কিশোরগঞ্জ শহরের উকিলপাড়া এলাকার বাসিন্দা নাদিম ভূইয়া মাছ কিনতে গিয়ে খালি হাতে ফিরেছেন পুরানথানা মাছমহাল থেকে। গিয়ে দেখেন সব দোকান বন্ধ, চেনাজানা বিক্রেতাদের কেউ বাজারেও ছিল না।
এই মাছমহাল বন্ধ দেখে নরসুন্দা নদীর অপর পারে আরেক বাজার বড়বাজারে গিয়েও মাছ পাননি নাদিম। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, চার দিন ধরে মাছ বিক্রি বন্ধ রেখেছেন বিক্রেতারা।
ক্ষুব্ধ নাদিম বলেন, ‘ইজারাদার আর মাছ ব্যবসায়ীদের দ্বন্দ্বের কারণে মাছ না কিনেই বাসায় ফিরতে হয়েছে। এই রমজানে এটা তো মেনে নেয়া কঠিন।’
শোলাকিয়া এলাকার বাসিন্দা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘পুরানথানা, বড়বাজার এ দুটি মাছমহালে গিয়ে দেখি শত শত ক্রেতা বাজারে ভিড় করলেও দেখা নেই বিক্রেতার।’
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে শহরের পুরানথানা এলাকায় বিক্ষোভ করে অনির্দিষ্টকালের জন্য মাছ বিক্রি বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় ‘মাছ বাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি’। তাদের অভিযোগ, তারা নির্যাতন, পাশাপাশি ‘ইজারা জুলুমের’ শিকার।
এই কর্মসূচিতে বিপাকে পড়েছেন শহরবাসী। মাছ বিক্রি বন্ধ থাকায় এর প্রভাব পড়েছে সবজি বাজারেও। বিক্রেতারা বলছেন, মাছ বিক্রি বন্ধ থাকায় তাদের বিক্রিও কমে গেছে।
পুরানথানা বাজারের সবজি ব্যবসায়ী অলিউল্লাহ জানান, ‘অনেক সবজি নষ্ট হয়েছে। মাছের বাজার বন্ধ থাকায় নিয়মিত ক্রেতারাও আসছেন না। ফলে এ বাজারের সবজি নিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে গ্রামের বাজারে।’
কেন এই কর্মসূচি
কিশোরগঞ্জ শহর মাছ বাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকছেদ মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত বছর এই মাছমহাল যখন কেউই ইজারা নেয় না, তখন মেয়র সাহেব আমাদের ডেকে নিয়ে মাছমহাল দিয়েছেন। আর এবার সে মাছমহাল ২৫ লাখ টাকায় ইজারা দিয়েছেন।
গত বছর ১০ লাখ টাকায় বাজার ডেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এবার সে বাজার ২৫ লাখ টাকা ইজারা দেয়া হয়েছে। মাছ ব্যবসায়ীদের ওপর জুলুমটা কেমন হবে বুঝতেই তো পারছেন।’
এই মাছ ব্যবসায়ী জানান, আগে মাছের একেকটি ঝুড়ির বিপরীতে ৫ টাকা আদায় করা হলেও এখন দাবি করা হচ্ছে ২০০ টাকা। যারা ইজারা নিয়েছেন তারাও বাড়তি টাকা আদায় করার জন্য সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে বাজারে ঢুকেছেন।
তিনি বলেন, ‘তাই আমরা এ বিষয়টি সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য মাছ বিক্রি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
কিশোরগঞ্জ শহর মাছ বাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি আলম মিয়া নিউজবাংলাকে জানান, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আরজু মিয়া পৌরসভা থেকে বড়বাজার মাছমহালটি ইজারা নিয়েছেন। ইজারা নিয়েই মাছমহালে এসে তিনি এবং তার লোকজন সরকারি খাজনার চার্টের চেয়ে অতিরিক্ত টাকা দাবি করেন। তবে কোনো রসিদ দেয়া হচ্ছে না।
এই মাছ ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘আমরা বিনা রসিদে কোনো টাকা দিতে পারব না। এ বিষয়টি নিয়ে মাছমহালের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আরজু কমিশনারের লোকজনের তর্ক হয়। একপর্যায়ে তারা মাছ ব্যবসায়ীদের ওপর হামলা করেন। এতে সাত-আটজন মাছ ব্যবসায়ী আহত হন।’
তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইজারাদার আরজু মিয়া। তিনি বলেন, ‘ইজারা তুলতে গিয়ে আমার লোকজনের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের তর্কাতর্কি হয়েছে ঠিকই। কিন্তু তাদের ওপর কোনো প্রকার হামলার ঘটনা ঘটেনি।’
তিনি বলেন, ‘এ মহালটি এবার আমি ইজারা নিয়েছি। গত বছর ইজারা নিয়েছিলেন তারাই। তখন তারাও বিনা রসিদে ১৫০-২০০ টাকা আদায় করেছেন। কিন্তু এবার তারা টেন্ডারের মাধ্যমে বাজার না পেয়ে অযথা অভিযোগ তুলছেন।’
কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পারভেজ মিয়া বলেন, ‘শিডিউল অনুযায়ী যে রেটে টাকা তোলার কথা, সে রেটেই টাকা তুলতে হবে। এর বাইরে টাকা তোলার সুযোগ নেই।’
এ বিষয়ে দুই পক্ষকে পৌরসভা কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আজকের মধ্যেই বিষয়টি সেখানেই মীমাংসা হবে বলে আশা করছি।’
জেলা প্রশাসক শামীম আলম জানান, ‘গত শুক্রবার মাছ ব্যবসায়ীরা আমার কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। আমি পৌর মেয়রকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলেছি। নির্ধারিত রেটের বাইরে কেউ টাকা আদায় করলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।’