বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ডিসেম্বরে কি চালু হবে মেট্রোরেল

  •    
  • ১৫ এপ্রিল, ২০২২ ০৯:৪৬

কর্মকর্তারা বলছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশে মেট্রোরেল চালু করার লক্ষ্য নিয়েই তারা কাজ করছেন। তবে হিসাব বলছে, ট্রেনগুলোর ট্রায়াল ও অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ হতে আগামী বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ডিসেম্বরে এটি চালু নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

আগারগাঁও মোড় থেকে উত্তরে তাকালেই চোখে পড়ে মেট্রোরেলের আগারগাঁও স্টেশনের অবকাঠামো। ওপরের ছাউনি বসানো শেষ। এখন স্টেশনের ভেতরে বিভিন্ন ধাপের কাজ চলেছে। নিচ থেকে কিছু নির্মাণসামগ্রী সরানোয় রাস্তাও কিছুটা চওড়া হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরে উত্তরা থেকে এ স্টেশন পর্যন্ত চলার কথা দেশের প্রথম মেট্রারেলের।

তবে স্টেশনে ওঠানামার সিঁড়ি, চলন্ত সিঁড়ি বা এস্কেলেটর এবং লিফট বসানোর কাজ এখনও শুরু হয়নি। বেশির ভাগ স্টেশনেরই এ অবস্থা।

এ রুটের ৯ শতাংশ কাজ এখনও বাকি। মাত্র মাস দুই আগে দেশে আসা ট্রেনগুলোর নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পাশাপাশি প্রায় ছয় মাসের মানুষবিহীন ট্রায়াল রান বাকি।

স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন পিছিয়ে যাওয়ার পর মেট্রোরেলও পিছিয়ে যাবে কি না সে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ বলছে, ডিসেম্বর ঘিরেই তাদের সব ধরনের কর্মযজ্ঞ চলছে।

মেট্রোরেলের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) বলছে, ২০ কিলোমিটারের মেট্রোরেল বা এমআরটি-৬ রুটের মোট কাজ হয়েছে ৭৭ শতাংশের মতো। আর প্রথম পর্যায়ে চালুর জন্য নির্ধারিত উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার অংশের কাজ ৯১ শতাংশ হয়েছে।

মতিঝিল পর্যন্ত ভায়াডাক্ট বসানোর মধ্য দিয়ে এক সুতায় গাঁথা হয়েছে মেট্রোরেলের পুরো রুট। এর মধ্যে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের বেশির ভাগ কাজ শেষ পর্যায়ে। এ পথের স্টেশন এলাকা ছাড়া রাস্তায় থাকা নির্মাণসামগ্রী সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এতে রাস্তা আগের মতো প্রশস্ত হয়েছে। আগারগাঁওয়ের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে স্বাভাবিক সময়ের মতো চলছে যানবাহন।

আগারগাঁও স্টেশনের নির্মাণকর্মী নজরুল বলেন, ‘স্টেশনের ওপরের কাজ প্রায় শেষ। এখন ঘষামাজার কাজ চলছে। খুব বেশি কাজ বাকি নেই। হেঁটে ওঠা সিঁড়ির কাজ শুরু হচ্ছে। এরপরেই লিফট বসানোর কাজও শুরু হবে। দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য আমাদের তাগাদা দেয়া হয়েছে।’

আগারগাঁও স্টেশেনের কাজ অনেকটা এগিয়ে গেলেও শেওড়াপাড়া স্টেশনের কাজ বেশ কিছুটা বাকি। স্টেশনটির কাজে এখনও ভারি মেশিন ব্যবহার হচ্ছে। স্টেশনের নিচের পুরোটাজুড়ে ইট, পাথর ও সিমেন্টের কাজ চলছে। একই অবস্থা কাজীপাড়া স্টেশনেরও।

শেওড়াপাড়া স্টেশনের দায়িত্বরত সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ফাহাদ আহমেদ বলেন, ‘এ স্টেশনের চলন্ত সিঁড়ির কাজ শুরু হয়েছে। দুই মাসের মধ্যেই এ কাজ শেষ করতে আমাদের তাগিদ দেয়া হয়েছে। তবে তিন মাসও লাগতে পারে। কিন্তু তার বেশি লাগবে না। শিগগিরই লিফটের কাজ শুরু হবে।’

আগারগাঁও পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি

উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার রেলপথে ৯টি স্টেশন নির্মাণ হবে। ২০১৭ সালের আগস্টে শুরু হওয়া দুই প্যাকেজের কাজের অগ্রগতি ৯১ শতাংশ। এরই মধ্যে মাটির নিচে পরিষেবা স্থানান্তর থেকে শুরু করে ভায়াডাক্টের ওপর প্যারাপেট ওয়াল স্থাপন শেষ হয়েছে।

পাশাপাশি সবগুলো স্টেশনের ছাদ, প্ল্যাটফর্মের ছাদ এবং স্টিল অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হয়েছে। তিনটি আইকনিক স্টেশনসহ সব স্টেশনের রুফশিট স্থাপন শেষ। উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ৯টি স্টেশনের বিদ্যুতের কাজ, প্লামবিং, স্থাপত্যকাজ চলমান। এ ছাড়া স্টেশনগুলোয় প্রবেশ ও বহির্গমন অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে। এর মধ্যে উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ ও পল্লবী স্টেশনের প্রবেশ ও বহির্গমন অবকাঠামো নির্মাণ চলছে। এই অংশের বাস্তব অগ্রগতি ৯০ শতাংশ।

মোট ২৪ সেট ট্রেনের মধ্যে ১২ সেট ট্রেন দেশে এসেছে। প্রথম দফায় ৯টি স্টেশনে মেট্রোরেল চালু হবে ১০ সেট ট্রেন দিয়ে। গত ১২ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো পারফরমেন্স টেস্ট হিসেবে আগারগাঁও স্টেশনে আসে এক সেট ট্রেন। গত সেপ্টেম্বরে শুরু হয় এ টেস্ট। ক্রমান্বয়ে সবগুলো ট্রেন আলাদা আলাদাভাবে পরীক্ষা করা হবে।

বিভিন্ন টেস্টের হিসাব

ডিএমটিসিএল বলছে, প্রতি সেট ট্রেনের প্রয়োজনীয় কারিগরি পরীক্ষা, ফাংশনাল টেস্ট, পারফরমেন্স টেস্ট করা হবে। এতে ছয় মাস সময় লাগবে। এরই মধ্যে আগারগাঁও পর্যন্ত তিন সেট ট্রেনের পারফরমেন্স টেস্ট হয়েছে। এরপর তিন মাসের ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট হবে। সব শেষে বাণিজ্যিক চলাচলের আগে কমপক্ষে ৫ মাসের যাত্রীবিহীন ট্রায়াল রান হবে। শিগগিরই সেই ট্রায়াল রান শুরু হওয়ার কথা। ট্রায়াল রান সফল হলেও মাস খানেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চালু হবে মূল বাণিজ্যিক যাত্রা।

এসব হিসাবে নিলে ডিসেম্বরে মেট্রোরেল চালু করা সম্ভব কি না সে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

গত বছরের ২৩ এপ্রিল মেট্রোরেলের প্রথম সেট ট্রেন ঢাকায় আসে। এরই ধারাবাহিকতায় পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম সেট ঢাকায় আসে গত বছরের অক্টোবরে। ডিসেম্বরে অষ্টম সেট ট্রেন এবং জানুয়ারিতে ৯ম ও ১০ম সেট ট্রেন ঢাকায় ডিপোতে এসেছে। সে হিসেবে অষ্টম সেট ট্রেনের পারফরমেন্স টেস্ট করতে সময় লাগবে জুন পর্যন্ত। তারপর তিন মাস ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট করতে সময় গড়াবে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এরপর ৫ মাসের যাত্রীবিহীন ট্রায়াল রান করতে লাগার কথা ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম সেটের ক্ষেত্রে সময় লাগার কথা ডিসেম্বর পর্যন্ত। ৯ম ও ১০ম ট্রেনের লাগার কথা ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত। সে হিসাবে অক্টোবর বা পরে আসা ট্রেন সেটগুলো ডিসেম্বরে চলাচলের ‍সুযোগ একেবারেই কম।

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য ডিএমটিসিএলের এমডি এম এ এন সিদ্দিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। মোবাইলে বারবার কল দিয়ে, এমনকি বার্তা পাঠানো হলেও তিনি উত্তর দেননি।

তবে এর আগে তিনি নিউজবাংলাকে বলেছিলেন, ‘১০ সেট ট্রেন নিয়ে প্রথম ধাপে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল যাত্রী বহন করবে। টেস্ট রান শেষে শিগরির শুরু হবে ট্রায়াল রান। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে সে ট্রায়াল রান শেষ করা যাবে। ট্রায়াল শেষে তিন মাস সার্বিক বিষয় পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। আগামী বিজয় দিবসের আগেই মেট্রোরেল যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে পারবে। শিডিউল মেনেই আমাদের সব কাজ এগিয়ে চলছে।’

মেট্রোরেল প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক আবদুল বাকী মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে মেট্রোরেল চালুর বিষয়ে আমরা শতভাগ আশাবাদী। আমরা সে লক্ষ্য সামনে রেখেই কাজ করছি। প্রয়োজনীয় ট্রেন দেশে এসেছে। অনেকগুলো স্টেশনের কাজও প্রায় শেষ। স্টেশন-১-এর কাজ প্রায় শতভাগ শেষ হয়েছে।’

প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ বাড়তে পারে

২১ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকার প্রকল্পে ১৬ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকা ঋণ দেয়ার কথা জাইকার। ২০২৪ সালের জুনে শেষ হবে প্রকল্পটি। তবে নতুন করে এ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। কমলাপুর পর্যন্ত দীর্ঘ হলে মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য দাঁড়াবে ২১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার। এ বাড়তি কাজ যুক্ত হওয়াসহ অন্যান্য কারণে প্রকল্পের ব্যয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে ব্যয় বাড়বে ১১ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা।

আরও মেট্রো

উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রো রুটে ৪০ মিনিটেরও কম সময়ে ভ্রমণ করতে পারবে রাজধানীর মানুষ। এতে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন সম্ভব হবে।

প্রথম রুট এমআরটি-৬ ছাড়াও আরও পাঁচটি রুটে মেট্রোরেলের কাজ পর্যায়ক্রমে শুরু হচ্ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে মোট ১২৯ কিলোমিটার মেট্রোরেল লাইন স্থাপন করতে চায় সরকার। এর মধে প্রায় ৬১ কিলোমিটার হবে পাতাল রেল।

এ বিভাগের আরো খবর