লালমনিরহাটে পুলিশ হেফাজতে রবিউলের মৃত্যুর বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংদের বিরোধীদলীয় সংসদ উপনেতা জি এম কাদের এমপি।
শনিবার দুপুরে নিহত রবিউল ইসলামের বাড়ি গিয়ে তিনি এই দাবি করেন।
জি এম কাদের বলেন, ‘আমি মর্মাহত এ ধরনের একটি ন্যক্কারজনক ঘটনার জন্য। পুলিশ হেফাজতে একজনের মৃত্যু মেনে নেয়া যায় না। যে পুলিশ জনগণের সেবক কিন্তু সেই পুলিশের হাতে যদি মানুষের মৃত্যু হয়, সেটি মেনে নেয়া যায় না। এটি শুধু এই পরিবারের জন্য নয়, সারা দেশের জন্যই একটা অশুভ সংকেত।’
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে নেয়ার চেষ্টা করেছে দাবি করে কাদের বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। তাহলে সেই অভিযোগটিকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা ও খতিয়ে দেখার প্রয়োজন ছিল। মনে হচ্ছে, তাদের কর্মকাণ্ড ধামাচাপা দেয়ার প্রচেষ্টা হয়েছে। দায়িত্বশীল অফিসার হিসেবে সবারই দায়িত্ব ছিল সত্যিকার ঘটনা উদ্ঘাটন করা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি ওপরের সবার সঙ্গে কথা বলেছি। তদন্ত হবে নিরপেক্ষ। তারা আমাকে নিশ্চিত করেছেন। এতে যদি কেউ দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে তার যথাযথ শাস্তির বিধান নিশ্চিত করতে হবে।’
এ সময় রবিউলের বাচ্চা যতদিন ছোট আছে, ততদিন তাকে ভরণ-পোষণের জন্য মাসে ৫ হাজার করে টাকা দেয়ার অঙ্গীকার করেন কাদের। তা ছাড়া রবিউলের বিধবা স্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলে তার চাকরির ব্যবস্থা করার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানান।
নিরপেক্ষতার স্বার্থে পুলিশ ব্যতীত অন্য কোনো বাহিনী বা সংস্থার মাধ্যমে রবিউলের মৃত্যুর বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা খোঁজখবর ও যোগাযোগ রাখছি যেন তদন্তটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত না হয়।’
এর আগে গত ১৪ এপ্রিল গভীর রাতে লালমনিরহাট সদর থানা পুলিশ জুয়া খেলার অপরাধে ধরে থানায় নিয়ে আসার পথে অসুস্থ হয়ে পড়েন রবিউল। পরে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে ভর্তি করলে কিছুক্ষণের মধ্যেই তার মৃত্যু হয়।
প্রতিবাদে ওই দিন রাতেই স্থানীয় মহেন্দ্রনগর এলাকায় ঢাকা-লালমনিরহাট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। পরে লালমনিরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রবিউল ইসলামের হস্তক্ষেপে অবরোধ তুলে নেয়া হয়।
কিন্তু পুলিশের অভিযুক্ত এসআই হালিমের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত মহেন্দ্রনগর এলাকায় ঢাকা-বুড়িমারী মহসড়ক অবরোধ করে রাখে নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী। সেখানে লালমনিরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আতিকুল ইসলাম সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস দিলে আবারও অবরোধ তুলে নেয়া হয়।
এদিকে রবিউল ইসলাম নিহতের ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো মামলা হয়নি। তবে জুয়া খেলার অপরাধে বৃহস্পতিবার রাতেই প্রহল্লাদ চন্দ্রকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে পুলিশ বাদী হয়ে লালমনিরহাট সদর থানায় একটি মামলা করেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন লালমনিরহাট সদর থানার অফিসার ইনচার্জ শাহ আলম।