বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সৌদি পাঠানোর কথা বলে ‘ধর্ষণ’, গ্রেপ্তার ৪

  •    
  • ১৬ এপ্রিল, ২০২২ ১৪:২৯

কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে র‍্যাব-৩-এর একটি দল চক্রের সদস্যদের ধরতে গোয়েন্দা নজরদারি ও ছায়া তদন্ত শুরু করে। ১২ এপ্রিল চক্রটি মৌলভীবাজার থেকে একজন নারীকে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে রামপুরা এলাকার বাসায় নিয়ে আসে। ওই বাসায় আটক রেখে নারীকে ধর্ষণ করা হয়।

গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরবে পাঠানোর কথা বলে এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মিডিয়া সেন্টারে শনিবার দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‍্যাব-৩-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

র‌্যাব জানিয়েছে, রাজধানীর রামপুরা ও হাতিরঝিল থেকে গ্রেপ্তার চারজন সংঘবদ্ধ মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের সদস্য। তারা হলেন চক্রের হোতা কামরুল আহমেদ, খালেদ মাসুদ হেলাল, তোফায়েল আহমেদ ও মো. জামাল।

গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ২৭টি পাসপোর্ট, একটি মনিটর, একটি সিপিইউ, একটি মাউস, একটি কী-বোর্ড, একটি ইউপিএস, ভুয়া ভিসার ১০০টি কপি, ১২৫টি ভুয়া টিকেট, চারটি মোবাইল, কোভিড-১৯ নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার দুইটি ফরম এবং একটি প্রিন্টার উদ্ধার করে র‌্যাব।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৩ অধিনায়ক আরিফ মহিউদ্দিন জানান, একজনের অভিযোগের ভিত্তিতে র‍্যাব-৩ জানতে পারে, রামপুরা এলাকায় মানবপাচার ও প্রতারক চক্র মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ওই চক্রের সদস্যরা ভুয়া ভিসা ও টিকেট দিয়ে বিদেশ যেতে ইচ্ছুক বেকারদের কাছ থেকে অর্থ নিচ্ছে।

তিনি জানান, বিদেশ যাওয়ায় ইচ্ছুক ব্যক্তিরা ভুয়া ভিসা ও টিকিট নিয়ে বিমানবন্দরে যাওয়ার পর বিপাকে পড়েন। ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ ভিসা ও টিকিট জাল হওয়ায় বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দিয়েছে অনেককে।

নারীকে উদ্ধার যেভাবে

র‌্যাব কর্মকর্তা মহিউদ্দিন জানান, কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে র‍্যাব-৩-এর একটি দল চক্রের সদস্যদের ধরতে গোয়েন্দা নজরদারি ও ছায়া তদন্ত শুরু করে। ১২ এপ্রিল চক্রটি মৌলভীবাজার থেকে একজন নারীকে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে রামপুরা এলাকার কামরুলের বাসায় নিয়ে আসে। ওই বাসায় আটক রেখে তোফায়েল নারীকে ধর্ষণ করেন।

ওই নারী মোবাইলে সাহায্য চাইলে র‍্যাবের দল ১৩ এপ্রিল রাত আড়াইটার দিকে রামপুরা এলাকায় অভিযান চালায়। সে অভিযানে নারীকে উদ্ধার করা হয়।

কীভাবে দালালের কাছে

জিজ্ঞাসাবাদে ওই নারী র‌্যাবকে জানান, তিনি সাইফুল ইসলাম শান্ত নামের এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেছিলেন। বিয়ের পর সাইফুল যৌতুক বাবদ ধাপে ধাপে ৫ লাখ টাকা নিয়ে তাকে ছেড়ে চলে যায়।

ওই নারী আরও জানান, মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে তার বাবা যৌতুকের টাকা ধারদেনা করে জোগাড় করেছিলেন। পাওনাদাররা টাকার জন্য চাপ দিতে থাকলে তিনি গ্রামের দালাল তোফায়েলের শরণাপন্ন হন।

ওই নারীকে জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তোফায়েল তাকে গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরব পাঠানোর প্রলোভন দেখান। তিনি সৌদিতে যেতে রাজি হন। এরপর সৌদি যেতে হলে আরবি ভাষার ট্রেনিং করতে হবে বলে তাকে ঢাকায় কামরুলের বাসায় এনে আটক রেখে ধর্ষণ করা হয়।

র‌্যাব জানায়, পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নিতে ওই নারীকে রামপুরা থানায় পাঠানো হয়। নারী বাদী হয়ে রামপুরা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।

আসামিদের দেয়া তথ্য

প্রাথমিক অনুসন্ধান ও আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে র‌্যাব জানায়, আসামিদের জনশক্তি রপ্তানির লাইসেন্স নেই, কিন্তু তারা দীর্ঘদিন ধরে জনশক্তি রপ্তানির নামে অবৈধভাবে ভ্রমণ ভিসার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে লোক পাঠাত। এ ছাড়াও চক্রটি মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপে জনশক্তি পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশ যেতে ইচ্ছুক বেকারদের কাছ থেকে পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিত। বিনিময়ে ভুয়া ভিসা ও ভুয়া টিকিট ধরিয়ে দিত ভুক্তভোগীদের হাতে।

জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, ভুক্তভোগীরা ভুয়া ভিসা ও টিকিট নিয়ে বিমানবন্দর থেকে ফিরে এসে চক্রের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চায়, কিন্তু তারা যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এভাবে গত দুই বছরে চক্রের সদস্যরা আটবার বাসার ঠিকানা পরিবর্তন করে।

গত পাঁচ বছরে চক্রটি অবৈধভাবে শতাধিক লোককে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাঠায়। তারা বিদেশ গিয়ে কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

যেভাবে গড়ে ওঠে প্রতারক চক্র

র‍্যাব জানায়, চক্রের হোতা কামরুল নবম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে। তার নির্দিষ্ট পেশা নেই। প্রতারণা ও মানবপাচারই তার কাজ।

২০১৯ সালে কামরুল ভ্রমণ ভিসায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে যান। তারপর সেখানে মানবপাচারের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে দুবাইয়ের রেসিডেন্স ভিসা পান তিনি। সেখানে একটি প্রাইভেটকার কিনে নিজে ড্রাইভিং করে অর্থ উপার্জন করেন।

করোনার প্রাদুর্ভাব হলে প্রাইভেটকারটি বিক্রি করে ২০২১ সালের মে মাসে দেশে ফিরে এসে আবার প্রতারণা ও মানবপাচার শুরু করেন কামরুল। তিনি বিভিন্ন ট্যুরস ও ট্রাভেলসের সঙ্গে যোগাযোগ করে অবৈধভাবে ভ্রমণ ভিসায় বিভিন্ন দেশে লোক পাঠাতেন।

র‍্যাব আরও জানায়, ভুয়া টিকিট সরবরাহ করে পাঁচ শতাধিক মানুষের কাছ থেকে ৩০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রের সদস্যরা। কামরুলের নামে চট্টগ্রাম কোর্টে একটি চেক জালিয়াতির মামলা এবং মৌলভীবাজার কোর্টে ডাচ-বাংলা ব্যাংকে ১৮ লাখ টাকার একটি মামলা রয়েছে। তার বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৩৮ লাখের বেশি টাকা আছে।

এ বিভাগের আরো খবর