কাটছেই না হাওরের দুঃসংবাদ। সুনামগঞ্জে এক দফা ফসলহানীর পর আবারও হাওরের কৃষকদের দুঃসংবাদ দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
আবহাওয়া অফিসের আগাম বন্যার পূর্বাভাস দেয়ার পর দুশ্চিন্তায় পড়েছেন হাওরের কৃষকরা। ফসল বাঁচাতে তাই আধাপাকা ধানই ঘরে তুলতে ব্যস্ত তারা।
বৃহস্পতিবার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা দেশের উত্তরপূর্ব এবং ভারতের আসাম, মেঘালয় ও অরুণাচল প্রদেশে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এতে সিলেট, সুনামগগঞ্জ ও হবিগঞ্জে নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। যে কারণে ৭২ থেকে ৯৬ ঘণ্টার মধ্যে এসব এলাকায় আকস্মিক বন্যা হতে পারে।
বন্যার পূর্বাভাসে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে হবিগঞ্জের কৃষকদের কপালে। ভয়ে আধাপাকা ধান ঘরে তুলতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তারা। তাও কতটুকু ধান ঘরে তুলতে পারবেন তা নিয়েও দুশ্চিন্তার শেষ নেই তাদের।
সরেজমিনে হবিগঞ্জের বানিয়াচং, আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি হাওর ঘুরে দেখা যায়, এখনও অধিকাংশ জমির ফসল পাকেনি। যেগুলো আধাপাকা হয়েছে সেগুলো কাটছেন কৃষকরা।
বানিয়াচং উপজেলার মাকালকান্দি গ্রামের কৃষক অনুকুল দাস বলেন, ‘পরশুদিন (১৪ এপ্রিল) মাইকিং করা হয়েছে কয়েকদিনের মধ্যে বন্যা হবে। যদি বন্যা হয় তাহলে সব ধান পানিতে তলিয়ে যাবে। তাই যেগুলো ধান কিছুটা পেকেছে সেগুলো কাটতেছি।’
একই গ্রামের কৃষক সবিনয় দাস বলেন, ‘কামলা লইয়া জমির দারে (কাছে) আইছি। আইয়া কাঁচা ধান কাটতে মনটায় মানে না। তবুও কাটতেছি- কি করব? না কাটলেতো এগুলো বন্যায় নিয়া যাইব। আর পাঁচটা দিন পরে কাটলেই মোটামুটি পাইক্কা যাইত।’
পাহাড়পুর এলাকার পরিমল দাস বলেন, ‘পরশুদিন উপজেলা থাইক্কা মাইকিং করাইছে তাড়াতাড়ি ধান কাটার লাগি। কয়দিন পরে নাকি বন্যা হইব। নদীর পানিও দেখছি বাড়তাছে। তাই অর্ধেক ধান পাকতেই কাটা লাগতেছে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য খুবই ভয়াবহ। তারা জানিয়েছে- এখন পর্যন্ত জেলার হাওরাঞ্চলের মাত্র ১২ শতাংশ জমির ধান পেকেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক আশেক পারভেজ বলেন, ‘ইতোমধ্যে হাওরাঞ্চলের ১২ শতাংশ জমির ধান পেকেছে। আর কাটা হয়েছে ৫ শতাংশের। তবে আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছি আবহাওয়ার কথা চিন্তা করে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ ধান পাকলেই যেন তারা কেটে ফেলেন।’
জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বলেন, ‘কোনোভাবেই ফসল রক্ষা বাঁধ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে লক্ষ্যে সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে প্রশাসন। সেই সাথে কৃষকরা যেন পরিশ্রমের ফসল ঘরে তুলতে পারেন সে ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে। তবে বন্যার বিষয় বিবেচনা করে যত দ্রুত সম্ভব ধান কাটতে হবে।’
হবিগঞ্জে চলতি বোরো মওসুমে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ২২ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে চাষাবাদ হয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে।