ৫০টি নতুন কোচ যুক্ত হবে বিভিন্ন আন্তঃনগর ট্রেনে। প্রতি কোচে ১০০ জন করে হলে ৫০টি কোচে প্রতিদিন অতিরিক্ত ৫ হাজার যাত্রীকে বহন করা যাবে।
আরিফুর রহমান বলেন, ‘আমার শপে পরিত্যক্ত একটি কোচ নতুন করে তৈরি করা হচ্ছে। এর বয়স ৩৬ বছর। ৩৫ বছর হলে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। কোচটির বেশিরভাগ অংশই নষ্ট হয়ে গেছে। যা ভালো আছে সেগুলো ঠিক রেখে নতুন করে সেটআপ করে ব্যবহার উপযোগী করছি।’
এদিকে, সংশ্লিষ্ঠরা দাবি করেছেন, প্রয়োজনের মাত্র ২৫ শতাংশ জনবল নিয়ে কাজ হচ্ছে কারখানাটিতে। ৩ হাজার ৮৪১ শ্রমিকের বিপরীতে আছেন মাত্র ১ হাজার ৩৩৭ জন।
উৎপাদন মেশিন শপের ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘জনবল সংকট প্রধান সমস্যা এখানে। প্রয়োজনীয় জনবল থাকলে কারখানাটি আরও উন্নত সেবা দিতে পারবে রেলবিভাগকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঈদের সময় আমরা সবাই বাড়তি কষ্ট নিয়ে কাজ করি। লক্ষ্য বাস্তবায়নে তখন আমরা সেসব আমলে নেই না। যে যার মত মেধা শ্রম দিয়ে কাজ শেষ করার ব্রত নিয়েই দিন কাটাই।’
সৈয়দপুর কারখানার বিভাগীয় তত্বাবধায়ক সাদেকুর রহমান জানান, লক্ষ্যমাত্রার ৫০টি কোচের মধ্যে ইতোমধ্যে ৩০টি কোচ হস্তান্তর করা হয়েছে রেলের পাকশি ও লালমনিরহাট বিভাগে। বাকি ২০টি বগির কাজ তাড়াহুড়ো করেই চলছে।
কারখানার সব কর্মকর্তা ও শ্রমিকদের ছুটি আপাতত বন্ধ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই ৫০টি কোচ রেলের পশ্চিম ও পুর্বাঞ্চলের বিভিন্ন আন্তঃনগর ট্রেনের র্যাকে যুক্ত হয়ে যাত্রী পরিবহণ করবে।